নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
১১:৩০ অপরাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
১১:৩০ অপরাহ্ন
সিলেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘সনাতন পদ্ধতিতেও পাথর তুলতে হলে তার আগে অন্তত ১০ থেকে ১৫ বছর অপেক্ষা করা উচিত। মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনে পরিবেশগত যে ক্ষতি হয়েছে সেটি আগে প্রাকৃতিকভাবে পুনর্গঠনের সময় দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এই সময় দরকার।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে সিলেট নগরের বন্দরবাজারের একটি অভিজাত হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সিলেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), সিলেট বিভাগ।
বেলার নেটওয়ার্ক মেম্বার ও বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি সিলেট বিভাগের সভাপতি সৈয়দ শিরিন আক্তারের সভাপতিত্বে এবং বেলার বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ্ সাহেদা আখতারের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মিসবাহ উদ্দিন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মো. সফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী ও বেলার নেটওয়ার্ক মেম্বার অ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান।
মতবিনিময় সভায় শাবিপ্রবির পূর ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মিসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের যে দাবি উঠেছে তা নিয়েও ভাবতে হবে। কারণ মেশিন দিয়ে আমরা এরই মধ্যে যেভাবে পাথর তুলেছি তাতে পরিবেশও প্রতিবেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন পাথর যেগুলো আসছে সেগুলো দিয়ে পুনরুদ্ধার বা পুনর্গঠনের জন্য দশ থেকে পনের বছর সময় দেই তাহলে এরপর সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করার পরিবেশ হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যদি এসব পাথর না ছুই সেগুলো তো এখানেই থাকবে, কেউ এসে নিয়ে যাবে না। আমাদের পরিবেশগত অবস্থা আগের জায়গায় ফিরে আসুক-রিস্টোর হোক, তারপর আমরা সনাতনীভাবে তোলার চিন্তা করি।’
সনাতন পদ্ধতিতে পাথর তুলে খুব বেশি লাভও হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতিতে পাথর তুলতে খুব বেশি যে লাভ হয়-তা না। লাভের পরিমাণ বাইরে থেকে যারা আমদানি করেন তাদের প্রায় কাছাকাছি। বরং এতে লাভ যেটা হয়, শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়। তবে তা তো অবশ্যই পরিবেশ, প্রতিবেশের ক্ষতি করে করা যাবে না।’
তিনি পরিবেশের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, ‘মেশিনগুলো যেখানে বসানো হয় সেখানে শব্দ দূষণ হয়। ডাস্ট পলিউশন হয়, আরেকটু গভীরভাবে দেখলে এই ডাস্টগুলো নদী প্রবাহের সঙ্গে সেনিমেন্ট আকারে যায়। সেটি নদীর নিম্নধারায় গিয়ে জমা হয়। এতে নদীর প্রাকৃতিক মরফলোজির পরিবর্তন ঘটে।’
পাথর উত্তোলন না করায় বন্যা বেড়েছে দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পাথর উত্তোলনের পক্ষে যারা শক্তভাবে কথা বলেন তারা ইদানিং বলছেন, পাথর উত্তোলন না করার কারণে নাকি বন্যা হচ্ছে। কিন্তু এটা একজন সাধরণ মানুষও জানেন, সয়েল সারফেজকে এরকম হাই ভ্যালুসিটি ওয়াটারের সঙ্গে যুক্ত করে দিলে তাতে বড় ধরণের ভাঙন হবে, নদীপাড়ে ভাঙনের ফলে সয়েল যেটা ডেরোশেন হবে সেটা ডাউন স্ট্রিমে গিয়ে জমা হবে। এতে বন্যার ঝুঁকি বাড়বে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এতে আমাদের সুরমা ও কুশিয়ারার মিলিত প্রবাহ যেটা কালোনী দিয়ে যায়, সেখানে গিয়ে জমা হবে। সেটা ক্ষতিকারক হবে, বন্যার ঝুঁকি বেড়ে যাবে এবং সেটাই হচ্ছে। কালনী নদীতে পলি জমেছে। যে কারণে স্বাভাবিক প্রবাহ গত কয়েক বছর ধরে হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডও বলছে এখানে খনন করতে হবে।’
মেশিনের ব্যবহার আগ্রাসীভাবে শুরু না করলে এরকম পরিণতি হতো না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যখন ব্রিটিশ শাসন ছিল তখন রুপওয়ের মাধ্যমে পাথর আসত। তখন সনাতন পদ্ধতি ছিল। পরিবেশের ক্ষতি করেনি। ক্ষতি হলো তখন-যখন আমরা আগ্রাসী হয়ে গেলাম। ব্যবসায়ীদের অতি লোভ বেড়ে গেল, আমরা বড় বড় মেশিন ইন্সটল করলাম-এসব মেশিনে যে কী পরিমাণ ক্ষতি তা চিন্তার বাইরে।’
শাবিপ্রবির পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বালু পাথর উত্তোলন করব। তবে সেটি রিভার বেল্ট থেকে। কোনোভাবে কোনো বাড়ি বা বাগান থেকে পাথর তোলা যাবে না। বাড়ি, বাগান, কৃষি জমির ক্ষতি করে পাথর তোলা যাবে না।’
মতবিনিময় সবায় এ বিষয়ে গবেষণার উপর জোর দেওয়া দিয়ে বলা হয়, ‘এসব নিয়ে যে পরিমাণ স্টাডি দরকার, অপ্রত্যাশিতভাবে সেরকম কাজ হয়নি কখনো। এসব স্টাডি করতে গেলে অনেক তথ্যের দরকার পড়ে, অর্থনৈতিক সাপোর্টও দরকার হয়। কারণ এখানে নিয়মিত যেতে হবে ডাটা সংগ্রহ করতে হবে, ইমেজ সংগ্রহ করতে হবে। অনেক তথ্য দরকার।’ ভারতে এসব নিয়ে গবেষণা হচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন, ‘আমাদের ওই রকমভাবে নিয়মতান্ত্রিক স্টাডি নেই। সার্চ করে দেখবেন ভারতে এরকম অনেকগুলো এরকম পাথর কোয়ারি আছে। তাদের কিন্তু এগুলো নিয়ে অনেকগুলো স্টাডি আছে। ‘এক্সপ্লোরিং চেঞ্জ অব রিভার মফোলজি অ্যান্ড ওয়াটার কোয়ালিটি, ইন দ্য স্টোন মাইন এরিয়াস অব ডাউকি রিভার বেসিন ইস্টার্ণ ইন্ডিয়া’সহ অসংখ্য কাজ আছে।’