রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে কোনো দলের নয় জনতার হয়ে কাজ করতে হবে: হাসিব

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
০৩:২০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
০৩:২১ পূর্বাহ্ন



রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে কোনো দলের নয় জনতার হয়ে কাজ করতে হবে: হাসিব
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভা


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেছেন, ‘দ্রুত এমন একটি কাঠামো সাজাতে হবে যাতে যে দলের, মতের, আদর্শের মানুষ বসুক না কেন সে তাঁর সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারে।’ পুলিশবাহিনীর সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশবাহিনীকে সংস্কার করতে হবে। তারা যাতে জনতার হয়ে কাজ করতে পারে, কোনো ফ্যাসিস্ট সরকারের তাবেদার না হয়ে যায় সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছাত্র-জনতার মৈত্রী সফর উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ গালিবের সভাপতিত্বে মতবিনিময়ে সভায় হাসিব বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে এমন একটি কাঠামো সাজাতে হবে যাতে যে দলের, যে মতের, যে আদর্শের মানুষ বসুক না কেন তাকে তার সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারা থাকবেন তারা তাদের পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবেন। কোনো দলের হয়ে কথা বলবে না, কোনো মতের হয়ে কথা বলবে না। তারা জনগণের হয়ে কথা বলবে। যা আমরা গত ১৫ বছরে দেখিনি। আমাদের এইটুকু কাজ করতে হবে। আমাদের আওয়াজ জারি রাখতে হবে।’

পুলিশবাহিনী যাতে আগের মতো তাবেদারি করতে না পারে সেদিকে সর্তক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ  দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশবাহিনীকে সংস্কার করতে হবে। তারা যাতে জনতার হয়ে কাজ করতে পারে, কোনো ফ্যাসিস্ট সরকারের তাবেদার না হয়ে যায় সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সে ব্যাপারে আমাদের প্রস্তাবনা থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার কোনো কিছু হলে তারা বিজিবিকে দেশের মধ্যে দাঙ্গাপুলিশের মতো ব্যবহার করেছে। অপরদিকে খুনি বিএসএফ আমাদের ভাইদের সীমান্তে গুলি করে মেরে ফেলেছে অথচ তারা কোনো কিছু করতে পারেনি। আমরা বলে দিতে চাই বর্তমান সরকার ছাত্র জনতার সরকার। সুতরাং বিজিবিকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ওদিক থেকে একটা গুলি চালালে এদিক থেকে ১০টা গুলি চালানোর মতো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।’

হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন ছিল সবধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই। ৩৬ দিনের আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন নিশ্চিত করতে সহস্র ভাই-বোনকে আমরা হারিয়েছি। এখন দেশ গঠনের দায়িত্ব আমাদের হাতে। সমতা ও সাম্যের ভিত্তিতে এই দেশ গঠন হবে।’ তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে বাঁধ ছেড়ে দিয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারত আমাদের উপর সংকট চাপিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেছিল। ছাত্র-জনতার সম্প্রীতির বন্ধনের মাধ্যমে আমরা তার জবাব দিয়েছি। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে- দেশের যে কোনো সংকটে আমরা এক এবং ঐক্যবদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার সরকার। ভারতের আগ্রাসি ভূমিকা অব্যাহত থাকলে আমরা চুপ থাকব না। আমাদের দাবি- দিল্লির সাথে সব অন্যায্য চুক্তি বাতিল করতে হবে। তবে, আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। তা হতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে।’

চাঁদাবাজি, মাদক, সিন্ডিকেটের সাথে কখনো আপোষ নয় জানিয়ে হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘দেশের মানুষ যে সমস্যা থেকে মুক্তি চেয়ে তা চলতে দেওয়া যাবে না। চাঁদাবাজি করলে রুখে দাঁড়াতে হবে। সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে দেশের মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে না। মাদক বন্ধ করা না গেলে এদেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না।’

তিনি রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোনো দলের মতের হয়ে নয়; পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষ সেবা চায়। মানুষটি সঠিক সেবা দেওয়ার ইচ্ছে না থাকলে আপনার এই প্রতিষ্ঠানের কাজ করার অধিকার নেই।’

হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন আমরা তাদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করতে পারব না। বৈষম্যহীন আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাধ্যমে শহিদের মর্যাদা রক্ষায় শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যবো। দেশের যে কোনো সংকট মোকাবিলায় আমরা এক এবং ঐক্যবদ্ধ।’

ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরবে না উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় এই সমন্বয়ক বলেন, ‘সহস্র ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী সরকারের শাসনের সুযোগে প্রশাসনের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনও রয়ে গেছে। আমরা এই ব্যবস্থার বিলুপ চাই। এ জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে আমরা প্রস্তুত আছি।’

সভায় ঢাবির সমন্বয়ক আরিফ, শাবিপ্রবির সমন্বয়ক হাফিজুর রহমান, তাবাসসুম জান্নাত, দেলোয়ার হোসেন, ঢাকার সমন্বয়ক আসিফ হোসেন, শাবির শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক ফয়সল আহমদ, সিলেট জেলা সমন্বয়ক তারেক আহমদ, আবু সাঈদ, সহসমন্বয়ক জুনায়েদ আহমদ প্রমুখ।



এএফ/০২