নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ০২, ২০২৪
০২:৫৫ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০২, ২০২৪
০৩:১৬ অপরাহ্ন
ভালো কাজ দেওয়ার প্রলোভনে তরুণীকে (১৮) কৌশলে আটকে রেখে ধর্ষণের আলোচিত ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সালামকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেটের গোলাপগঞ্জে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে এলিট ফোর্স।
আজ মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বেল দেড়টায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে অভিযান ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান র্যাব-৯ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. মোমিনুল হক জিডি (পি)।
আবদুস সালাম সিলেট নগরের লালদিঘীরপার এলাকার ৭০ নম্বর বাসার বাসিন্দা গাজী আব্দুর রহিমের ছেলে। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব অধিনায়ক বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৯ সিলেটের একটি অভিযানিক দল সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।’ তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে র্যাবের তৎপরতা ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এ সংক্রান্ত অন্য সংবাদগুলো পড়ুন- সিলেটে তরুণীকে আটকে ধর্ষণের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বহিষ্কারধর্ষণকাণ্ড: সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তার |
মামলায় সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ভুক্তভোগী তরুণী নগরের শেখঘাটের একটি কারখানায় কর্মরত ছিলেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে নগরেই বসবাস করতেন। অভিযুক্ত রেখা বেগম তাঁর প্রতিবেশী। ভুক্তভোগীকে শহরের বাসায় রেখে তার পরিবারের লোকজন গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ সময় ওই তরুণীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সালামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রেখা। ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘সালাম নেতা টাইপের লোক, বিপদে-আপদে উপকারে আসবে।’ ৭ জানুয়ারি রেখার মাধ্যমে তরুণীকে নিজের বাসায় নিয়ে যান সালাম। এরপর টানা ২২ দিন সালাম তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।
এজাহারে বলা হয়, এর মধ্যে ওই তরুণীর মা-বাবা গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসেন। বাসায় মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। এক পর্যায়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার সিদ্ধান্ত নিলে প্রতিবেশী রেখা বেগম তাঁদের সালামের কাছে নিয়ে যান। সালাম তাঁদের জিডি করতে নিষেধ করে নিজেই খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এর দুই দিন পর তরুণীর মা-বাবা আবার সালামের কাছে গেলে তিনি বিকেলের দিকে ফিরিয়ে আনার কথা জানান। ওই দিন বিকেলে তরুণীকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেন সালাম। এ সময় ওই তরুণীর স্বজনদের তিনি জানান, ওই তরুণী এক প্রবাসীর বাসায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই উদ্ধার করেছেন। স্বজনেরা প্রবাসীর নাম জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে তরুণী তাকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনাটি মা-বাবাকে জানালে সালাম তাঁদের হত্যার হুমকি দেন এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।
এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, ঘটনার তিন দিন পর আবার কাজে যাচ্ছিলেন তরুণী। তখন সালাম বিয়ে ও ভালো জায়গায় কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। কথামতো সালামের সঙ্গে আবার দেখা করেন ওই তরুণী। তিনি তরুণীকে কিছু টাকা দিয়ে নগরের কাজীরবাজার এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় পাঠান। সেখান থেকে অভিযুক্ত মনাফ তাঁকে হবিগঞ্জের বাহুবলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। তারপর সেখানে আটকে রেখে সালাম-মনাফসহ একাধিক ব্যক্তি ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। একপর্যায়ে ওই তরুণী কৌশলে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিলেটে পালিয়ে আসেন। স্বজনেরা তাঁকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে তরুণীর মা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।