নাটকে নিষিদ্ধ তারকারা

সিলেট মিরর ডেস্ক


আগস্ট ২৩, ২০২৩
১২:১৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৩, ২০২৩
০৭:৩৩ অপরাহ্ন



নাটকে নিষিদ্ধ তারকারা


শুটিং সেটে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমককে নিষিদ্ধ করেছে নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টর’স গিল্ড। তাকে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী তিন মাস তাকে নিয়ে কাজ করবেন না সংগঠনটির সদস্যরা।

এর আগেও ডিরেক্টর’স গিল্ডসহ নাটকের অন্যান্য সংগঠনের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন বেশ কজন জনপ্রিয় তারকা। তাদের বেশিরভাগই নারী শিল্পী। ইতিহাস বলছে, নিষেধাজ্ঞার শিকার হওয়া তারকাদের কেউই আর মূলস্রোতে ফিরতে পারেননি। মজবুত করে ঘুরে দাঁড় করাতে পারেননি ক্যারিয়ার। দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা-


শখ

ধারাবাহিক নাটক ‘এফএনএফ’-এর সময় শিডিউল নিয়ে ঝামেলা করার কারণে ২০১১ সালের দিকে পরিচালক রেদওয়ান রনি শখকে নিয়ে কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপর টানা তিন বছর শখকে নিয়ে কোনো নাটকের শুটিং করেননি রনি। শখ সেই প্রসঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করার দীর্ঘদিন পর তাকে ‘পরিবার করি কল্পনায়’ নাটকে অন্তর্ভুক্ত করেন রনি। সেই নাটকের কাজ করতে গিয়েও শখের দ্বারা শিডিউল ফাঁসানোর শিকার হন রনি। তাই ২০১৪ সালের এপ্রিলে শিডিউল ফাঁসানোর দায়ে দ্বিতীয়বার শখকে নিষিদ্ধ করেন রেদওয়ান রনি। শিডিউল ফাঁসানোর গুরুতর অভিযোগ তুলে পত্রিকা অফিসে মেইল করেছিলেন রনি। সেখানে তখন তিনি উল্লেখ করেন, এনটিভিতে প্রচার চলতি জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘পরিবার করি কল্পনায়’র পূর্বনির্ধারিত শুটিংয়ে তারিখ ছিল ২৬ মার্চ। কিন্তু শখের দেখা নেই, পরিচালকের ফোনও রিসিভ করছেন না তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি একটি বিজ্ঞাপনের শুটিং করছেন অন্য ইউনিটে। ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে সহকারী পরিচালকের মেসেজে শখ কনফার্ম করেছেন ২৬ মার্চ শুটিংয়ের কলটাইম অনুযায়ী সকাল ১০টায় তিনি শুটিং স্পটে আসবেন। কিন্তু আসেননি শখ।


প্রসূন

২০১৬ সালে লাক্স তারকা অভিনেত্রী প্রসূন আজাদকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল টেলিভিশন নাট্যনির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টর’স গিল্ড। নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী সে বছরের ১৯ অক্টোবর প্রসূনের নামে অভিযোগ করেন নাটকের তিন সংগঠনের কাছে। এর পরপরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ডিরেক্টর’স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এসএ হক অলিক জানিয়েছিলেন, পরিচালক রোকেয়া প্রাচীর অভিযোগের ভিত্তিতে ডিরেক্টর’স গিল্ড প্রসূনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিন দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। কিন্তু তিন দিন ২৮ অক্টোবর শেষ হলেও এর মধ্যে কোনো যোগাযোগ করেননি প্রসূন। বরং তার ফেসবুক থেকে খুব আপত্তিকর স্টেটাস আসে, যা এই ইন্ডাস্ট্রির সবার জন্য খুবই লজ্জার। এটা সংগঠনকে অবমাননা, অশ্রদ্ধা ও গুরুত্বহীন ভাবা। এ কারণে আগামী এক বছর ডিরেক্টর’স গিল্ডের কোনো সদস্য তাকে নিয়ে প্রোডাকশন তৈরি করতে পারবে না। 


সারিকা

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মডেল-অভিনেত্রী সারিকা। প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ, মিডিয়া ত্যাগ, ফিরে আসাÑ সব মিলিয়ে তিনি বারবার খবরের শিরোনামে এসেছেন। ২০১৮ সালের ৩ আগস্ট মডেল ও অভিনেত্রী সারিকা সাবরিনকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে টিভি নাটকের সংগঠন ‘টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’। নাটকের শুটিং শিডিউল ফাঁসিয়ে ‘অ-শিল্পী সুলভ আচরণের’ জন্য সংগঠনটির পক্ষ থেকে তাকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

সে বছরের ২৮ জুলাই সংগঠনটি কার্যনির্বাহী সদস্যদের এক সভায় প্রযোজক বোরহান খানের অভিযোগের ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল।

অভিযোগ ছিল, ২১ মার্চ পাঁচটি নাটকের শুটিংয়ে নেপাল যাওয়ার কথা ছিল অভিনেত্রী সারিকার। আর এ জন্য নির্মাতার কাছ থেকে অগ্রিম পারিশ্রমিক বাবদ ৫০ হাজার টাকাও তিনি গ্রহণ করেছেন। সেই সঙ্গে রিটার্ন টিকিট ও নাটকের চিত্রনাট্যও বুঝে নিয়েছিলেন এ অভিনেত্রী। এর আগে ২০ মার্চ সারিকার সঙ্গে নির্মাতাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি সময়মতো বিমানবন্দর পৌঁছাবেন বলে জানান। কিন্তু সঠিক সময়ে বিমানবন্দরে শুটিং ইউনিট পৌঁছালেও সারিকা যাননি। এরপর সারিকাকে ছাড়াই নেপালে চলে যায় শুটিং ইউনিট। তাই পরিকল্পনায় থাকা সারিকাকে নিয়ে নাটকগুলো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রযোজক বোরহান খান আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।


অ্যালেন শুভ্র

পরিচালকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ছোটপর্দার অভিনেতা অ্যালেন শুভ্রকে। ২০১৮ সালে এপ্রিলে ডিরেক্টর’স গিল্ড, অভিনয় শিল্পী সংঘ ও টেলিভিশন প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ছোটপর্দার নির্মাতা নিয়াজ মাহবুবকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। যার কারণে সে বছরের ১০ মে থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত অ্যালেন শুভ্রর সঙ্গে এ তিন সংগঠনের কোনো সদস্য কোনো নির্মাণে অংশ নেননি।


জেবা জান্নাত

চলতি বছরের জুন মাসের ঘটনা। মডেল-অভিনেত্রী জেবা জান্নাতকে অসহযোগিতা ও অসদাচরণের কারণে নিষিদ্ধ করে টেলিভিশন নাটক নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টর’স গিল্ড। নির্মাতা রাশেদা আক্তার লাজুকের অভিযোগের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। তবে জেবা তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, রাশেদা আক্তার লাজুকের স্বামী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন দোদুল তাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাব গ্রহণ না করার কারণেই তার পেছনে লেগেছেন তারা। জেবা এও জানান, এ ঘটনা এক বছর আগের। এতদিন পর বিষয়টি সামনে আনার উদ্দেশ্য বুঝতে পারছেন না তিনি। গণমাধ্যমে জেবার ভাষ্য, ‘বুঝতে পারছি না আমি কেন নিষিদ্ধ হলাম। স্পষ্টভাবে তারা নিষিদ্ধের কোনো কারণ জানায়নি। আমি নতুন এসেছি বলেই তারা আমাকে নিষিদ্ধ করল, আর আমি নিষিদ্ধ হয়ে গেলাম!’

জেবার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নির্মাতা সাজ্জাদ হোসেন দোদুল।


চমক 

সর্বশেষ গতকাল ২১ আগস্ট নিষিদ্ধ হলেন রুকাইয়া জাহান চমক। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে শুটিং সেটে ‘দুর্ব্যবহার’ করার অভিযোগ ওঠে। অভিনেত্রীও ‘যৌন হয়রানির’ অভিযোগ তোলেন সহকর্মী অভিনেতা আরশ খানের বিরুদ্ধে, যা গড়ায় থানা পুলিশ পর্যন্ত। বিষয়টির সমাধান করার জন্য এগিয়ে আসে নাট্য সংগঠনগুলো। এ নিয়ে ১৩ আগস্ট আলোচনার টেবিলে বসে নাটকপাড়ার তিন অভিভাবক সংগঠন টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব), ডিরেক্টর’স গিল্ড ও অভিনয়শিল্পী সংঘ।

সেখানে রায় হয়, জ্যেষ্ঠ অভিনেতা ফখরুল বাসার মাসুম, নির্মাতা আদিফ হাসানসহ ইউনিটের সবার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা অভিনেত্রী চমকের ভুল ছিল এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে অভিনেতা আরশ খানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন তাও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সেজন্য চমককে শাস্তি হিসেবে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে নির্মাতাকে। সেই রায়ে সন্তুষ্ট ছিল না নাট্য নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টর’স গিল্ড। গতকাল ২১ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালকদের সংগঠনটি ঘোষণা দিয়ে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে চমককে; যা কার্যকর হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে।


এএফ/০১