সিলেটে মুক্তচিন্তার স্বপ্ন দেখাচ্ছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব

মামুন পারভেজ


মার্চ ০৯, ২০২২
০৪:১৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ০৯, ২০২২
০৫:০০ পূর্বাহ্ন



সিলেটে মুক্তচিন্তার স্বপ্ন দেখাচ্ছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব

বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করা একঝাঁক কিশোর-কিশোরী কণ্ঠ ছেড়ে গাইছে, ‘আমরা করব জয়, আমরা করব জয় একদিন। কিংবা কণ্ঠ ছেড়ে আবৃত্তি করছে ‘থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে দেখব এবার জগৎটাকে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে...’। আত্মরক্ষার জন্য তারা শিখছে কারাতে। 

এই দৃশ্য কোনো শহুরে বিদ্যালয়ের নয়। এটি সিলেট সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম রায়েরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্য। সিলেট সদর উপজেলার শেষ সীমানা জালালাবাদ ইউনিয়নের রায়েরগাঁও বিদ্যালয়ের মতো সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১০৫টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় মোট ১০৯টি বিদ্যালয়ে এই সুবিধা পৌছে দিচ্ছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্প।

প্রতিটি ক্লাবে প্রাথমিক ও মাধমিক বিদ্যালয়ের মোট ৩০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছে। যার মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ২০ জন ও ছেলে শিক্ষার্থী ১০ জন। সিলেট জেলায় ১০৯টি বিদ্যালয়ে মোট ৩ হাজার ২৭০ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে জীবন দক্ষতা, গান কবিতা ও আত্মরক্ষার কৌশল মার্শালআর্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। 

সিলেট মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে সিলেটসসহ সারা দেশে কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। সিলেটের ১০৯টি কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সমন্বয়ে কাজ করছেন দুই জন ফিল্ড সুপারভাইজার, প্রতি ৬টি ক্লাবের জন্য একজন করে জেন্ডার প্রোমোটার, প্রতি ক্লাবে একজন সংগীত শিক্ষক, একজন আবৃত্তি শিক্ষক, একজন কারাতে প্রশিক্ষক। প্রতিটি ক্লাবে সপ্তাহে দুইদিন ক্লাস কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিদিন ক্লাস শেষে পরিবেশন করা হয় মানসম্মত স্ন্যাক্স। 

হাটখোলা ও জালালাবাদ ইউনিয়নের জেন্ডার প্রমোটার ঊষা রাণী বলেন, ‘ক্লাবে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সামাজিক বিভিন্ন অনাচার রোধ, আত্মসচেতনতামূলক ও জীবন দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকি। সংগীত শিক্ষকের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ গান শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। আবৃত্তি শিক্ষকের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা শুদ্ধ উচ্চারণ, দেশের ও মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি শেখানো হয়। ক্লাব কার্যক্রমের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন ক্লাব ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও প্রত্যেক ক্লাব সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ওয়ার্ডের মহিলা সদস্যরা।’

হাটখোলা ইউনিয়ন ক্লাবের সদস্য বর্ষণ ধর, সুস্মিতা সূত্রধর ও লাইসা লিসার অভিভাবকরা জানান, সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। শহরতলীর এসব শিক্ষার্থীরা নগরের অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সরকারের এই উদ্যোগে কিশোর-কিশোরীরা গান কবিতা ও আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে পারছে; তা-ও বিনা পয়সায়। এটা সন্তানদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। 

রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ শাহবাজ মিয়া বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সহ পাঠক্রমিক শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। শহরতলীর শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা এবং যোগ্যতা থাকলেও অনেক প্রতিবন্ধকতার কারণে শহরে গিয়ে গান-কবিতা শেখার সুযোগ হয়ে ওঠে না। তাদের দোরগোড়ায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের এই প্রকল্প সুযোগ করে দিয়েছে।   

কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সিলেটের ফিল্ড সুপারভাইজার জয় নারায়ণ জানান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের আওতায় সারা বাংলাদেশে প্রায় ৪৮৮৩টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব চালু রয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রান্তিক কিশোর-কিশোরী জেন্ডারভিত্তিক ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সক্ষম করা, জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা এবং সেক্সুয়াল রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ এন্ড রাইটস (এসআরএইচআর) বিষয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের অবস্থানকে দৃঢ় করা। 

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক শাহিনা আক্তার বলেন, ‘এই ক্লাবের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গ্রহণ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সু সম্পর্ক স্থাপন করার মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো হচ্ছে। কিশোর-কিশোরীরা বর্তমানে বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, মাদক সেবন প্রভৃতি অনাচার প্রতিরোধে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া বাল্যবিয়ে রোধ করতে সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের ক্লাবের মাধ্যমে কিশোর কিশোরীরা অগ্রগতি, মেধা ও মননের বিকাশ ঘটলে দেশের অগ্রগতি হবে। ক্লাবের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নেতৃত্বদান করতে পারবে।’

আরসি-১৮