মোসাদকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে হামাস?

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ০৮, ২০২৩
০৪:৫৭ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০৯, ২০২৩
০১:৪০ অপরাহ্ন



মোসাদকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে হামাস?


ফিলিস্তিনের গাজা ভিত্তিক ইসলামিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হারাকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া (হামাস)। মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা হিসাবে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গোষ্ঠীটি। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনি পার্লামেন্টে সংসদীয় নির্বাচনে অধিকাংশ আসন জিতে ২০০৭ সালের জুন থেকে ফিলিস্তিন অঞ্চলের গাজা ভূখণ্ড পরিচালিত করছে।

হামাসের মূল দ্বৈত উদ্দেশ্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালানো। এর ফলে হামাসের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার ইসরায়েল এবং পশ্চিমে তার মিত্রদের দ্বারা কঠোর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞার শিকার।

ইসরায়েলে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত হামলার পর থেকে অবাক সারা বিশ্ব। ইসরায়েলের পাশাপাশি পশ্চিমাদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন এত অস্ত্র কোথা থেকে পেল হামাস।


হামাসের হামলা শনাক্তে ব্যর্থ মোসাদ

নিরাপত্তা ও নজরদারির ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের। আছে চৌকস বাহিনীও। গোয়েন্দাদের পেছনে ইসরাইলের মতো এত বেশি অর্থ অন্য কোনো দেশ ব্যয় করেনা। তারপরও হামাসের হামলার বিষয়ে আগাম আঁচ করতে পারেনি মোসাদ।

এমনকি ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম ভেদ করে মিনিটে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এত আধুনিক প্রযুক্তি ভেদ করে হামলার পর স্বাভাবিকভাবেই সবার মনে প্রশ্ন তবে কি মোসাদকে ছাড়িয়ে গেল হামাস?


হামাসের অস্ত্রের উৎস

হামাসের অস্ত্র বা অর্থ এর প্রধান উৎস ধরা হয় ইরানকে। হামাসকে ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC) দ্বারা অর্থায়ন, সশস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি সে সময় তেহরানে একটি অফিস খুলেছিল গোষ্ঠীটি।

মাঝে ২০১২ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আল-আসাদ সরকারকে সমর্থন করতে অস্বীকার করার পরে ইরান হামাসকে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ২০১৭ সালে আবার হামাসকে আর্থিক সহায়তা শুরু করে ইরান। ২০২০ সালে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে যে ইরান হামাস এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদকে বার্ষিক ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ডলার সহায়তা দিয়েছে।

জানা যায়, হামাস অস্ত্র গোপন করতে এবং ইসরায়েলি বেসামরিকদের অপহরণ করার জন্য গাজা উপত্যকা জুড়ে এবং ইসরায়েল-গাজা সীমান্তের নীচে তার সুড়ঙ্গের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরিতে ইরানী জ্ঞান ব্যবহার করেছে।

এ ছাড়া ইরানের পাশাপাশি সিরিয়া ও অন্যান্য বিদেশী কিছু দেশ হামাসের অস্ত্র ও অর্থায়নের উৎস মনে করা হয়।


রকেট অস্ত্রের আধিপত্য

অস্ত্রের মধ্যে রকেট ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ব্যয়-কার্যকর এবং তুলনামূলকভাবে দূর-দূরান্তের আঘাত হানতে সক্ষম।

ধারণা করা হয় ২০০৫ সালের পর থেকে ইরান এবং সিরিয়ার সাথে একটি গোপন সরবরাহ লাইন স্থাপন করে তার মাধ্যমে রকেট সরবরাহ করা হয় হামাসকে। ইরান ও সিরিয়া তার দৃঢ় মিত্র হিসেবে, অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম গাজায় স্থানান্তর করে থাকে। ধারণা করা হয় এই গোপন সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক বা সরবরাহ লাইন মিশর-গাজা সীমান্তের নীচে বিস্তৃত।

হামাসের অস্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সমুদ্রের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়। ২০০৭ সালে, সমুদ্র পথে সুদানের মধ্য দিয়ে হামাসের জন্য নির্ধারিত ফজর-৫ রকেটের একটি চালান আটক করতে হস্তক্ষেপ করেছিল ইসরায়েল।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়, হামাস ইরান এবং সিরিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ মৈত্রী বজায় রাখলেও, গোষ্ঠীটি বিদেশী উৎস থেকে ফজর-৩, ফজর-৫ এবং এম৩০২ রকেট সহ অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। অর্থাৎ হামাসের অস্ত্রাগার শুধুমাত্র তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের উপর নির্ভরশীল নয়। সোর্সিংয়ের এই বৈচিত্র্য হামাসের যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষমতাকে প্রসারিত করেছে।

মূলত হামাসের অস্ত্র সংগ্রহের পদ্ধতিগুলি বহুমুখী এবং অভিযোজিত। জাহাজ থেকে তীরে চোরাচালান, ইরান ও সিরিয়ার সাথে গোপন টানেল এবং বিদেশী উৎস থেকে কালোবাজারের মাধ্যমে সংগ্রহীত করা হয়।

সূত্র: www.wionews.com , https://www.ajc.org, https://coopwb.in/


এএফ/১২