ওসমানীনগরে বিএনপির ‘পকেট কমিটি’ গঠনের অভিযোগ

ওসমানীনগর প্রতিনিধি


মার্চ ০৫, ২০২২
১২:০৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ০৫, ২০২২
১২:৩২ পূর্বাহ্ন



ওসমানীনগরে বিএনপির ‘পকেট কমিটি’ গঠনের অভিযোগ

ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে ‘পকেট কমিটি’ গঠনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরাজ ককরছে চরম ক্ষোভ। অনেকেই এই কমিটি বাতিল করে গোপন ভোটের মাধ্যমে দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। 

জানা যায়, দীর্ঘ ৬ বছর পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় দয়ামীরবাজারে উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি’র চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এমরান আহমদ চৌধুরী। 

কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনের অলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক জরিদ আহমদ। দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার।

দ্বিতীয় অধিবেশনে দয়ামীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসটিএম ফখর উদ্দিনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ঘোষণা করা হয়। সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের নিয়ম থাকলেও নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে ৪০ জন কাউন্সিলরের মৌখিক ভোট গ্রহণ করেন। এতে ভোটাররা সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দ্বারা প্রভাবিত হন বলে অভিযোগ করেছেন পরাজিত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।

নির্বাচনে ৩৩ ভোট পেয়ে সহ সভাপতি নির্বাচিত হন মুজাহিদুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি সৈয়দ এনামুল হক পীর এনাম পান ৭ ভোট। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আব্দুল্লাহ মিছবাহ। তিনি পেয়েছেন ৩৬ ভোট। অপর প্রতিদ্বন্দ্বি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গয়াছ মিয়া পান ৪ ভোট। ২৬ ভোট পেয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন কয়েছ আহমদ চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আব্দুল রুপ আব্দুল পান ১০ ভোট এবং অপর প্রার্থী ছাত্রনেতা সৈয়দ এনায়েত হোসেন পান ৪ ভোট। ৩৫ ভোট পেয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন সাবেক ছাত্রনেতা রায়হান আহমদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ফরহাদ আহমদ পান ৫ ভোট। 

এদিকে বিএনপির কাউন্সিল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্বচ্ছভাবে হয়নি বলে দাবি করেছেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী গয়াছ মিয়া। তিনি বলেন, কোনভাবেই এই ভোটকে স্বচ্ছ বলা যায় না। গোপন ব্যালটে নির্বাচন হবার বিধান থাকলেও মৌখিকভাবে ভোট গ্রহণ করে ইচ্ছে মতো ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। যা বিএনপি‘র আদর্শ ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি।   

সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী সৈয়দ এনামুল হক পীর এনাম বলেন, বিএনপি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে, ভোট তালিকা প্রণয়ণ করে কাউন্সিলের ভোট গ্রহণের বিধান রয়েছে। কিন্তু উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে নেতৃবৃন্দ সারি বেধে প্রকাশ্য টেবিলে বসে ভোটারদের ভোট নেন। এতে ভোট প্রভাবিত করা হয়েছেন বলেই মনে করছি। আমি এই পকেট কমিটি মানি না।

সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ এনায়েত বলেন, কাউন্সিলের অন্তত ৭দিন পূর্বে প্রার্থী ও ভোটারদের ভোট গ্রহণের দিনক্ষণ জানিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। কাউন্সিলের মাত্র ২ দিন আগে (২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী) তাজপুর, গোয়ালাবাজার ও উসমানপুর ইউপিতে পকেট কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটিতে যোগ্যতার বিচার না করে নেতৃবৃন্দ তাদের পছন্দের লোকদের অর্ন্তভূক্ত করিয়েছেন। এরপর রাতারাতি (২৮ ফেব্রুয়ারী) উপজেলা বিএনপি সম্মেলনের আয়োজন করে পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভোট হচ্ছে জাস্ট আইওয়াশ। বিএনপি নেতা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক চৌধুরী আড়ালে থেকে নীল নকশা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। এখানে কোন প্রকার অনিয়ম হয়নি। নেতা-কর্মীদের কেউ যদি মনে করেন নির্বাচনী প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি তবে তিনি কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন।

ইউডি/আরসি-০৮