জন্ম হার সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে, কম ঢাকায়

সিলেট মিরর ডেস্ক


ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪
০১:৪৫ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪
০৮:৩৪ অপরাহ্ন



জন্ম হার সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে, কম ঢাকায়


দেশে এক বছরের ব্যবধানে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বাল্যবিয়ে। ফলে নারীদের সন্তান প্রজনন বা জন্মহার বেড়েছে। অবশ্য জন্মহার বাড়ার ক্ষেত্রে শুধু বাল্যবিয়ে দায়ী নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাল্যবিয়ে বাড়া ছাড়াও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া, পরিবার পরিকল্পনার উদ্যোগের প্রচারের অভাবের কারণে জন্মহার বেড়েছে।

জন্মহার সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম বিভাগে, ২.৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ঢাকায়, ১.৮৯ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস (এসভিআরএস) ২০২২-এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি দেশের নারীদের স্বাভাবিক জন্মহার হওয়া প্রয়োজন ২.১ শতাংশ।

কিন্তু বিবিএসের ওই জরিপ বলছে, বাংলাদেশে এই জন্মহার ২.২০ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রতি হাজার প্রজননক্ষম নারীর বিপরীতে সন্তানের জন্ম হয়েছে ২.২ জনেরও বেশি। অর্থাৎ দেশের নারীরা গড়ে দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন। এই হার ২০২১ সালে আরো কম ছিল, ২.০৫।

পুরো দেশে শুধু ঢাকা বিভাগের নারীদেরই সন্তান জন্মহার দুইয়ের নিচে। অর্থাৎ তাঁরা গড়ে দুজনের কম শিশুর জন্ম দিয়ে থাকেন। অন্য বিভাগগুলোর হিসাবে দেখা গেছে, বরিশালের নারীদের জন্মহার ২.৩৭ শতাংশ, খুলনায় ২.১২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ২.৪৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ২.১৩ শতাংশ, রংপুরে ২.৩৩ শতাংশ, সিলেটে ২.২৭ শতাংশ।

ধর্মভিত্তিক জন্মহারের তথ্যও উঠে এসেছে জরিপে। এতে মুসলিমদের প্রজননহার ২.২৬ শতাংশ, আর হিন্দুদের ১.৭১ শতাংশ।

দেশের অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্মহারও ১.৭১ শতাংশ।


গরিবের জন্মহার বেশি

দেশের ধনী-গরিবের প্রজননহারের তথ্যও উঠে এসেছে জরিপে। গরিব ও অতি গরিব নারীদের প্রজননহার সবচেয়ে বেশি, ২.৩৭ শতাংশ ও ২.৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে ধনীদের প্রজননহার সবচেয়ে কম, ১.৯০ শতাংশ।


বাল্যবিবাহ বেড়েছে

২০২২ সালে একজন নারীর বিয়ের বয়স ছিল গড়ে ১৮.৮ বছর। কিন্তু এর এক বছর আগে এটি আরো বেশি ছিল। ২০২১ সালে নারীদের প্রথম বিয়ের বয়স ছিল গড়ে ১৯.১ বছর। অর্থাৎ দেশের নারীদের বয়স বিবেচনায় আগের চেয়ে কম বয়সে বিয়ে হচ্ছে। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের প্রজননহার বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ বাল্যবিবাহ।

অপ্রাপ্তবয়স্কা বা বাল্যবিবাহের অনুপাত ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে অনেক বেড়েছে। ২০২২ সালে ১৫ বছরের আগে বিয়ে হওয়া নারীদের হার ৬.৫ শতাংশ, ২০২১ সালে এই হার ছিল ৪.৭ শতাংশ। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর আর ছেলেদের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না করে বাল্যবিবাহ দিচ্ছেন অনেক অভিভাবক।

নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে শহরের চেয়ে গ্রামে কম বয়সে বিয়ে হচ্ছে। গ্রামের নারীদের গড় বিয়ের বয়স ১৮.৫ বছর, যেটি ২০২২ সালে ছিল ১৮.৪। অন্যদিকে শহরের নারীদের বিয়ের গড় বয়স ২০.১, যেটি ২০২১ সালে ছিল ২০.৪ বছর।


জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমেছে

জরিপে উঠে এসেছে, দেশের বিবাহিত দম্পতিরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে মোট প্রজননহারও বেড়েছে। ২০২২ সালে দেশের ৬৩.৩ শতাংশ দম্পতি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। অথচ ২০২১ সালে এই হার ছিল ৬৫.৬ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় এটি ব্যবহারের হার কমেছে। বিশেষ করে দুই বছর ধরে দেশের স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম বাড়ছে।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি কমিয়েছেন গ্রামের দম্পতিরা। ২০২২ সালে গ্রামে এটি ব্যবহারের হার ছিল ৬২.৯ শতাংশ, যেখানে ২০২১ সালে গ্রামে এই হার ছিল ৬৫.৭ শতাংশ। অন্যদিকে শহরের দম্পতিরাও এটির ব্যবহার কমিয়েছেন, তবে গ্রামের তুলনায় কম।

দেশে জন্মহার বাড়ার কারণ কী হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালের তুলনায় মোট জন্মহার ২.০৫ থেকে ২.২০ শতাংশে পৌঁছেছে। তার মানে মোট জন্মহার বেড়েছে। পাশাপাশি এটিও লক্ষণীয়, ১৫ বছরের কম এবং ১৮ বছরের কম দুই ক্ষেত্রেই নারীদের বিয়ের প্রবণতা বেড়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আগে বিয়ে হলে নারীরা আগে সন্তান নিয়ে থাকেন।

অধ্যাপক মইনুল বলেন, ‘আরেকটি লক্ষণীয় বিষয়, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার কমেছে। এটির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি কমেছে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা তথা গ্রামীণ এলাকায়। কাজেই বোঝা যাচ্ছে, আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম আরো বাড়াতে হবে। বাল্যবিবাহ, কিশোরী মাতৃত্ব যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।’


বেড়েছে তালাকের হারও

জরিপে দেখা গেছে, দেশে ২০২২ সালে প্রতি হাজারে ১.৪ জন তালাক নিয়েছেন, যেটি ২০২১ সালে ছিল ০.৭ জন বা একজনেরও কম। তালাক দেওয়ার হার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। গ্রামে ২০২২ সালে প্রতি হাজারে ১.৫ জনের বেশি তালাক দিয়েছেন, যেটি আগের বছর ছিল ০.৫ শতাংশ। ২০২২ সালে শহরে প্রতি হাজারে একজন তালাক দিয়েছেন, যেটি ২০২১ সালে ছিল ০.৫ জন।

অন্যদিকে তালাক হয়নি অথচ দাম্পত্য বিচ্ছিন্নের হার বেড়ছে। ২০২২ সালে প্রতি হাজারে ০.২৯ জন দম্পতি বিচ্ছিন্ন হয়েছেন, যেটি ২০২১ সালে ছিল ০.১৩ জন।


এএফ/০৫