হুমায়ুন চত্বর ও শাবি ফটকে বসানো হচ্ছে ফুটওভারব্রিজ

শুয়াইব হাসান


এপ্রিল ০৯, ২০২২
১২:৫৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৯, ২০২২
০৭:৪৭ অপরাহ্ন



হুমায়ুন চত্বর ও শাবি ফটকে বসানো হচ্ছে ফুটওভারব্রিজ
ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান

এবার দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বর ও শাবিপ্রবি ফটকে ফুটওভারব্রিজ (পদচারী সেতু) স্থাপন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। হুমায়ুন চত্বর থেকে কদমতলী বাসস্ট্যান্ডমুখী সড়কের উপর ব্রিজ স্থাপনের কাজ ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। শাবি ফটকে সুনামগঞ্জ সড়কের উপর সেতুটির কাজ এখনও দৃশ্যমান হয়নি। 

পথচারীদের সড়ক পারাপারে দুর্ঘটনা রোধে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিসিক কর্মকর্তারা। এ জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্রিজ দুটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

যদিও কোর্ট পয়েন্ট, টিলাগড় ও শাহপরাণ মাজার গেট পয়েন্টে স্থাপিত তিনটি ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। ব্রিজ স্থাপনের পাশাপাশি ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আইন প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। 

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে সিলেট নগরে পথচারী পারাপারে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিনটি ফুটওভার ব্রিজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টিলাগড়ে এরই মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি হুমায়ুন রশীদ চত্বরে ব্রিজ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চত্বর থেকে পশ্চিমে তিনশ গজ দূরে ব্রিজটি বসানো হচ্ছে। গতকাল হুমায়ুন রশীদ চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, মূল ক্রেন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। উত্তর পাশে সিঁড়ি বসানোর কাজ চলছে। দক্ষিণ প্রান্তে এখনও সিঁড়ি স্থাপন কাজ শুরু হয়নি। চলতি মাসের মধ্যে ব্রিজটি স্থাপনের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সিসিকের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, হুমায়ুন রশীদ চত্বরে ব্রিজ স্থাপনের কাজ পেয়েছে নৌবাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠান; নাম চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড। শাবিপ্রবির ফটকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের উপরে ব্রিজটি স্থাপনের কাজ পেয়েছে নৌবাহিনীর অন্য একটি প্রতিষ্ঠান; ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ। 

টিলাগড়ে সেতুটি স্থাপনে ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। শাবিপ্রবি ও হুমায়ুন রশীদ চত্বরে ব্রিজ স্থাপনে গড়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ব্রিজ দুটি স্থাপন হলেই চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। 

এর আগে, এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালে নগরের কোর্ট পয়েন্টে পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছর পরিত্যক্ত থাকার পর সেতুটি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। কিন্তু, নিলামে দাম উঠে মাত্র ২২ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত এটি বিক্রি হয়নি। 

নগরবাসী বলছেন, কোটি টাকায় নির্মিত সেতুগুলো ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেই। এতে সেতুগুলো আবর্জনায় পরিণত হচ্ছে এবং রাতে অপরাধী ও মাদকসেবীদের আস্তানা হয়ে উঠছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

বøাস্ট সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মো. ইরফানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা। উন্নয়ন কার্যক্রম প্রশংসনীয়। তবে আমরা পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রত্যাশা করি। সেতুগুলো নির্মাণ করে আবর্জনার মতো ফেলে রাখার কোনো অর্থ নেই। সিলেটের মানুষকে এর ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করতে হবে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘পুরোনো সেতুটি কাজে না লাগলেও নতুনগুলো প্রয়োজনের তাগিদেই নির্মিত হচ্ছে। পদচারী সেতু ব্যবহারে মানুষের আগ্রহ ও সচেতনতা কম। মানুষকে সেতু ব্যবহারে সচেতন করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পথচারীদের পাশাপাশি টিলাগড় ও শাবিপ্রবি ফটকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেতু ব্যবহার করবেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।’

বন্দরবাজারে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্তপ্রায় ফুটওভারব্রিজটিও কাজে লাগবে বলে আশাবাদী প্রধান প্রকৌশলী। তিনি বলছেন, ‘এই পয়েন্টে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হন। এ কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। আমরা সড়কে ডিভাইডার করে দিয়েছি। আশা করছি, লোকজন এখন সেতু ব্যবহার করবেন।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রাস্তা পারাপারে ঝুঁকি এড়াতে পদচারী সেতু নির্মাণ করছে সিসিক। আমরা সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছি, পথচারীরা সেগুলো ব্যবহার করলে নিজেরাই উপকৃত হবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। আমরা আশা করছি, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সেটি করবেন।’

বিএ-০১