ফলোআপঃ কাঁঠাল নিলাম নিয়ে তুলকালাম: আরো এক জনের মৃত্যু, আটক ৬

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুলাই ১১, ২০২৩
০২:৪৯ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১১, ২০২৩
০২:৪৯ অপরাহ্ন



ফলোআপঃ কাঁঠাল নিলাম নিয়ে তুলকালাম: আরো এক জনের মৃত্যু, আটক ৬


মসজিদে কাঁঠাল নিলাম নিয়ে বিরোধের জেরে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মুখলেছুর (৬০) নামের আরেক আহত বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তিনি গ্রামের আছিরমামদের ছেলে। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার জনে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান  আব্দুল বাসিত সুজন।

সোমবার নিহত হন হাসনাবাদ গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে নরুল হক (৪৫), আব্দুস সুফির ছেলে বাবুল মিয়া (৫০) এবং আব্দুল বাসিরের ছেলে শাহজাহান মিয়া (৫৫)। 

জানা যায়, গত সোমবার সংঘর্ষের পর স্থানীয় বাজারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পুলিশের ভয়ে আত্মগোপন ছিলেন আহত বৃদ্ধা মুখলেছুর। সোমবার রাতে আত্মীয়ের বাড়িতে মৃত্যু হয় তার। নিহত বৃদ্ধার গ্রামের মালদার পক্ষের লোক বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সকালে মসজিদের কাঁঠাল নিলামের বিরোধের জেরে গ্রামে সরাইমরল ও মালদার গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে এই পর্যন্ত ৪ জন নিহত ও অন্তত ৩০ লোক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। 

ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অভিযান জালিয়ে উভয় পক্ষের ৬ জন আটকে করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।

মখলছুরের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালেদ চৌধুরী। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামের মালদার ও সরাইমরলের গোষ্ঠীর মধ্যে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিনে বিরোধ চলে আসছিল। গত শুক্রবার হাসনাবাদ গ্রামের মসজিদের একটি কাঁঠাল নামাজ চলাকালীন সময়ে ৩০০ টাকা নিলামে বিক্রি করে মালদার গোষ্ঠীর লোকেরা। নামাজ শেষ হলে উল্লেখিত নিলামে কাঁঠাল বিক্রিতে বাধা দেয় সরাইমরল গোষ্ঠীর দ্বীন ইসলামের লোকেরা।

এসময় মালদার গোষ্ঠীর শেখ ফরিদ কাঁঠালে লাথি মারলে বিষয়টি নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই গোত্রের লোকেরা। রোববার সরাইমরল গোষ্ঠীর জাহাঙ্গীর নামের এক যুবককে মালদার গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে গ্রামের রাস্তা চলাচলে বাধা দিলে বিষয়টি নিয়ে ফের বিরোধের জড়িয়ে পড়েন দুই গোষ্ঠীর লোকেরা। রাতভর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করতে থাকেন উভয়পক্ষ।

ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ শালিস ব্যক্তিরা সোমবার সকাল ৯টার দিকে মধ্যস্থতা করতে হাসনাবাদ গ্রামে গেলে উভয় পক্ষের আশ্বাসে বিচার সালিশের পরিবেশ সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে উভয় গোত্রের লোকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় দুই পক্ষের লোকেরা দেশীয় ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে ঘটনাস্থলে সরাইমরল গোষ্ঠীর নুরুল হক ও বাবুল মিয়া নিহত হন।

দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের গুরুতর জখমসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। অপরদিকে মালদার গোষ্ঠীর গুরুতর আহত শাহজাহান মিয়া নামে আরেকজন কৈতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এই ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উভয় পক্ষের নিহতের ঘটনায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে উভয় পক্ষের ৬ জনকে আটক করেছে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ।

সরেজমিনে হাসনাবাদ গ্রামে গেলে জানা যায়, উভয় গোত্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসায় গ্রামের দাঙ্গাবাজ গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত মালদার ও সরাইমরল গোষ্ঠী। ২০০৭ সালের পর থেকে উভয়ে গোষ্ঠীর মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এই দুই গোত্রের মধ্যে। এসব ঘটনায় আদালতে ৭-৮টি মামালা বিচারাধীন রয়েছে। বিগত সময়ে ঈদের জামাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ এসল্ট মামলাও রয়েছে দাঙ্গাবাজ এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে দাঙ্গাবাজ অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকার মানুষজন।

সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত নুরুল হকের চাচা আলী হোসেন বলেন, মসজিদ একটি কাঁঠাল নিলাম নিয়ে বিরোধের উৎপত্তি। গতকাল আমাদের এক ছেলেকে প্রতিপক্ষের লোকের রাস্তায় পথ রোধ করে। এতে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয়। রাতে শুনি মালদার গোষ্ঠীর লোকেরা লাঠিসোটা জড়ো করছে। আমরা বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানাই। সকালে চেয়ারম্যান এসে বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দিলেও তারা মানেনি। সংঘবদ্ধভাবে আমাদের লোকদের উপর হামলা করে। আমারদের দুইজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অনেকেই আহত আছেন।

প্রতিপক্ষ সরাইমরল গোষ্ঠীর লোকদের দাঙ্গাবাজ আখ্যা দিয়ে মালদার গোষ্ঠীর প্রধান মালদার মরল বলেন, মারামারিতে আমাদের অনেক লোক আহত হয়েছে। শাহজাহান মিয়া মারা গেছে। আরও কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জয়কলস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাসিত সুজন বলেন, হাসনাবাদ গ্রামের বিরোধের ঘটনার কথা শোনার পরে সোমবার সকালে গিয়ে পৃথকভাবে দুই গোষ্ঠীর লোকদের নিয়ে বসে শালিসের আহ্বান জানিয়েছি। দুই গোষ্ঠীর লোকেরা মারামারি করবেন না বলে আশ্বাস দিলেও পরিবেশ শান্ত করে উপজেলায় আসার পথে জানতে পারি গ্রামে সংঘর্ষ চলছে। ঘটনাস্থলে আবার গেলেও রক্ষা হয়নি। এমন ঘটনাকে মধ্যযোগীয় বরর্বতা বলে উল্লেখ করেন এই জনপ্রতিনিধি।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রাজন কুমার দাশসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এসময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কঠোর অবস্থার কথা জানান তিনি। সংঘর্ষের সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।

এসই/০১