কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি
জুন ০৫, ২০২৪
১১:৫৬ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ০৬, ২০২৪
০৫:২০ অপরাহ্ন
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান অফিসের ডেকোরেশন ভেঙ্গে সকল আসবাপত্র ও মালামাল নিয়ে গেছেন। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে কোম্পানীগঞ্জে। নেটিজেনরা এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুক এ আপলোড করে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে কয়েকজন শ্রমিক হাতুড়ি দিয়ে অফিসের ডেকোরেশন ভাঙ্গছেন। এ সময় অফিসে পূর্ববর্তী চেয়ারম্যানদের নামফলক বিলবোর্ড মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায় ও এসি'র লাইন খুলে ঝুলন্ত অবস্থায় রুমে পরে থাকতে দেখা যায় ও চেয়ারম্যানের রুমে কয়েকটি চেয়ার ছাড়া কোন আসবাপত্র দেখা যায়নি।
খুঁজ নিয়ে জানাযায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান শামীম আহমদ শামীম ৬ হাজার ১৫ ভোটে মো. মজির উদ্দিনের কাছে পরাজিত হয়। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিত অফিস করেন নাই। হঠাৎ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় ৮ জন শ্রমিক নিয়ে তিনি নিজে অফিসে এসে ডেকোরেশন খুলার কাজ শুরু করেন। বিকাল ৩টার দিকে অফিসের চেয়ার, টেবিল, সোফার সেট, কাটের আলমারি, মিরসিব সহ সকল আসবাপত্র ট্রাক করে নিয়ে যান। ট্রাকে করে মালামাল নেওয়ার কয়েকটি ছবি আছে এ প্রতিবেদকের কাছে।
তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজিম উদ্দিন মেম্বার জানান, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে অফিসিয়াল কাজে উপজেলা পরিষদে এসেছিলাম। তখন মানুষের কাছ থেকে শুনাম আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান শামীম আহমদ উনার অফিসের সকল মালামাল ভেঙ্গেচুরে নিয়ে যাচ্ছেন। খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিসে গিয়ে দেখি কয়েক জন শ্রমিক অফিসের ডেকোরেশনের মালামাল ভাংচুর করে খুলে ফেলছে। তাদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা জানান উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ নিজে উপস্থিত থেকে অফিস ভাঙ্গার কাজ শুরু করে আসবাপত্র গুলো ট্রাকে করে নিয়ে গেছেন।
আজিম উদ্দিন আরও বলেন এই অফিসে বসে অনেক শালিস বিচার হয়েছে। এ অফিসটি জাঁকজমতপূর্ণ চমৎকার একটি অফিস ছিল। শামীম চেয়ারম্যান নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে মেনে নিতে পারেন নাই বলেই এই অফিসের বেহাল দশা করেছেন। শামীম চেয়ারম্যানের পিতাও এই উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। এ চেয়ারম্যান পরিবারের লোকজনের কাজ থেকে সাধারণ মানুষ এমন কাজ আশা করে নাই। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ইমাদ জানান উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিস ডেকোরেশনের কাজের সময় আমিও নগদ অর্থ দিয়েছি এবং এরকম অনেকেই চেয়ারম্যানের অফিসে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে টাকা দিয়েছিল। তিনি পরাজিত হয়ে নিজে প্রার্থীকে মেনে নিতে না পেরে যে কাজ করেছেন তা নিন্দনীয়।
পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর আলম জানান, শামীম আহমদ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সুনামের সাথে পাঁচ বছর দায়িত্বপালন করেছেন। বিদায় বেলা তিনি চেয়ারম্যানের সরকারি কার্যালয়ের ডেকোরেশন ভাঙচুর করে ও আসবাপত্র নিয়ে যাওয়াতে মানুষের মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই অফিসের ডেকোরেশন ও আসবাপত্র তিনি নিজের একা অর্থায়নে করেন নাই। ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য সহ উপজেলার ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতায় করেছেন। আমি জানি একটি সরকারি অফিসে ব্যক্তিগত অনুদানে কাজ করলে সেটিও সরকারি মাল হয়ে যায়। তিনি যে কাজ করেছেন তা কোন ভাবেই কাম্য নয় ও অযৌক্তিক। তদন্ত করে এই নিন্দনীয় কাজের কারন উদঘাটন করা উচিত বলে দাবী করেন আলমগীর আলম।
উপজেলা পরিষদের সিএ ফাইজুর রহমান জানান চেয়ারম্যান স্যার সকাল ১১টার কিছু সময় পর কিছু লোক নিয়ে অফিসে এসে ডেকোরেশনের মালমাল খুলার কাজ শুরু করেন। আমার জানা মতে এসি ব্যতীত অফিসের ডেকোরেশনের অন্যান্য মালামাল সরকার অর্থায়নের নয়। মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় ইউএনও স্যার বাঁধা দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি তা শুনেন নাই। অফিসে কি কি মালামাল ছিল ও তিনি কি নিয়ে গেলেন এমন প্রশ্নে সিএ জানান চেয়ার, টেবিল, সোফার সেট, কাটের আলমারি, মিরসিব সহ কিছু আসবাপত্র ছিল। বুধবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসি ও চারটি চেয়ার ব্যতীত অন্য সকল মালামাল অফিস থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ সাহেব অফিসে এসে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন এমন একটি সংবাদ আমি গত মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টায় পেয়েছি। খবর পাওয়ার সাথে সাথে উপজেলা পরিষদের অফিসে এসে চেয়ারম্যান সাহেবকে রিকুয়েষ্ট করে বুঝিয়ে বলেছি ডেকোরেশন না ভাঙ্গতে ও অফিসের মালামাল না নিতে। কিন্তু তিনি আমাদের বাঁধা না শুনে ডেকোরেশন ভেঙ্গে বিকেলে আমাকে না জানিয়ে মালামাল নিয়ে যান। আজ বুধবার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের অফিসটি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশে তালাবদ্ধ করা হয়েছে।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ মজির উদ্দিন বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর গেজেট প্রকাশ হয়েছে এবং ৬ জুন শপথ অনুষ্ঠিত হবে।আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এখন পর্যন্ত যায়নি। চেয়ারম্যান অফিসের সৌন্দর্য বর্জনের ডেকোরেশন ও মালামাল নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইবুক এ দেখেছি তার বাহিরে আমি কিছু জানি না। কিন্তু কি কারণে তিনি এমন কান্ড করেছেন তা তদন্ত করে দেখা উচিত।
অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ জানান, অফিসের ডেকোরেশন ও আসবাপত্র সহ সকল মালামাল আমার ব্যক্তিগত তাই আমি নিয়ে এসেছি। এমন কর্মকান্ড যৌক্তিক কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এত কিছু বুঝার দরকার নেই। আমার মাল আমি নিয়ে আসছি বলে ফোন কেটে দেন।’
এএফ/০৫