নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪
০১:৫১ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪
০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
প্রায় এক দশক পর গত বৃহস্পতিবার দেশে ফেরারে একদিন পর সিলেটে নিজের জন্মশহরে পা রাখলেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। সরকারের রোষানলে পড়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এই সাংবাদিক।
আজ শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছাঁন।
বিমানবন্দরে তাঁকে বরণ করে নেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইকবাল আহমেদ ও অধ্যাপক সাজেদুল করিম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. সিদ্দিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, কবি ও বাচিকশিল্পী সালেহ আহমদ খসরু, সাংবাদিক ও গল্পকার সেলিম আউয়াল প্রমুখ।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিলেটে আমি আমার জন্মভূমিতে আসতে পেরেছি এর জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি।‘
তিনি বলেন, ‘যারা বিপ্লবকে সফল করতে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যারা নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত অবস্থায় আছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয় আমরা একটি সমৃদ্ধ ও বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সক্ষম হবো সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায়।’
নিজে পলিসি নির্ধারণে নেই জানিয়ে এসময় তিনি বলেন, ‘একজন সাংবাদিক হিসেবে একজন রিপোর্টার হিসেবে-যদিও আমি কোনো পলিসি নির্ধারণে নেই, কিন্তু আমি মনে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় একটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব।’
বিমানবন্দর থেকে তিনি যান নগরের নয়াসড়ক এলাকায় হযরত মানিকপীর (র.) এর মাজার টিলায়। সেখানে স্বজনদের কবর জিয়ারত করে বাসায় যান।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে একটি ফ্লাইটে মুশফিকুল ফজল যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। ১০ বছর পর দেশে ফিরে আবেগাপ্লুত মুশফিকুল ফজলকে বিমানবন্দরের ভিতরেই সিজদা দিতে দেখা যায়।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচন জালিয়াতি এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রায়ই জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাইসের প্রেস কনফারেন্সে প্রশ্ন করতেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শেষ কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। তবে তার এ পর্যায়ে যাওয়াটা মোটেও সহজ ছিল না।
মুশফিকুল ফজল আনসারী যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাস্ট নিউজ বিডি ডটকমের সম্পাদনার পাশাপাশি স্থায়ী সাংবাদিক প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের সদরদপ্তর ও হোয়াইট হাউজে দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলে ধরে নানা প্রশ্ন করতেন। এর আগে সাংবাদিকতায় সাহসী ভূমিকার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে ২০১৫ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব ছিলেন মুশফিকুল ফজল আনসারী। এ ছাড়া দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনীতিক প্রতিবেদক ছিলেন তিনি। বার্তা সংস্থা ইউএনবিসহ আরও কয়েকটি মিডিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্টও ছিলেন। ব্রিটেনের দ্য টাইমস ও সানডে টাইমস পত্রিকায় ওয়ার্কএক্সিপিরিয়েন্স রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠান অ্যাঙ্কর করেছেন মুশফিকুল ফজল আনসারী। এনটিভিতে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘হ্যালো এক্সেলেন্সি’ হোস্ট করেছেন। এতে রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা থাকতেন। তিনি মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক। অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলাম সম্পাদিত বৈদেশিক নীতি ম্যাগাজিন সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভসেরও নির্বাহী সম্পাদক।
এএফ/০৪