শুয়াইব হাসান
মার্চ ০৯, ২০২২
০৫:০৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ১০, ২০২২
০১:৪৯ পূর্বাহ্ন
সিলেটের সবক্ষেত্রে নারীর বিচরণ বাড়ছে। রাজনীতি, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি গাড়ির চালকের আসনে তাদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। চ্যালেঞ্জিং হলেও অদম্য ইচ্ছা আর সাহসে এগিয়ে যাচ্ছেন এ অঞ্চলের নারীরা।
দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার তরুণী শেখ ফাহিমা (৩০) ২০১৮ সালে সরকারের স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেইপ) অধীনে বিনামূল্যে ড্রাইভিং শিখেন। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চালক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর যোগ দেন, গাজীপুর বিআরটিসিতে। বর্তমানে তিনি সিলেট বিআরটিসিতে ট্রেনিং ইসট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত।
শেখ ফাহিমার মতো সাহস আর সাফল্যের সঙ্গী হতে চান আরও অনেকে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে ড্রাইভিং শিখছেন। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সিলেটের ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে আলমপুরস্থ বিআরটিসিতে নারীদের বিনামূল্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে একটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে, দ্বিতীয় ব্যাচ শুরু হয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ব্যাচে ৩০ জন তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীরা সনদ ও লাইসেন্সের অপেক্ষায় রয়েছেন। দ্বিতীয় ব্যাচেও ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সুনামগঞ্জের শাল্লার ডলি আক্তার জানান, তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েই একটি প্রাইভেট কার কিনেছেন। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের ও পরিবারের জন্য কিছু করতে চান। ভবিষ্যতে দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা আছে তার।
চলমান ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী তাসলিমা আক্তার আঁখি স্কুল শিক্ষক। তিনি জানান, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতে অনেক সময় যানবাহন পাওয়া যায় না। যথাসময়ে স্কুলে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। নানা দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। তিনি ড্রাইভিং শিখছেন; যাতে নিজে গাড়ি চালিয়ে কর্মক্ষেত্রে যাওয়া এবং পরিবারের কাজেও সহযোগিতা করতে পারেন।
আরেক প্রশিক্ষণার্থী সুবর্ণা হামিদ পেশায় সংবাদকর্মী। তিনি বলেন, ‘নারী হিসেবে নয়; একজন মানুষ হিসেবে প্রতিটি কাজই শিখতে চাই। গৃহস্থালীর কাজ থেকে শুরু করে সব কাজই করতে চাই। প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর অন্য নারীদের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার চিন্তা আছে; যাতে তারা সাবলম্বী হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে ড্রাইভিং পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ কম হলেও বিদেশে এ পেশায় নারী-পুরুষের পার্থক্য নেই। কেউ বিদেশে গেলে ড্রাইভিং জানা থাকলে তা কাজে লাগবে। এ বিষয়টিও অনেকের মাথায় আছে।’
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পলিনা রহমান। রাজনীতিবিদ হিসেবে যার পরিচিতি। তিনিও ড্রাইভিং শিখছেন। কী কারণে শিখছেন জানতে চাইলে পলিনা রহমান বলেন, ‘নিজে নিজে গাড়ি চালিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় যেন সেবা পৌঁছে দিতে পারি এবং অন্যরাও যাতে সাহস পায় সে জন্য শিখছি।’ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিলেটের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিআরটিসি, সিলেটের প্রশিক্ষণ ইনসট্রাক্টর মো. আলমগীর চৌধুরী জানান, যারা প্রশিক্ষণ নিতে আসছে তাদের অনেকেই এ পেশায় যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যারাই ড্রাইভিং শিখছে তারা অনেক সাহসী এবং মেধাবী। কম সময়ে তারা গাড়ি চালানো শিখে নিচ্ছেন।
সিলেটের সড়কগুলোতে এখন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার চালোনায় নারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে ড্রাইভিং শিখছেন। ড্রাইভিং শিখতে আগ্রহীরা প্রতি মাসে সিলেট বিআরসিটিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। অনুপাতে কম হলেও সেখানেও নারীর উপস্থিতি থাকে। তবে দিনদিন এ অনুপাত বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিআরটিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা এনায়েতুল ইসলাম জাবীর। এ ছাড়াও সিলেটে বেসরকারি উদ্যোগে নারীদের জন্য কয়েকটি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়েছে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক শাহিনা আক্তার বলেন, ‘নারীদের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিতে বিআরটিসির সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আগামী দুই বছর পর্যন্ত ৩০ জন করে কয়েকটি ব্যাচে এ প্রশিক্ষণ চলবে। প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সনদ ও লাইসেন্স দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘নারীরা যাতে এ পেশায় যুক্ত হয়ে উপার্জনে সক্ষম হন সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা আশা করি- যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা সিলেটে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবেন।’
আরসি-০১