অনন্ত হত্যা: দুই বছরেও কার্যকর হয়নি রায়

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ১২, ২০২৪
০৫:০৪ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ১২, ২০২৪
০৬:১৬ অপরাহ্ন



অনন্ত হত্যা: দুই বছরেও কার্যকর হয়নি রায়


নয় বছর আগে, ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশকে।

এ হত্যাকাণ্ডের মামলায় ২০২২ সালের ৩০ মার্চ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৪জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন সিলেটের সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু এরপর দুই বছর কেটে গেলেও রায় কার্যকরের অপেক্ষার শেষ হয়নি অনন্ত বিজয়ের পরিবার, স্বজন, বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীরা।

অনন্ত বিজয়ের ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট সমর বিজয় সী বলেন, ‘অনন্তের মা বার্ধ্যক্যজনিত অসুস্থ্যতায় শয্যাশায়ী। এ অবস্থাও তিনি অপেক্ষা করে আছেন অনন্ত হত্যার রায় কার্যকর হতে দেখার জন্য। আমরাও অধীর হয়ে আছি রায় কার্যকরের জন্য।‘

পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজয় দাশ ‘যুক্তি’ নামের একটি বিজ্ঞানমনস্ত ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতেন। তিনি মুক্তমনাসহ বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করতেন।

২০১৫ সালের ১২ মে সকালে বোনকে সাথে নিয়ে অফিসে যাওয়ার সময় সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকার দস্তিদার দিঘীর পাশে তার উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় একদল যুবক। তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।

পরে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে।

সে রাতেই সিলেটের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন অনন্ত বিজয় দাশের ভাই রত্নেশ্বর দাশ। মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে থানা পুলিশের কাছে থাকলেও পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র পরিদর্শক আরমান আলী ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর আদালতে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর পুনরায় তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিলে আদালত তা গ্রহণ করেন।

এ অভিযোগপত্রে অনন্ত বিজয় দাশ হত্যায় অভিযুক্ত করা হয় শফিউর রহমান ফারাবী, মান্নান ইয়াহইয়া ওরফে মান্নান রাহী, আবুল খায়ের রশীদ আহমেদ, আবুল হোসেন ওরফে আবুল হুসাইন, হারুনুর রশীদ এবং ফয়সল আহমেদকে।

মামলার বিচার প্রাথমিক অবস্থায় কয়েক বছর সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে পরিচালিত হলেও পরে সিলেটে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২০২০ সালের শুরুর দিকে মামলাটি এই ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

২০২২ সালের ৩০ মার্চ সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এই হত্যা মামলার রায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনকে খালাস দেন।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, উপজেলার খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ।

এছাড়া বিতর্কিত ব্লগার সাফিউর রহমান ফারাবীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আবুল খায়ের রশীদ আহমদ ছাড়া অপর তিন মৃত্যুদণ্ডাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক। অপর আসামী মান্নান রাহী কাশিমপুর কারাগারে অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মুমিনুর রহমান টিটু বলেন, ‘রায়ের পর ফারাবীর বেকসুর খালাসের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপীল করেছি। আপীলের শুনানী এখনো হয়নি। এছাড়াও বাকি আসামীদের ডেথ রেফারেন্স উচ্চ আদালতে পৌঁছালেও তার শুনানীরও দিন এখনো ধার্য্য করা হয়নি।‘

অনন্ত হত্যার এক বছর পর, তার হত্যার স্থানে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এরপর থেকে প্রতিবছর এ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেই অনন্ত বিজয়কে স্মরণ করেন তার বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

প্রতি বছরের মতো রবিবার সকাল ১১টায় অনন্ত বিজয় দাশ স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।


এএফ/০১