নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ১২, ২০২২
০১:৪১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ১২, ২০২২
০১:৪১ পূর্বাহ্ন
খোদ লন্ডনের বুকে রেলস্টেশনে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড! ব্রিটেনের গণপরিবহণের ইতিহাসে তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন। পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এক এলাকার মেট্রো রেলস্টেশনের নাম লেখা হয়েছে বাংলায়।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) থেকে ব্যস্ততম হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনটির নাম ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা অক্ষরেও শোভা পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের কোনো স্টেশনে এই প্রথম বাংলায় সাইনবোর্ড টানানো হলো। এতে উৎফুল্ল সেখানে বসবাসরত বাঙালিরা। এটি বাঙালির জন্য বড় অর্জন মনে করছেন তারা।
হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের নামটি বাংলায় লেখার সিদ্ধান্ত নেয় ট্রান্সফোর্ড ফর লন্ডন অথরিটি (টিএফএল)। লন্ডনের ব্যস্ততম এই এলাকার স্টেশনটির নাম বাংলায় লেখার বিষয়টিকে অত্যন্ত গৌরবের বলে মনে করছেন প্রবাসীরা। তাঁরা বলছেন, বহুদিন ধরে বাংলা ও বাঙালির শক্তি ও সামর্থ্যের জানান দেবে।
স্টেশনের একাধিক প্রবেশদ্বারে বাংলায় 'হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশন' লেখার পাশাপাশি স্টেশনের প্রবেশপথে 'হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে আপনাকে স্বাগত'ও শোভা পাচ্ছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের সংস্কারকাজ চলছে। হিথরো বিমানবন্দরের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য 'কুইন এলিজাবেথ' লাইনের সংযোগ থাকছে এই স্টেশনে। সেই সংস্কারকাজ চলার সুযোগে স্টেশনের নামটি বাংলায় লেখার দাবি উঠেছিল। অবশেষে সেই দাবি মানা হল।
যুক্তরাজ্যে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করেন। এরমধ্যে সিলেট অঞ্চলের লোকজনই বেশি। হোয়াইটচ্যাপেলও সিলেটি অধ্যুষিত এলাকা। লন্ডনের ব্যস্ততম এই এলাকার স্টেশনটির নাম বাংলায় লেখার বিষয়টিকে অত্যন্ত গৌরবের বলে মনে করছেন প্রবাসীরা।
স্থানীয় বাঙালিরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে বাংলায় সাইনবোর্ড লাগানো হয়। ‘হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে স্বাগতম, হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশন’ এরকম ৮/৯টি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে স্টেশনে।
ওই এলাকায় বসবাসরত সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকার তারেক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘লন্ডনে প্রচুর বাংলাদেশি রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে এই প্রথম কোনো স্টেশনের নাম বাংলায় লেখা হয়েছে। স্টেশনে গিয়ে বাংলায় সাইনবোর্ড দেখতে পাওয়াটা বাঙালি হিসেবে গর্বের।’
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর লন্ডনের শ্যাডওয়েলের বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে বাংলায় সাইনবোর্ড স্থাপনের দাবি জানিয়ে লন্ডনের মেয়র, টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র, স্থানীয় এমপিসহ লন্ডনের পরিবহন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখেন।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এই চিঠির উত্তর দেয় ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র জেরী হোয়াইট স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলেন, ‘আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীর লেখা চিঠিসহ আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে এই দাবি উত্থাপিত হওয়ায় ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় স্টেশনের নাম লেখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। তারা সব পর্যায়ের কাজ শেষ করে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা স্টেশনের নাম লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এ ছাড়া ব্রিটেনের প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিকী ‘জনমত’-এর পক্ষ থেকেও হোয়াইট চ্যাপল স্টেশনের সাইনবোর্ড বাংলায় লেখায় জন্য ক্যাম্পেইন চালানো হয়।
নিজের দাবি বাস্তবায়িত হওয়ায় খুশি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকে ভারতীয় অধ্যুষিত সাউথহল স্টেশনে হিন্দিতে স্টেশনের নাম লেখা রয়েছে। যা দেখে আমার মনে হয়, কেন বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় স্টেশনের নাম বাংলায় থাকবে না। এই পরই আমি দাবি জানিয়ে চিঠি দেই।’
কাইয়ূম বলেন, ‘এটি ব্রিটেনের প্রথম কোনো স্টেশন যেখানে বাংলায় স্টেশনের নাম হলো। টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন গিবসের আন্তরিকতার কারনেই এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।’
তিনি জানান, বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড বসাতে প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড খরচ হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাইনবোর্ড লাগানো হলেও ১৫ মার্চ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করা হবে। লন্ডনের মেয়র ছাদিক খান, টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস ও ডেপুটি মেয়র আসমা বেগমের বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
ব্রিটেনে বাঙালির দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে উল্লেখ করে সেখানকার বাঙালি সাংবাদিক আ স ম মাসুম বলেন, ‘ব্রিটেনে বাংলা পত্রিকা বের হয় ১০৭ বছর আগে থেকে। ১৯৭৮ সালে আলতাব আলীর হত্যার প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশিরা এখানে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।
আরসি-০৭