ইস্তাম্বুলের আলোচনা ফলপ্রসূ, অপেক্ষা এবার পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ৩০, ২০২২
০২:০৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ৩০, ২০২২
০২:০৩ পূর্বাহ্ন



ইস্তাম্বুলের আলোচনা ফলপ্রসূ, অপেক্ষা এবার পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের

তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যকার আলোচনা গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই দুই দেশের প্রেসিডেন্ট পর্যায়েও বৈঠক হবে।

মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহকারী ভ্লাদিমির মেডনিস্কি বেলারুশের রাজধানী মিনস্কের রুশ দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মেডনিস্কি বলেন, ‘ইস্তাম্বুলে গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা একটি শান্তিচুক্তির প্রস্তাব আমাদের দিয়েছে এবং সেখানে যেসব শর্ত তারা দেখতে চায়, সেসবের লিখিত অনুলিপি ইতোমধ্যে আমাদের দেওয়া হয়েছে।’

ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা কী কী শর্ত দিয়েছেন, সে সম্পর্কে খোলাসা করে কিছু বলেননি মেডনিস্কি, তবে রাশিয়া ইউক্রেনের শর্তসমূহ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুতিনের সহকারী বলেন, ‘যেসব শর্ত তারা (ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল) সেসব দ্রুত ক্রেমলিনে পাঠানো হবে এবং (রাশিয়ার) প্রেসিডেন্ট তার মতামত জানানোর পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

‘ইস্তাম্বুলের এই বৈঠকের বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এই বৈঠকের সাফল্যের ওপরই রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের বৈঠকের সম্ভাব্যতা নির্ভর করছে।’

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার ৫ দিন পর—১ মার্চ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দর লুকাশেঙ্কোর আমন্ত্রণে দেশটির সীমান্তবর্তী শহর গোমেলে শান্তি বৈঠক শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে।

তারপর থেকে এ পর্যন্ত গোমেলে কয়েকদফা আলোচনায় বসেছেন উভয় দেশের প্রতিনিধিরা, কিন্তু কোনো কার্যকর ফলাফল আসেনি সেসব বৈঠক থেকে।

এই পরিস্থিতিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের আমন্ত্রণে বেলারুশের গোমেল শহর থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে স্থানান্তর করা হয় দুই দেশের প্রতিনিধিদের শান্তি সংলাপ। মঙ্গলবার বৈঠকে বসেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা।

বৈঠকের আগে প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। ভাষণে ইস্তাম্বুলের বৈঠকে যেন গোমেলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য দুই দেশের প্রতিনিধিদেরই আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান এরদোয়ান।

এদিকে, রাশিয়া অভিযান শুরুর পর থেকেই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছেন জেলেনস্কি।

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে মেডনিস্কি এ সম্পর্কে বলেন, ‘এখানে কয়েকটি ধাপ রয়েছে। যেমন- প্রথমত; দুই দেশের প্রতিনিধিদের একটি চুক্তি প্রস্তুত করতে হবে; তারপর সেই চুক্তির অনুলিপি যাবে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সেই চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হলে দুই দেশের রাষ্ট্রপতি তাতে স্বাক্ষর করবেন। তখন উভয়ের মধ্যে বৈঠকও সম্ভব হবে।’

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে। ২০০৮ সালে ইউক্রেনে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়।

ন্যাটো ইউক্রেনেকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও সম্প্রতি ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বাড়ে তিক্ততা। ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহার করার জন্য ইউক্রেনকে নানাভাবে আহ্বান ও চাপ দিয়েছে রাশিয়া, কিন্তু ইউক্রেন তাতে কর্ণপাত করেনি।

অবশেষে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার দু’দিন পর, ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করতে রুশ সেনাদের নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

মঙ্গলবার ৩৩ তম দিনে পৌঁছেছে রুশ সামরিক বাহিনীর অভিযান, গত ২৬ মার্চ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দেশটির সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফ’স মেইন অপারেশনস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান সের্গেই রুডস্কয় এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে বলেন, ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযানের মূল লক্ষ্য দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে (ডনবাস অঞ্চল) স্বাধীন করা এবং ইতোমধ্যে অভিযানের প্রাথমিক পর্যায় শেষ করেছে রুশ বাহিনী।

আরসি-১৫