বন্ধ থাকা শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু হবে

চুনারুঘাট সংবাদদাতা


ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
০৪:০৯ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
০৪:০৯ অপরাহ্ন



বন্ধ থাকা শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু হবে

বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি বলেছেন, ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যেই শেষ হবে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা স্থলবন্দরের আধুনিকায়নের কাজ। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করা হবে। বাল্লা স্থলবন্দর আধুনিকায়নের কাজে কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তিকে বরদাশত করা হবে না। কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করেই ঠিকাদারদের কাজ করতে হবে। 

তিনি গতকাল শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাল্লা-কেদারাকোট সীমান্তের ২৩তম স্থলবন্দরের চলমান উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন শেষে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, চুনারুঘাট থেকে বাল্লা স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত ও উন্নত করার কাজ করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। উন্নয়ন এটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া। সারাদেশেই স্থলবন্দরসহ সকল কর্মযজ্ঞ কাজ চলছে পুরোদমে। সীমান্তের বাল্লা স্থলবন্দরের কাজ সম্পূর্ণ হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে । চলমান উন্নয়ন যজ্ঞ স্থল বন্দরের কাজ এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরেকটি উপহার।

বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাল্লা স্থলবন্দরের চলমান কাজ দ্রুত সমাপ্ত হলে এখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদচারণায় মূখর থাকবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি আমাদের পর্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মানুষজনও ব্যাবসা-বাণিজ্য করবে। এতে গতিশীল হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। আর হবিগঞ্জের উন্নয়নে বাল্লা স্থলবন্দর একটি মাইলফলক হিসাবে কাজ করবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এবং স্থলবন্দরের জন্য রাস্তা করা হবে ১শত ২০ ফুট প্রশস্ত করে, ফোর লেনের।

তিনি বলেন কোন প্রকার মামলা-হামলা দিয়ে বন্দরের চলমান উন্নয়ন কাজকে থামিয়ে দেওয়া যাবে না।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন চুনারুঘাট-বাল্লার ব্রিটিশ আমলের রেল লাইন পূনরায় চালু করা হবে। রেল লাইন চালু হলে স্থল বন্দরের বিভিন্ন মালামাল যাতায়াতের জন্যও ব্যবহিত হবে এতে করে সুফল বয়ে আনবে। রেল লাইন পূনরায় চালুর ব্যাপারে বাংলাদেশ রেল মন্ত্রী ও সচিবালয়সহ রেল বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে তিনি কথা বলবেন এবং এ ব্যাপারে মহান জাতীয় সংসদেও আলোচনা সহকারে তুলে ধরবেন।

মন্ত্রী বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় আনার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনা সরকার উন্নয়নমুখী সরকার। জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তায় চলমান উন্নয়ন প্রবাহ ধরে রেখেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সচেষ্ট। বছরের পর বছর নানা দুর্যোগ মোকাবেলা করেই আজকের উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। সঙ্কটে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া জনগণের দৃঢ় আস্থার অপর নাম শেখ হাসিনা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর (অতিরিক্ত  সচিব), স্থল বন্দর কতৃপক্ষের সদস্য মোস্তফা কামাল মজুমদার (যুগ্ম-সচিব), হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান্যান আলহাজ্ব লুৎফুর রহমান মহালদার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা খাতুন, পৌর মেয়র সাইফুল আলম রুবেল, বাল্লা স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প সচিব আমিনুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার মিল্টন চন্দ্র পাল, চুনারুঘাট থানা অফিসার ইনচার্জ আলী আশরাফ, ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খান, আহম্মদাবাদ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সনজু চৌধুরী, সুবেদার আবু তাহের, বাল্লা আমদানি রপ্তানি কারক কল্যাণ সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দীন খান, ব্যাবসায়ী নেতা সিরাজুল ইসলাম ও জাবেদ খানসহ জনপ্রনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীরা।  সেখানে তিনি ব্যবসায়ী ও সুধীজনসহ স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় করেন।

জানা গেছে, ১৯৫১ সালে চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী বাল্লা নামক স্থানে ৪ দশমিক ৩৭ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাল্লা স্থল শুল্কস্টেশন চালু করা হয়। সেই স্থল শুল্কস্টেশনটি দিয়ে সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। দুই দেশের সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলছে খোয়াই নদী। বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে শ্রমিকরা মাথা ও কাঁধে করে পণ্য আনা-নেয়া করে থাকেন। ফলে, একদিকে ঝুঁকি, অন্যদিকে আমদানি-রফতানিকারকদের অর্থ ব্যয় হয় বেশি। এ সমস্যা দূর করতে ২০১২ সালের ১১ জুন ভারত ও বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রতিনিধি দল কেদারাকোট এলাকাটি পরিদর্শন শেষে উভয়পক্ষই শুল্কস্টেশনের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে কেদারাকোটে স্থলবন্দর করার ব্যাপারে একমত হয়। ২০১৭ সালের ৮ জুলাই স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষর চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বন্দর পরিদর্শনে এসে জানান, একনেক সভায় স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে এবং এটি দেশের ২৩তম স্থলবন্দর। অবকাঠামো তৈরির জন্য অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরপর স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৮সালের জুলাইয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ২১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠায়। প্রস্তাবিত জমিতে বসতবাড়ি থাকায় আপত্তি জানান স্থানীয়রা। এ অবস্থায় থমকে যায় পুরো প্রক্রিয়াটি। তবে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে স্থলবন্দরের জন্য ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণে ভূমি জরিপ সম্পন্ন করা হয়। ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারাকোর্ট নামক স্থানে বাল্লা স্থলবন্দরকে দেশের ২৩তম স্থলবন্দর ঘোষণা করেন তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী মো. শাজাহান খান। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে গত বছরের সেপ্টম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চলমান নির্মাণ কাজের মধ্যে দিয়ে বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে বহুকাঙ্খিত বাল্লা স্থলবন্দরের দৃশ্যমান অবকাঠামো।

এম এস /বি এন-১০