দেশের এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুলাই ২৮, ২০২৪
০৩:০৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৮, ২০২৪
০৩:০৬ পূর্বাহ্ন



দেশের এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত


দেশের এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৮৫ লাখ হেপাটাইটিস বি ও ১৫ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। এই সংখ্যা আগের ১০ বছরের তুলনায় কম। তবে জাতীয় পর্যায়ে ২০১৮ সালের পর কোনো জরিপ না হওয়ার এর কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

হেপাটোলজি সোসাইটি বাংলাদেশের তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে হেপাটাইটিস আক্রান্তের হারে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর কারণ ৯০ শতাংশ মানুষ তাদের রোগ সম্পর্কে জানেন না। এতে আক্রান্তদের রোগের মাত্রা বেড়ে অন্যদের মাঝে ছড়াচ্ছে। আবার যারা রোগটি সম্পর্কে অবগত তারা কুসংস্কার ও বঞ্চনার কারণে রোগটি গোপন করছে।

এ ছাড়া যথেষ্ট পরিসংখ্যান না থাকা, জাতীয় পর্যায়ে রোগ নির্মূলের পরিকল্পনা করা হলেও কোনো গাইডলাইন না থাকা, লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া এবং বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া হলেও চিকিৎসাক্ষেত্রে সরকারের বরাদ্দ কম থাকায় আক্রান্তের হারে পরিবর্তন আসছে না।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ রবিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার’। প্রতিবছর ২৮ জুলাই সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে দিবসটি পালন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও হেপাটোলজি সোসাইটি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহিনুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা অনুযায়ী বর্তমানে ৫.১ শতাংশ মানুষের মধ্যে হেপাটাইটিস বি রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৫৭ লাখ এবং নারী ২৮ লাখ। এই সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম। অর্থাত্ হেপাটাইটিসের ট্রেন্ড কমার দিকে। 

১৯৮৩ সালে দেশব্যাপী ১০ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ছিল, বর্তমানে যা অনেক কমে এসেছে।

এর কারণ আমাদের ইপিআই কর্মসূচি। এর আওতায় সারা দেশে শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ৯৫ শতাংশ শিশুকে এর আওতায় নিয়ে এসেছি। কিন্তু এটি ৪ থেকে ৬ শতাংশে আটকে আছে। এর থেকে কমানো সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৪ সাল থেকে আমরা এই অবস্থায় আটকে আছি।’

ডা. শাহিনুল আলম বলেন, ‘আক্রান্তের হার আগে যে হারে কমেছে, বর্তমানে তা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের কিছু সংকট রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স আমাদের প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে কিছু কথা তুলে ধরেছে। ডিসেম্বর ২০২২-এ প্রকাশিত কোয়ালিশন ফর গ্লোবাল হেপাটাইটিস এলিমিনেশনের মতে প্রতিবন্ধকতাগুলো হলো—পর্যাপ্ত পরিসংখ্যান না থাকা, নির্মূলের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও জাতীয়ভাবে বি ও সি ভাইরাস কিভাবে দূর করা যায় সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ না করা, জাতীয় কোনো গাইডলাইন না থাকা।’ 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান বলেন, গ্রামের অনেক মানুষ এখনো জন্ডিস হলে ঝাড়ফুঁক করায়। এতে সঠিক চিকিত্সা পেতে তাদের অনেক দেরি হয়ে যায়। এ সময়ে রোগটি আরো গভীরে চলে যায়। এটি সমাধানে মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা ও লিভার প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এ চিকিত্সায় ওষুধের সহজলভ্যতা বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, একসময় সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু হতো বেশি। এ ছাড়া এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুলও ছিল। বেসরকারি পর্যায়ে রোগীদের এটির চিকিত্সা করাতে প্রায় ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হতো। সরকার যখন এর জেনেরিক প্রডাক্টে ট্যাক্স তুলে দেয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয় কমে আসে। বর্তমানে এ চিকিৎসায় ব্যয় হয় ৮০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার মতো। পাঁচ-ছয় বছর ধরে রোগীরা এ সুবিধা পাচ্ছে।

ডা. সেলিমুর রহমান বলেন, দেশে লিভারের সব ধরনের চিকিৎসাই পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে লিভার প্রতিস্থাপন ব্যবস্থায় সংকট রয়েছে।


এএফ/০২