শাবির কর্মকর্তা সমিতি নির্বাচন, কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা পদোন্নতিপ্রাপ্তদের হাতেই ভাগ্য

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি


মার্চ ২১, ২০২২
০৬:১২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২১, ২০২২
০৭:০৫ পূর্বাহ্ন



শাবির কর্মকর্তা সমিতি নির্বাচন, কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা পদোন্নতিপ্রাপ্তদের হাতেই ভাগ্য

কর্মক্ষেত্রে পেশাগত অধিকার, আত্মমর্যাদা রক্ষা ও সমন্বিত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টিতে কাজ করে আসছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) কর্মরত কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন’।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে অংশগ্রহণের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের স্বার্থ ও চাহিদা উপস্থাপনের প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে সংগঠনটি। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে জমজমাট ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালাবদল হয় নেতৃত্বের। 

প্রতি বছরের মতো নতুন নেতৃত্ব গঠনে ২০২২ সেশনের নির্বাচনের দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২১ মার্চ। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ পদের বিপরীতে পৃথক দুই প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছেন ২২ কর্মকর্তা। বিগত বছরগুলোতে উঠে আসা চিত্রের ধারাবাহিকতায় এবছরের নির্বাচনেও দপ্তরগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও জয়-পরাজয় নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা সমীকরণ। 

বিগত ৫ বছরের নির্বাচনের ফলাফল থেকে জানা যায়, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২০ এ তিন বছরে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিএনপি-জামায়েতপন্থী প্যানেলের প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। তবে জয়ে পিছিয়ে ছিলেননা আওয়ামীপন্থী প্যানেলের প্রার্থীরাও। এতে ২০১৮ সাল ও সর্বশেষ ২০২১ সালের নির্বাচনে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে জয় পেয়েছে এ প্যানেল। এসব নির্বাচনে মোট ৫৫টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসন পায় বিএনপি-জামায়েতপন্থীরা। অন্যদিকে ৫৫টি আসনের মধ্যে ২৪টি আসন পেয়েছে আওয়ামীপন্থী প্যানেলের প্রার্থীরা। 

বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা যায়, প্যানেল ভিত্তিক পদগুলোতে দুই-এক জন নতুন প্রার্থী থাকলেও ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তিরা বার বার নির্বাচন করে আসছেন, ফলে বারবার নির্বাচিত হচ্ছেন তারা। এছাড়া নির্বাচনে জয়ী হলে অধিকাংশই একই প্যানেলের প্রার্থীরা জয় পাচ্ছেন আবার হারলে তাতেও অধিকাংশই একই প্যানেলের প্রার্থীরাই হারছেন। ফলে এবারও জয় নিয়ে পদ-প্রত্যাশীদের মাঝে আশার পাশাপাশি থাকছে হারার আশঙ্কাও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্বাচন কেন্দ্রীক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তরগুলোতে। অন্যসব নির্বাচনের ন্যায় দপ্তরের ভোটারদের রুমে রুমে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন পদ-প্রত্যাশীরা। আশা-আকাক্সক্ষা আর প্রতিশ্রুতির আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা গুঞ্জন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতবছরের নির্বাচনে প্রতিনিধিত্বকারী অধিকাংশ পদে আওয়ামীপন্থী প্যানেল থেকে বিজয়ী হলেও এবছরের নির্বাচনে ভিন্ন চিত্র তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্যানেল থেকে পদগুলোতে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হলেও এবছর ব্যক্তির পছন্দের প্রার্থী ভোট পাবে এমন গুঞ্জন উঠেছে জনে জনে। তাছাড়া গতবছরে নির্বাচিত পরিষদে নেতৃত্বে থাকা অনেকেই কর্মকর্তাদের সামগ্রিক স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে এমন অভিযোগ অধিকাংশেরই। এরই প্রেক্ষিতে আওয়ামীপন্থী প্যানেল থেকে পদপ্রার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে এক ধরণের শঙ্কা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক সচেতন এমন অনেক কর্মকতা জানিয়েছেন, কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ভোটারদের ভোটের হিসাব-নিকাশে নির্ধারিত হয়ে থাকে নির্বাচনের ফলাফল। কেননা ২৬০ এর অধিক ভোটারের মধ্যে প্রায় ১০০ জন সরাসরি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত, যারা কোন কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু বাকীরা কর্মচারী থেকে পদোন্নতি পেয়ে কর্মকর্তা হয়েছেন।

এ পদোন্নতিপ্রাপ্তদের অধিকাংশই কর্মকর্তা রাজনীতির সাথে তেমনভাবে জড়িত নন। ফলে সরাসরি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের ভোটের হিসাব মেলাতে পারলেও পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ভোটের হিসাব মেলাতে পারছে না কোন প্যানেল বা পদপ্রার্থীরা।

বিগত বছরগুলোর নির্বাচনে দেখা যায় কখনো একচেটিয়া এক প্যানেলের বিজয় কিংবা উভয় প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন প্রাার্থীরা। এমনকি রেকর্ড সংখ্যক ভোটে ‘ব্যক্তি পছন্দের প্রার্থী’ দল-মত নির্বিশেষে বিপুল ভোটে বিজয়ী হতেও দেখা গেছে। এবারের নির্বাচনে ব্যক্তি হিসেবে প্যানেল থেকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাররা ভোট দিবে বলে আশাবাদী উভয় প্যানেলের প্রার্থীরা। 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ কর্মকর্তা পরিষদের খয়রুল-জুয়েল প্যানেল’ ও ‘ইউনুস-পারভেজ প্যানেল’ থেকে ১১ পদে ২২জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। আগামী ২১ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ২৬৪ জন ভোটারের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 

নির্বাচনে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ কর্মকর্তা পরিষদের খয়রুল-জুয়েল প্যানেল’ থেকে সভাপতি পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি ম্যানেজার এ এস এম খয়রুল আক্তার চৌধুরী, সহ-সভাপতি পদে ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান সেবিকা সুলতানা, সাধারণ সম্পাদক পদে মো. রবিউল ইসলাম (জুয়েল), সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে হিসাব কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ পদে সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ মঈনুল হক এবং ৬টি কার্যনির্বাহী সদস্য পদে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মুজিবুর রহমান, উপ-মহাবিদ্যালয় পরিদর্শক মো, তাজিম উদ্দিন, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফখর উদ্দিন, সহকারী প্রকৌশনী জয়নাল আহমদ চৌধুরী, ইংরেজি বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক ও রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম (উজ্জ্বল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

অপরদিকে ‘ইউনুস-পারভেজ প্যানেল’ থেকে সভাপতি পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ রেজিস্ট্রার মো. ইউনুস আলী, সহসভাপতি পদে পরিবহণ দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এমরান আহমদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মখলিছুর রহমান (পারভেজ), সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে রেজিস্ট্রার দপ্তরের সিনিয়র সুপারভাইজার সাহেদ আহমদ, কোষাধ্যক্ষ পদে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার আবু সিনা হাসান মুসান্না জামী এবং ৬টি কার্যনির্বাহী সদস্য পদে তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মো. জয়নাল ইসলাম চৌধুরী, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মুর্শেদ আহমদ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার আহমদ মাহবুব ফেরদৌসী, রসায়ন বিভাগের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার এ কে এম জাকির হোসেন ও রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

আরসি-০২