সিসিকের উদ্যোগে সাবেক মেয়র কামরানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুন ১৬, ২০২৪
০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১৬, ২০২৪
০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন



সিসিকের উদ্যোগে সাবেক মেয়র কামরানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা


সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন ও একাধিকবারের নির্বাচিত মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

শনিবার (১৫ জুন) রাত আটটায় নগরের একটি কনভেনশন সেন্টারে বৃহৎ পরিসরে এ স্মরণসভা আয়োজন করা হয়। মৃত্যুর চতুর্থ বছরে এসে  সিসিকের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো সাবেক এ মেয়রের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হলো। 

স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। প্রয়াত মেয়রের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, ‘মরে গেলে মানুষ ভুলে যায়-এমনটাই হয়েছে সিসিকের প্রথম মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বেলায়। তার স্মৃতিচারণে আমাদের যত অবহেলা।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সিলেটের ১৯টি আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গণসংবর্ধনা প্রদান করেন তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান। অথচ মারা যাওয়ার ৪ বছর হয়ে গেছে তাকে স্মরণ করার কেউ ছিল না। দীর্ঘদিন পর আজ এই কলঙ্ক মোছন করলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ জন্য তার প্রতি আমাদের সকলের কৃতজ্ঞতা। সিলেট আওয়ামী লীগের জন্য কামরানের অবদান ভুলে যাওয়ার মত নয়। তিনি মরে গিয়েও অমর হয়ে আছেন সিলেটবাসীর কাছে।’

তিনি তার বক্তব্যে বর্তমান মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘সম্মানিকে সম্মান দিলে সম্মান বাড়ে। অগ্রজকে সম্মানে আজকের এই স্মরণ সভা করায় আমরা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কাছে কৃতজ্ঞ। তার মধ্যে আমরা কামরান ভাইকে খোঁজে পাই।’

স্মরণসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

সাবেক মেয়রকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন সদা হাস্যজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন আমাদের মাথার ছাঁয়া। সিলেটের রাজনীতিতে আমাদের মহানায়ক ছিলেন তিনি। তার শূন্যতা কোনদিন পূরণ হবার নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কামরান ভাই ছিলেন দলমত নির্বিশেষে সবার নেতা। তিনি সমগ্র দেশবাসীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। জনতার মেয়র হিসেবে তিনি পরিচিত। সিলেটবাসী চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে তাকে স্মরণ করবে।’


বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রঞ্জিত চন্দ্র সরকার, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, ২০ নম্বর আজাদুর রহমান আজাদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস,  ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফুয়জুল আনোয়ার আলাউর, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এডভোকেট রুহুল আনাম মিন্টু, ওয়ার্স পার্টি নেতা সিকন্দর আলী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নেতা শামসুল বাসিত শেরো, বিশিষ্ট সাংবাদিক আল আজাদ, জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগরের সভাপতি হাবিব আহমদ শিহাব। সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজী মহারাজ।

পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কামরান পত্নী আসমা কামরান ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু। তাদের আবেগঘন বক্তব্যে ভারি হয়ে উঠে সভার পরিবেশ। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।

বক্তরা বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের জীবনী নিয়ে স্মারক গ্রন্থ, ছড়ারপার রাস্তা তার নামে নামকরণ ও নগর ভবন চত্ত্বরকে 'জনতার কামরান চত্ত্বর' বাস্তবায়ন করার জোর বাদি জানান। 

দাবির প্রেক্ষিতে মেয়র আনোয়ারুজ্জাম চৌধুরী বলেন, ঈদের পরেই বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের জীবনী নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশে উদ্যোগ নেওয়া এবং তার নামে রাস্তার নামকরণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। 

সাংস্কৃতিক কর্মী রজত কান্তি গুপ্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলওয়াত করেন শেখ ঘাট জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব খলিলুর রাহমান। পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন সিসিক কর্মকর্তা চন্দন দাস। বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের জীবনী নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। তার সম্মানে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।  

গত ২০২০ সালের ১৫ জুন মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর চার বছর পর এটি প্রথম কোন স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হলো। 


এএফ/০২