নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ০৪, ২০২৫
০৭:৪৫ অপরাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ০৪, ২০২৫
০৭:৪৫ অপরাহ্ন
আত্মহত্যার প্রবণতা বিরাট সমস্যা হলেও এটি এখনো উপেক্ষিত ও অবহেলিত খাত হিসেবে রয়ে গেছে মন্তব্য করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেছেন, ‘আমরা সাংবাদিকরা যদি এখানে সচেতনতা তৈরি করতে পারি। নানাভাবে, ধারাবাহিকভাবে, আত্মহত্যাবিরোধী যে প্রচার বা কাজ সেটিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে পারলে এর সুফল আসবে।’ তিনি এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও যুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, ‘জনগণ না থাকলে রাজনীতি করবেন কিভাবে?’
আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে ডাব্লিউ এইচ ও বাংলাদেশের সহায়তায়, টেলি সাইকিয়াট্রি রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন নেটওয়ার্ক লিমিটেড এর আয়োজিত আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ে সাংবাদিক দের দায়িত্বশীল রিপোরটিং এর জন্য তিনদিনব্যাপী প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপণী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে হাসান হাফিজ ছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পারিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, ডব্লিউ এএইচও এর জাতীয় গণসংযোগ কর্মকর্তা সালমা সুলতানা, আত্মহত্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রুবিনা জাহান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মুনতাসির মারুফ, টেলি সাইকিয়াট্রি রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন নেটওয়ার্ক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. তানজির রশিদ সরন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ফরেনসিক সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তায়াব্যুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, ‘আমাদের সমাজের ভেতরে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এটা (আত্মহত্যা প্রবণতা) একটি বিরাট সমস্যা। অথচ এটি খুবই উপেক্ষিত ও অবহেলিত খাত। আমরা সাংবাকিরা যদি এখানে সচেতনতা তৈরি করেতে পারি। আমরা নানাভাবে, ধারাবাহিকভাবে আত্মহত্যা বিরোধী যে প্রবণতা সেটিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে পারি। তাহলে এর সুফল আমরা পেতে পারি।’
মানুষের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গাছপালা, তরুলতা হওয়া সহজ এক বিষয়। কিন্তু একজন মানুষের মানুষ হওয়া খুব কঠিন।’ তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যারপ্রবণতা বাড়ার বিষয়টি খুবই শঙ্কার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে এর মধ্যৈ সম্পৃক্ত করা দরকার। জনগণ না থাকলে রাজনীতি করবেন কিভাবে।’ প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আয়োজনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব ডব্লিউএইচও এর সহজগিতায় ট্রিন এ কার্যক্রমকে সারাদেশে আরো বিস্তৃতি করবে, এটিকে তৃণমূলে নিয়ে যেতে হবে। কারণ ঢাকা কিন্তু বাংলাদেশ নয়।’
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়াদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা এখানে তিনদিন প্রশিক্ষণ নিলেন তারা একটা রূপরেখা পেলেন। এখন তারা এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবেন এবং মাঠেঘাটে যে অভিজ্ঞতা তারা অর্জিত করবেন সেই প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এটিকে তারা আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেবেন। অন্যদের উৎসাহিত করবেন, অনুশীলন করবেন।’
আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিভিন্ন কমিউনিটির মানুষকে বেশি বেশি করে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইব ভবিষ্যতে আমরা বাবা-মা’রা সচেতন হবই। পাশাপাশি আমাদের স্কুলের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মোড়ল, মাতব্বর যারা আছেন, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ আছেন সবাইকে যদি আমরা যুক্ত করতে পারি তাহলে আত্মহত্যা কমানো সম্ভব।’ এক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোরও যুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, ‘জনগণ না থাকলে রাজনীতি করবেন কিভাবে?
নৈতিক শিক্ষার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন , ‘আমরা যদি শিশুদের সেভাবে নৈতিক শিক্ষা দিতে পারি এবং আনন্দের সঙ্গে বাচ্চাদের শিক্ষা দিতে পারি তাহলে একটি ইতিবাচক মনোভাব তাদের মধ্যে গড়ে উঠবে। একটা পারস্পরিক সম্প্রীতি, আনন্দঘন পরিবেশে সবাই মিলে যার যার সমস্যা আছে সমবেতভাবে মোকাবিলা করি। তাহলে আমরা এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারি।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পারিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘প্রশিক্ষণ মানুষের মনের জানালা, জ্ঞানের জানালা খুলে দেয়। যারা প্রশিক্ষণ নিলেন তাদের সেই জানালা খুলে গেল। এখন আপনারা ঠিক করবেন এ জানালা দিয়ে আপনারা কি প্রবেশ করাবেন।’ তিনি বলেন, ‘যারা প্রশিক্ষণ নিলেন তাদের মাধ্যমে আমরা আত্মহত্যা বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনে ক্ষেত্রে বড় ধরণের ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা দেখতে পাবো বলেই আমার বিশ্বাস।’