শ্রীমঙ্গলে মহাসড়ক অবরোধের হুমকি চা শ্রমিকদের

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি


আগস্ট ০৯, ২০২২
১০:১৮ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১১, ২০২২
১২:০৮ পূর্বাহ্ন



শ্রীমঙ্গলে মহাসড়ক অবরোধের হুমকি চা শ্রমিকদের

চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে সিলেট-চট্রগ্রামসহ সারাদেশে একযোগে চা বাগানে কর্মবিরতি পালন করেছেন শ্রমিকরা।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দেশের প্রত্যেকটি চা বাগানে একসঙ্গে জড়ো হয়ে শ্রমিকরা তাদের দাবি তুলে ধরেন। এ সময় তারা দাবি না মনলে মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের হুমকি দেন।

সরেজমিনে  গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা বাগান, খাইছড়া চা বাগান, জেরিন চা বাগান, ফুলছড়া চা বাগানের  শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো সকাল ৯টার ভিতরে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে চা বাগানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে দাঁড়িয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিকরা কর্মবিরতিকালে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

চা বাগানের নারী শ্রমিক উমা হাজরা বলেন, আমরা ১২০ টাকা মজুরি পাই, এদিয়ে আমাদের চলে না। আমরা অনেক কষ্ট করে জীবন কাটাই। খাওয়াদাওয়া ভালো হয় না, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ভালো হয় না। সব কিছুর দাম বাড়ে আমাদের মজুরি বাড়ে না।

ভাড়াউড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মো. নুর মিয়া বলেন, চা শ্রমিকদের একদিনের মজুরি দিয়ে ১ লিটার পেট্রোল ও কেনা সম্ভব না। শ্রমিকরা কি নিদারুন কষ্টে রয়েছেন তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্দ্ধগতিতে ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কিছু হয় না। শ্রমিকরা ভালোমন্দ খেতে পারে না। মজুরি বৃদ্ধি না হলে শ্রমিকরা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, আমরা গত ১৯ মাস ধরে কত আন্দোলন, সংগ্রাম করছি। কিন্তু মালিকপক্ষের টালবাহানা কমছে না। বর্তমান সময়ে বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে আমাদের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। আমরা বারবার বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছি। কিন্তু তারা বারবার নানান টালবাহানা করে মজুরি বৃদ্ধি করছেন না। এতে করে শ্রমিকরা ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে ফেপে উঠছেন। দেশ-বিদেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বিবেচনা করে নুন্যতম মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। 

‌‌‘চা শ্রমিকের হাজিরা ১২০ টাকা থেকে ৩শ টাকায় বৃদ্ধি করার দাবি অনেক দিনের। মালিকপক্ষ ইতিমধ্যে ১৪ টাকা বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বৃদ্ধি হলে একজন শ্রমিকের মজুরী হবে ১৩৪ টাকা। এই ১৩৪ টাকা দিয়ে কীভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে? সারাদিন পরিশ্রম করে এক লিটার পেট্রোলের দামও হবে না।’-যোগ করেন বিজয় হাজরা। 

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী মজুরী বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও মালিকরা চুক্তি ভঙ্গ করছেন। চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিনের। প্রতি বছর মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও গত ৩ বছর ধরে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না।’

আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে দেশের সব বাগান একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং রাজপথে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দিবেন বলে জানান শ্রমিকরা। তাঁদের এই নায্য দাবি মালিক পক্ষ ‘বাংলাদেশ চা সংসদ’ না মানলে কঠোর আন্দোলন ও রাজপথে নামার হুশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক সংসদ অধিবেশনে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছিলেন।

জিকে/বিএ-০২