বরফ গলায় ৩৭ বছর পর মিলল নিখোঁজ পর্বতারোহীর মরদেহ

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুলাই ২৯, ২০২৩
০২:১৮ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৯, ২০২৩
০২:১৮ অপরাহ্ন



বরফ গলায় ৩৭ বছর পর মিলল নিখোঁজ পর্বতারোহীর মরদেহ

সুইজারল্যান্ডে আল্পস পর্বতমালার অন্যতম শীর্ষ শৃঙ্গ ম্যাটারহর্ন পর্বতে ৩৭ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন জার্মান পর্বতারোহী। সম্প্রতি তাঁর মরদেহের খোঁজ মিলেছে। ১৯৮৬ সালে তিনি হিমবাহে আটকা পড়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

চলতি মাসের শুরুর দিকে জারমাট শহরের ওপরে থিওডাল হিমবাহ অতিক্রম করার সময় পর্বতারোহীরা নিখোঁজ ওই জার্মান পর্বতারোহীর মরদেহ দেখতে পান। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আল্পাইন হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ায় ওই পর্বতারোহীর মরদেহ ৩৭ বছর পর বরফ থেকে বেরিয়ে আসে। প্রথমে পর্বতারোহীরা বরফের ভেতর নিখোঁজ ওই ব্যক্তির একটি হাইকিং বুট ও বুটে লাগানোর ক্র্যাম্পন দেখতে পান। পরে পাশেই তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়।

ডিএনএ পরীক্ষায় ওই মরদেহ জার্মান পর্বতারোহীর বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ১৯৮৬ সালে তিনি এই পর্বতে নিখোঁজ হয়েছিলেন। সে সময় ব্যাপক তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চালিয়েও তাঁর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

পুলিশ উদ্ধার ওই মরদেহের নাম–পরিচয় প্রকাশ করেনি। তবে পুলিশ বলেছে, ১৯৮৬ সালে হাইংকি করার সময় তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৮ বছর। আল্পস পর্বতমালার অন্যান্য হিমবাহের মতোই একটি হিমবাহ হলো থিওডাল। গত কয়েক বছরে এটি অনেকটা আয়তন হারিয়েছে। এটি জারমাটের বিখ্যাত স্কি অঞ্চলের একটি অংশ, যা ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কি অঞ্চল।

সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলে শীত মৌসুমে তুষারপাতের হার গ্রীষ্মে গলনের হারের চেয়ে বেশি হলে পাহাড়ের ওপরে তুষার জম জমে শক্ত বরফে পরিণত হয়। এই বরফ–জমা এলাকাটিকে বরফক্ষেত্র বলা হয়। এই জমা বরফ যখন ধীরগতিতে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নামতে শুরু করে, তখন তাকে হিমবাহ বলে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আল্পাইন বরফ ক্ষেত্রগুলো গলে যাচ্ছে। ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত থিওডাল পাশের গর্নার হিমবাহের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এখন গলে দুই হিমবাহ আলাদা হয়ে গেছে।

প্রায় প্রতিবছর গ্রীষ্মে বরফ গলার কারণে কয়েক দশক ধরে হারিয়ে যাওয়া কারও না কারও মরদেহের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর আলেশ হিমবাহে ১৯৬৮ সালে বিধ্বস্ত হওয়া একটি উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পাওয়া যায়।

২০১৪ সালে আল্পসের অন্যতম শীর্ষ শৃঙ্গ ম্যাটারহর্ন পর্বতে ৩৫ বছর আগে নিখোঁজ জোনাথন কনভিলে নামের এক ব্রিটিশ পবর্তারোহীর মরদেহ উদ্ধার হয়। এ সময় ম্যাটারহর্নের চূড়ায় আশ্রয় নেওয়া মানুষের জিনিসপত্র হেলিকপ্টারে সরবরাহ করতে গিয়ে পাইলট প্রথমে বরফের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখেছিলেন। পরে তল্লাশি চালিয়ে জোনাথনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। জোনাথন ১৯৭৯ সালে ওই পর্বতে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

এর এক বছর পর ২০১৫ সালে ম্যাটারহর্ন হিমবাহের প্রান্তে দুই জাপানি পর্বতারোহীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ১৯৭০ সালে তীব্র তুষারঝড়ে তাঁরা সেখানে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

বরফ গলে যাওয়ার কারণে গত বছর সুইজারল্যান্ড ও ইতালির মধ্যবর্তী সীমান্ত পরিবর্তন হয়ে গেছে। ইতালির বিখ্যাত পর্বত রিফুজিও গাইড ডেল সারভিনো স্কি ও হাইকিংয়ের জন্য অনেক জনপ্রিয়। এই পর্বত এখন কৌশলগতভাবে সুইজারল্যান্ডের সীমানায় আছে। এখন কীভাবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে, তা নিয়ে সুইজারল্যান্ড ও ইতালি সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে।

তবে বরফ গলে যাওয়ার কারণে নিখোঁজ পর্বতারোহীদের উদ্ধারের চেয়েও এখন সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব বড় হয়ে উঠছে।

আরসি-০৬