বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
আগস্ট ২৪, ২০২৪
০১:৪৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ২৪, ২০২৪
০৮:৫০ অপরাহ্ন
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন বিকাল তিনটার দিকে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরশহরে বিক্ষুব্ধ ও উল্লসিত ছাত্র জনতার আগুনে পুড়েছিল থানা ও ভাংচুর করা হয় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন ভবন। ওসির বাসাসহ পুলিশ কোয়াটরে আগুন দেওয়ার সময় পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান তিনজন, আহত হন কমপক্ষে ৬০জন।
ঘটনার ১৫ দিন পর বিয়ানীবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে গত ২০ আগস্ট। এ মামলায় ৯ প্রবাসী, ৬ সাংবাদিকসহ আওয়ামী লীগের ৭৫ জন নেতাকর্মী ও অজ্ঞাত আরো ১৫০-২০০জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনার ঠিক উল্টো মামলা হওয়ায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনা-সামালোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত দুই থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মামলার এজাহার ভাইরাল হলে এজাহারভুক্ত আসামির তালিকা দেখে অনেকের সাথে হতবাক হয়েছেন স্বয়ং মামলার বাদী নিহত তারেক আহমদের (২৪) মা ইনারুন নেছা। তিনি বলেছেন, 'আসামিরা আমার পূর্বপরিচিত। তারা অত্র মামলার ঘটনার সাথে জড়িত নন। কে বা কাহারা একদল লোক আসিয়া আমার মৃত ছেলের জন্য সাহায্য চাইয়া দরখাস্ত দেওয়ার নাম করিয়া সাদা কাগজে দস্তখত নিয়া অহেতুক এই মামলা দায়ের করে। আমি এই মামলা পরিচালনা করিব না। ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে ইনারুন নেছা এ ব্যাপারে তার আবেদন জমা দিয়েছেন।
পূর্বের সংবাদ- সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন, সাংসদ রনজিত, হাবিবসহ ৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা |
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরপরই বিয়ানীবাজার পৌরশহরে বিএনপি, জামায়াাতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও তাদের অঙ্গ- সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী এবং ছাত্র-জনতা উল্লাসে মেতে ওঠেন। তারা শহরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। তাদের মিছিলে বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিলসহকারে যোগ দেন স্থানীয় জনতা। শহরে হাজার হাজার জনতার উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয় আওয়াামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার অফিস ও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
বিকাল ৫টার পর বিয়াানীবাজার থানায় হামলা চালায় উল্লসিত জনতা। থানার প্রবেশ ফটকের তালা ভেঙ্গে থানা চত্বরে শত শত জনতার উপস্থিতিতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, থানার ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ মালামাল লুট করা হয়। একপর্যায়ে থানা থেকে চালানো গুলিতে ৬০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এর মধ্যে তারেক আহমদসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
নিহত তারেকের মাকে বাদী করে ২০ আগস্ট বিয়ানীবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব ও সদ্য সাবেক পৌরসভার মেয়র ফারুকুল হক, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগে প্রচার সম্পাদক আব্বাছ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ উপজেলা ও পৌর কমিটির উল্লেখযোগ্য প্রায় সবাইকে আসামি করা হয়েছে।
আসামির তালিকায় থাকা অন্তত নয়জন দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে বসবাস করছেন, কিন্তু তাদেরকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাবেক পৌর মেয়র আব্দুস শুকুর ও ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান মিন্টু যুক্তরাজ্যে, ফয়সল আহমদ ও ইকবাল হোসেন তারেক যুক্তরাষ্ট্রে, সাগর দাস ফ্রান্সে, কনক কান্তি ইতালিতে, হুমায়ূন কবির, আরবাব হোসেন খান ও কামরুল হক কানাডায় অবস্থান করছেন।
আসামির তালিকায় কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিকও রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ প্রতিনিধি আব্দুল ওয়াদুদ, সাপ্তাহিক বিয়ানীবাজার বার্তা সম্পাদক ছাদেক আহমদ আজাদ, দৈনিক শ্যামল সিলেট বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি সজিব ভট্টাচার্য, দৈনিক উত্তরপূর্ব প্রতিনিধি মহসিন আহমেদ রনি, দৈনিক শুভ প্রতিদিন প্রতিনিধি মিসবাহ উদ্দিন ও সিলেট দর্পন সম্পাদক আফজল হোসেন পলাশ। এদের মধ্যে সজিব ভট্টাচার্য বিয়ানীবাজার প্রেস ক্লাবের একটি অংশের সভাপতি। তিনি জানিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে নেই। কিন্তু তাকেও আসামি করা হয়েছে, যা রহস্যজনক।
এ বিষয়ে জানতে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবদুলাল ধরকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। থানায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। অন্য কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।