নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ০২, ২০২০
১০:০৩ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ০২, ২০২০
১০:০৪ অপরাহ্ন
অধিকাংশ মানুষই চলছেন স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে। ছবিটি গতকাল দুপুরে নগরের বন্দরবাজার এলাকা থেকে তুলেছেন আমাদের আলোকচিত্রি এইচ এম শহীদুল ইসলাম।
সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকা। গতকাল মঙ্গলবার। বেলা দুইটা। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দেখা গেল, পথচলতি মানুষের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। করোনা-পরিস্থিতির এই সময়টাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেই তাঁরা চলাচল করছেন। অথচ আগের চেয়ে এখন সিলেটে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। এতে করে অনেকেই করোনার সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়ছেন বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার, কোর্টপয়েন্ট, লালদিঘিরপাড়, কালীঘাট, সুরমা মার্কেট, তালতলা, লামাবাজার, শেখঘাট, রিকাবিবাজার, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, শাহী ঈদগাহ, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, মীরাবাজার, নাইওরপুল, সোবহানীঘাট, উপশহর, কদমতলী, জিন্দাবাজার, নয়াসড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় দেদারসে মানুষের চলাচল রয়েছে। দোকানপাট ও বিপণিবিতান চালু হয়েছে। সড়কে ছিল যানবাহনেরও ভিড়। তবে অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলছেন। এটি করোনার সংক্রমণ বাড়াবে বলে স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে মদিনমার্কেটমুখী একটি সিএনজি অটোরিকশার পেছনে তিনজন ব্যক্তিকে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে থাকতে দেখা গেছে। এঁদের একজনের মুখে মাস্ক, অন্য দুজনের মুখে মাস্ক ছিল না। চালক তাঁর সামনের আসনে আরও দুজন যাত্রী পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সিএনজির পেছনের আসনে বসা এক যাত্রী জানালেন, চালকেরা তো আগের মতোই পেছনে তিনজন করে যাত্রী পরিবহন করছেন। বিকল্প না পেয়ে তিনিও সেটা মেনেই চলাচল করছেন।
নগরের কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা জানিয়েছেন, রিকশায় সাধারণত একজন করে যাত্রী চলাচলের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু গণপরিবহনের কাজে ব্যবহৃত গ্যাসচালিত সিএনজি অটোরিকশার ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। একজন করে ব্যক্তি যদি সিএনজিতে চলাচল করতে হয়, তবে তাঁকে পুরো সিএনজি অটোরিকশাটি রিজার্ভ করতে হবে। এতে মাত্রাতিরিক্ত টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু সে ক্ষমতা সকলের নেই। তাই বাধ্য হয়েই মানুষজন একসঙ্গে ঠেসাঠেসি করে সিএনজি অটোরিকশাতে চলাচল করছে। তবে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে পৌঁছানোর কারণে এ বিষয়টি খুবই উদ্বেগের বলে তাঁরা মন্তব্য করেছেন। তবে রাস্তাঘাট ও গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই সেভাবে না থাকলেও কিছু সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় এবং বিপণিবিতানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
জিন্দাবাজার এলাকার পথচারী আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়েছি। তাই মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে নিয়েছি। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে তো অবাক হয়ে গেলাম। কেউ কোনো নিয়মনীতি মানছেন না। মানুষের মধ্যে যেন কোনো সচেতনতা নেই। শরীরে শরীর ঘেঁষে পথ চলছেন। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই হাঁচি-কাশিও দিচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি বাজে অবস্থা মাছ ও সবজি বাজারে। ফুটপাতেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এখনো তো করোনা-সঙ্কট দূর হয়নি। তাই এভাবে অসচেতন হয়ে চলার কোনো মানে হয়? এত এত ফলাও করে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি প্রচার করা সত্ত্বেও মানুষজন কেন বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, সেটিই তো বুঝে উঠতে পারছি না।’
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে বেশ আগেই। এর মধ্যে সিলেট জেলাতেই রয়েছে ছয় শতাধিকেরও বেশি করোনা রোগী। সব মিলিয়ে গত সোমবার পর্যন্ত বিভাগের চার জেলায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে সিলেট জেলাতেই রয়েছে ১৭ জন। এর বাইরে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টেও কিছু ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁরা নিশ্চিত করেছেন। নগরের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ীই বোঝা যায় যে, পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। তাই করোনার সংক্রমণ ও ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই ঘরবন্দী থাকাটা উচিত। জরুরি প্রয়োজনে যাঁরা বেরোবেন, তাঁদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান বলেন, এই সময়টাতে মানুষজনকে আরেকটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। যেহেতু রাস্তাঘাট, অফিস, বিপণিবিতানসহ সবখানে মানুষের চলাচল বেড়েছে, তাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই সবার পক্ষে ভালো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলে করোনার সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হবে।
এএন/বিএ-০১