সিলেটে টিসিবির পণ্য বিক্রিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক


মার্চ ২২, ২০২২
০৫:৩৬ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২২, ২০২২
০৫:৩৬ অপরাহ্ন



সিলেটে টিসিবির পণ্য বিক্রিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা
কড়া রোদে দিনভর অপেক্ষা পণ্য পাননি অনেকে

সিলেটে টিসিবির পণ্য বিক্রির দ্বিতীয় দিনে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ক্রেতাদের। অনেক এলাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে পণ্যই পাননি কার্ডধারীরা। ডিলাররা বলছেন, প্যাকেজিং না হওয়ার এ দিন তারা পণ্য পাননি। তাই পণ্য বিক্রি করা যায়নি। আর জেলা প্রশাসনের বক্তব্য ডিও পাওয়ার আগেই ডিলাররা মানুষকে সময় ও তারিখ জানিয়ে দিয়েছেন। যার কারণে এই ভোগান্তি হয়েছে। 

সোমবার (২২ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আগপাড়াস্থ কাউন্সিলর কার্যালয় সংলগ্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কড়া রোদ ও তীব্র গরমের মধ্যে অনেক মানুষ টিসিবির পণ্য কিনতে অপেক্ষা করছেন। সকাল ১০টায় পণ্য বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মানুষ আসেন সকাল ৮টারও আগে। বেলা ১টা পর্যন্ত ওই স্থানে পণ্য দেওয়া হয়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই ওয়ার্ডে এ দিন টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়নি। 

কিডনি রোগে আক্রান্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব আবেদা বেগম সকাল ৮টায় কাউন্সিলর কার্যালয়ে আসেন টিসিবির পণ্য কিনতে। বেলা একটা বাজলেও সেখানে শুরু হয়নি পণ্য বিক্রি।

আক্ষেপ নিয়ে তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘কার্ড নেওয়ার সময় বলেছিল আজ পণ্য দেবে। তাই সকাল আটটায় এসেছিলাম। এখন শুনি আজকে আর পণ্য দেবে না। অনেকেই দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে চলে গেছে। আমার কিডনির সমস্যা, হাটতে পারি না, তবুও কাল আবার আসতে হবে।’

একই স্থানে রিকশাচালক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘৫ জনের সংসার আমার। বাজারে যে দাম তাতে চাল কিনলে তেল কেনা যায় না। ভাবছিলাম টিসিবির পণ্য কম মূল্যে কিনতে পারব। কিন্ত প্রায় চারঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিসিবির ট্রাকের দেখা পাইনি। এ সময় রিকশা চালাতে পারলে কিছু টাকা আয় করতে পারতাম। এমন দুর্ভোগ হলে তো এভাবে পণ্য কেনা যাবে না।’

শুধু এই এলাকায় নয় গতকাল মঙ্গলবার নগরের আরও দুইটি ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি করেননি ডিলাররা। মঙ্গলবার নগরের ১৫ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা ছিল। তবে ১৭, ১৮ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে এ দিন টিসিবির ডিলাররা নির্ধারিত স্থানে পণ্য নিয়ে যাননি। 

ডিলারদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশনা মতে পণ্যগুলো প্যাকেট করা থাকবে। তবে এ দিন গুদামে গিয়ে তারা দেখতে পান পণ্যগুলো প্যাকেট করা হয়নি। প্যাকেজিং ছাড়া তাদের পক্ষে এত মানুষের কাছে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব নয়। 

এ বিষয়ে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের টিসিবির ডিলার কিবরিয়া এন্টারপ্রাইজের মনোজ কুমার তালুকদার সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রথম দিন তারা ১ থেকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্যাকেটিং করে পণ্য দিয়েছে। আমাদেরও প্যাকেটিং করে পণ্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। যার কারণে সোমবার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা যায়নি।’

১৮ নম্বর ওয়ার্ডের টিসিবির ডিলার সুজন দাস বলেন, ‘পণ্যগুলো আমাদের প্যাকেটিং করে দেওয়ার কথা থাকলে তা দেওয়া হয়নি। যার ফলে ওইদিন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে পণ্য দেওয়া যায়নি। যদি বুধবারও এমন হয় তাহলে তারা প্যাকেট দিলে আমরা নিজেরাই প্যাকেটিং করব।’

এ বিষয়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘ডিলাররা আজকে পণ্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল। তাই অনেক মানুষ তীব্র এই গরমে এসে অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু বেলা একটার দিকে ডিলাররা জানিয়েছেন আজ তারা পণ্য দিতে পারবে না। পরে তারিখ জানিয়ে দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা আমাকে জানায় সংশ্লিষ্ট ডিলার টাকা জমা দেয়নি। তবে ডিলার আমাকে টাকা জমার রশিদ দেখিয়েছে। মূল কারণ হচ্ছে প্যাকেটিং করতে না পারায় এ দিন পণ্য আনতে পারেনি ডিলাররা। এতে করে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা মানুষের দুর্ভোগ হয়েছে।’

এ ছাড়া যেসব এলাকায় পণ্য দেওয়া হয়েছে সেসব এলাকায় সময়মতো যায়নি ট্রাক। অনেক এলাকায় বেলা একটায় ট্রাক গিয়েছে। কোথাও কোথাও গিয়েছে বেলা দুইটার পরও। 

বেলা সাড়ে বারোটায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় তখনও টিসিবির ট্রাক এসে পৌঁছায়নি। সেখানে টিসিবির পণ্যের অপেক্ষায় থাকা ৭১ বছর বয়সী সুখেন্দু বৈদ্য বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষায় আছি। জানি না কখন ট্রাক আসবে। তবে অভাবের কাছে এই অপেক্ষা কিছুই না।’

২৫ নম্বর ওয়ার্ডের টিসিবির ডিলার রুহেল আলম বলেন, ‘প্যাকেটিং করতে দেরি হওয়ায় সময়মতো পণ্য বিক্রি শুরু করতে পারিনি। বেলা দুইটার দিকে ট্রাক নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে পৌঁছে। তারপর বিক্রি শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৫০০ মানুষকে পণ্য দেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনরে সহকারী কমিশনার (ব্যবসা ও বাণিজ্য শাখা) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সবকিছুর তো নির্দিষ্ট সক্ষমতা থাকে। আমাদের এখানে গুদামের সক্ষমতা কম। তাই ধারাবাহিকভাবে আমরা জেলার সব এলাকায় দিচ্ছি। যারা আজ পায়নি তারা পরে পাবে।’

প্যাকেজিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো কিছুর সঙ্কট নেই। আমরা যখন ডিও দিব তখন ডিলাররা ভোক্তাদের পণ্য কবে বিতরণ হবে তা জানিয়ে দেবেন। কিন্তু তারা ডিও পাওয়ার আগেই ভোক্তাদের সময় ও স্থান জানিয়ে দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চালান জমা দিলেই হয় না। চালান জমা দেওয়ার পর আমরা ডিও দেই। সেই ডিও পাওয়ার পর তারা ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করবেন।’

উল্লেখ্য, সিন্ডিকেটদের কবল থেকে ভোক্তাদের রক্ষা করতে ও পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে গত রবিবার থেকে সিলেটে নগর, জেলা ও বিভাগে শুরু হয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি শুরু হয়। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সিলেট জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৩৬৩ পরিবার মাসে দুইবার টিসিবির পণ্য পাবে। ট্রাক থেকে প্রত্যেকে ১১০ টাকা লিটার মূল্যে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা প্রতি কেজি দামে ২ কেজি চিনি ও ৬৫ টাকা প্রতি কেজি দামে ২ কেজি মসুরের ডাল কিনতে পারবেন। 

সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৫ হাজার পরিবার টিসিবির পণ্য পাবেন। তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৯০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল, ৯০ হাজার মেট্রিক টন চিনি ও ৯০ হাজার মেট্রিক টন মসুরের ডাল।

আরসি-০৯