পশ্চিমাদের বিষ তাদেরই ‘গিলতে বাধ্য’ করছেন পুতিন

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ২৫, ২০২২
১২:৩৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৫, ২০২২
১২:৩৮ পূর্বাহ্ন



পশ্চিমাদের বিষ তাদেরই ‘গিলতে বাধ্য’ করছেন পুতিন

অর্থনৈতিক অস্ত্রে পশ্চিমা বিশ্বের শত্রুতাপূর্ণ আচরণের জবাব দিতে শুরু করলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বন্ধুসুলভ নয়, এমন দেশগুলোকে মস্কো থেকে গ্যাস কিনতে হলে, তা রাশিয়ার মুদ্রা রুবলে কিনতে হবে, বুধবার (২৩ মার্চ) এমন হুকুম জারি করেছেন এ রুশ শাসক।

পুতিনের এ ঘোষণায় প্রমাদ গুণছে ইউরোপীয় দেশগুলো। বিশেষ করে কীভাবে পুতিনের চাহিদা অনুযায়ী এত বিপুল পরিমাণ রুবল যোগাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে তারা।

এ দেশগুলোর কাছে রুবলের রিজার্ভ না থাকায় এর সমাধান হিসেবে রাশিয়ার ব্যাংকগুলো থেকেই রুবল কিনতে হবে। অথচ রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অধিকাংশ ব্যাংকের ওপরই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসে আছে তারা। এখন তাদের কাছেই রুবলের জন্য হাত পাতা মানে যেন যার বিষ তাকেই গিলতে বাধ্য করার মতো ব্যাপার।

পুতিনের এ ঘোষণার প্রভাব পড়েছে গ্যাসের দামেও। রাশিয়ার গ্যাস নিয়ে অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে গ্যাসের দাম। ইউরোপের মোট গ্যাস সরবরাহের ৪০ শতাংশ নির্ভর করে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের ওপর।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর মস্কো ও তার মিত্র বেলারুশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্ষরিক অর্থেই বাকি বিশ্ব থেকে একঘরে করে ফেলা হয়। পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোয় থাকা রাশিয়ার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব সম্পদও জব্দ করা হয়। রাশিয়ার অর্থনীতি কঠোর অবরোধে ভেঙে পড়তে শুরু করে। ডলারের বিপরীতে রুবলের দরপতন হতে থাকে।

এ অবস্থায় পশ্চিমা দেশগুলোকে রুবলে গ্যাস কিনতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে তাদের অনেকটা ইটের জবাবে পাটকেল উপহার দিলেন ভ্লাদিমির পুতিন।

বুধবার রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে করা বৈঠকে বিষয়টি প্রতিধ্বনিত হয় পুতিনের কণ্ঠেও।

তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই কয়েকটি পশ্চিমা দেশ একসঙ্গে রাশিয়ার সম্পদ জব্দ শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের মুদ্রার বিশ্বাসযোগ্যতাই নষ্ট করেছে। এ পরিস্থিতিতে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে অবন্ধুসুলভ দেশগুলোকে রাশিয়ার গ্যাস কিনতে হলে তা কিনতে হবে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলে। সেই সঙ্গে তা যথাসম্ভব কম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।

এজন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রম এবং সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের হাতে মাত্র এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেন পুতিন।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়াকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করার জবাবে পাল্টা অবন্ধুসুলভ রাষ্ট্রের তালিকা প্রকাশ করে মস্কো। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো রয়েছে মস্কোর এ তালিকায়।

ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির গ্যাসের জন্য ব্যাপকভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দিযে এখনও রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর অবরোধ আরোপ করেনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে অন্যান্য আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা।

এ পরিস্থিতিতে শত্রুভাবাপন্ন পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি পুতিনের বক্তব্য পরিষ্কার। যদি গ্যাস কিনতে চাও, তবে তা আমাদের মুদ্রায় কিনতে হবে। এতদিন ধরে রাশিয়ার কাছে ডলার, ইউরো ও পাউন্ডে এ গ্যাস কিনত ইউরোপীয় দেশগুলো।

অবশ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করলেও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে করা পূর্বের চুক্তির বরখেলাপ মস্কো করবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে গ্যাস সরবরাহের পূর্বের চুক্তি মেনে চলবে এবং সেই চুক্তির দর অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের বিরুদ্ধে দুর্বল হওয়া রুবলকে শক্তিশালী করতেই এই পদক্ষেপ নিলেন পুতিন। বুধবার পুতিনের ঘোষণার পরপরই কয়েক সপ্তাহ ধরে ধুঁকতে থাকা রুবলের মূল্যমান ফিরে পেতে শুরু করেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মুদ্রাটির দর পড়ে গিয়েছিল ২২ শতাংশ।

তবে রাশিয়া থেকে কেনা গ্যাসের মূল্য পশ্চিমারা রুবলে পরিশোধে বাধ্য হলে পাল্টে যাবে পরিস্থিতি। কারণ ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিদিন ২০ কোটি থেকে ৮০ কোটি ইউরোর সমমূল্যের রাশিয়ার কাছে গ্যাস কিনে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রতিদিন এত বিপুল পরিমাণ রুবল কিনতে হলে ডলার ও ইউরোর বিপরীতে ফের শক্তিশালী হবে রুবল।

এতদিন রাশিয়া থেকে কেনা গ্যাসে দামের ৫৮ শতাংশ হয় ইউরোতে, ৩৯ শতাংশ ডলারে এবং তিন শতাংশ পাউন্ড স্টার্লিংয়ে পরিশোধ করত ইউরোপীয় দেশগুলো। কিন্তু পুতিনের ঘোষণার পর তাদের এখন পুরো লেনদেন সারতে হবে রুবলে।

আরসি-০৩