নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ০১, ২০২০
১০:৪১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুন ০১, ২০২০
১১:২৫ পূর্বাহ্ন
ধীর গতিতে শুরু হলেও বর্তমানে দ্রুত সিলেটে ছড়িয়ে পড়ছে মহামারী করোনাভাইরাস। গতকাল রবিবার (৩১ মে) বিভাগে ৯৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এতেই আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। সিলেট বিভাগজুড়ে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০৪০ জন। যা স্পর্শ করতে সময় লেগেছে ৫৬ দিন। সিলেটকে তাই করোনার রেড জোন হিসেবে মনে করছেন অনেকে। দাবি করছেন জেলায় আবারও লকডাউন ঘোষণার। করোনা থেকে মুক্তি নিজেদের হাতে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
সিলেটে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন গত ৫ এপ্রিল। মাঝে কয়েকদিনের বিরতি। এরপর আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। ফলে প্রথম করোনাক্রান্ত শনাক্তের দুই মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের ঘর ছাড়িয়ে গেল। বিভাগে করোনা আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি সিলেট জেলায় আর সবচেয়ে কম মৌলভীবাজার জেলায়।
এদিকে সচেতন মহলের পক্ষ থেকে সিলেটকে করোনার রেড জোন হিসেবে দাবি করা হয়েছে। অবিলম্বে সিলেটকে আবারও লকডাউন ঘোষণারও দাবি জানান তাঁরা।
এই বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, এখন প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সিলেটে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। আমি মনে করি সিলেট এখন করোনার জন্য রেড জোন। এমন সময় লকডাউন তুলে দেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, মানুষের মাঝে এখনও সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। অনেক লেখাপড়া জানা মানুষরাই নানা ধরণের কুসংস্কার বিশ্বাস করে স্বাস্থ্যবিধিকে উপেক্ষা করে চলেছেন। তাদেরকে কোনোভাবে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। তাই সিলেটকে আবারও লকডাউন করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে অপ্রয়োজনে বাইরে আসলে জরিমানা করাও প্রয়োজন।
এই বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবুল কালাম সিলেট মিররকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যেতে পারি না। তবে লকডাউন তুলে দেওয়ায় মানুষ আবারও চলাচল শুরু করেছেন। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, পরিস্থিতি অবনতি হলে প্রয়োজনে আবারও লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে।
সিলেট বিভাগের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা সিলেট ও ঢাকা থেকে করা হয়। বিভাগের দুই জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা সিলেট থেকে হলেও মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হয় ঢাকায়। সিলেট জেলার করোনা শনাক্ত পরীক্ষা করা হয় এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে করা হয় সুনামগেঞ্জের করোনা টেস্ট।
সিলেটে জেলায় এ পর্যন্ত করোনাভাইস শনাক্ত হয়েছে ৫৫৬ জনের। আক্রান্তরা সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা এবং নগরের বাসিন্দা। জেলার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলায় এবং সবচেয়ে কম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। বৈশ্বিক মহারমারি সৃষ্ট প্রাণঘাতি এই ভাইরাস সব উপজেলাকেই স্পর্শ করেছে।
আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা হবিগঞ্জ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯১ জনে। আক্রান্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চুনারুঘাট উপজেলায়। সেখানে রবিবার অবধি ৪৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে জেলায় আক্রান্তের তালিকায় তলানিতে রয়েছে মাধপুর উপজেলা। সেখানে এখন পর্যন্ত ৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. একে এম মোস্তাফিজুর রহমান।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলার প্রত্যেকটা উপজেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৬৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলায়। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ জন। তবে সবচেয়ে কম জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায়। মাত্র ৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সেখানে শনাক্ত হয়েছে।
জেলা ভিত্তিক আক্রান্তের তালিকায় সবচেয়ে কম মৌলভীবাজার জেলায়। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১২৮ জন। সিভিল সার্জন সূত্র জানিয়েছে, জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। ৩০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সেখানে শনাক্ত হয়েছে। মাত্র ৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে জেলার সবচেয়ে কম আক্রান্ত উপজেলা রাজনগর।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার মতো জেলার সদর হাসপাতালেও ৩০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তবে তারা সবাই সদর উপজেলার নন, বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা এখানে এসে নমুনা পরীক্ষা করান। যে জায়গায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়, আক্রান্তের নাম সেই জায়গার তালিকায় যোগ হয় বলে জানিয়েছে জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়।
করোনা থেকে মানুষ নিজেই নিজেদের রক্ষা করতে পারে বলে মন্তব্য করেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। সিলেট মিররকে তিনি বলেন, করোনার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে কেবল মানুষ নিজেই। নিজে থেকে সচেতন না হলে, নিজেকে রক্ষার গুরুত্ব না নিলে তা সম্ভব নয়। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়া। বাইরে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং প্রয়োজন শেষেই ঘরে ফেরা। এগুলো মেনে না চললে কোনোভাবেই করোনা থেকে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব নয়।
আরসি/বিএ-১০