সিলেটে গানে গল্পে রবীন্দ্রনাথে মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক স্রোতা

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুলাই ০৬, ২০২৪
১১:৫২ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৬, ২০২৪
১১:৫২ অপরাহ্ন



সিলেটে গানে গল্পে রবীন্দ্রনাথে মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক স্রোতা


মিলনায়তন ভর্তি দর্শক-স্রোতা। সবাই চুপচাপ, নিবিষ্ট। চোখ-কান দুটোই মঞ্চে মনযোগী। মঞ্চ গাইছেন শিল্পী, গানের ফাঁকে ফাঁকে গল্পের ঢঙে রবীন্দ্রনাথের গানের নেপথ্য কাহিনী ভরাট কণ্ঠে শোনানো হচ্ছে। দারুণ যুগল পরিবেশন। গানের আগেই যেনে নেওয়া যাচ্ছে কোন প্রেক্ষাপটে কিভাবে গানটি রচিত হলো-এরপরই শুরু হলো গান। এমন দারুণ পরিবেশনায় মূহূর্তের জন্য মনযোগ সরানোর উপায় নেই দর্শক-শ্রোতার।

সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় হয়ে গেল ‘বহুযুগের ওপার হতে আষাঢ় এল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ঋতু বর্ষায় গল্প-গানের এই মন মাতানো সন্ধ্যার আয়োজক প্রকাশনা সংস্থা চৈতন্য।

এতে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন গানের নেপথ্য কাহিনি শোনান ভারতীয় গবেষক পীতম সেনগুপ্ত। তাঁর গ্রন্থিত গীতি আলেখ্য অনুযায়ী, আলাপের ফাঁকে ফাঁকে গান শোনান তরুণ সংগীতশিল্পী জয়ীতা তিথি।


গীতি আলেখ্যটি শুরু হয় রবীন্দ্র বিশারদ পীতম সেনগুপ্তের কথা দিয়ে। তিনি বলেন, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের কবি সত্তার চেয়ে গায়ক সত্তার পরিচিতি বেশি ছিল। কিন্তু তাঁর সেই গায়ক সত্তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ তেমন জানে না।

বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম। রবীন্দ্রনাথের অন্য সব সৃষ্টি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলেও তাঁর কণ্ঠটি সেভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি। পীতম সেনগুপ্ত বলেন, কবিকণ্ঠে কিছু গান শুনে এখনকার ভক্তরা হতাশ হন। অনেকে মনে করেন, রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠ ছিল মেয়েলি। এই ধারণা সত্যি নয়।

সেই আমলের কয়েকজনের স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, তাঁর কণ্ঠের শক্তি সম্পর্কে। ক্ষিতিমোহন সেন বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে ছিল অসীম শক্তি। প্রমথ চৌধুরী লিখেছেন, কণ্ঠস্বরের এমন ঐশ্বর্য তিনি আর কোথাও শোনেননি। পীতম সেনগুপ্ত বলেন, রবীন্দ্রনাথের নিজেরও বেশ অহং ছিল কণ্ঠ নিয়ে।

আলাপের ফাঁকে শিল্পী জয়ীতা তিথি গেয়ে শোনান রবির ‘শ্রাবণ দিনেরও প্রথম কদম ফুল, আজি ঝরো ঝরো মুখরও বাদল দিনেসহ রবীন্দ্রনাথের নানা গান। 

গানের পর পীতম সেনগুপ্ত আবার আলাপে ফেরেন। এবার শোনান গলার ওপর ‘অতিরিক্ত চাপ দিয়ে’ যুবক রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কাহিনি। ২৩ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ কলকাতার এক জনসভায় আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সভার সভাপতি স্বয়ং সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথ দেড় ঘণ্টা ধরে ইংরেজ শাসক ও ভারতবাসীর ওপর বক্তৃতা দিলেন। উপস্থিত শ্রোতারা তাঁকে গান গাইতে জোর অনুরোধ করলেন। গায়ক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের তখন ভালো পরিচিতি। কিন্তু টানা দেড় ঘণ্টা বক্তৃতার পর তাঁর ক্লান্ত গলা গাইবার খুব উপযুক্ত ছিল না। কিন্তু সভাপতিসহ সবার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত গাইতে হয়। বলা হয়, সেই সভায় রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠ সেই যে জখম হলো তা আর কখনো পুরো ঠিক হয়নি।

শুরুতে সংক্ষিপ্ত স্বাগত বক্তব্য দেন চৈতন্য প্রকাশনের স্বত্ত্বাধিকারী রাজিব চৌধুরী। এমন আয়োজনের নেপথ্য কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চৈতন্য এতদিন সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছে। এখন তার আরো ব্যপ্তি ঘটাতে চায়। সেই চিন্তার একটি প্রয়াস বলা চলে এই আয়োজনকে। আস্তে আস্তে আরো দৃশ্যমান হবে সে প্রচেষ্টা।’



এএফ/০৫