বিমানবন্দরে ঘানা ফুটবলারের ৭২ দিন

খেলা ডেস্ক


জুন ০৭, ২০২০
০৫:৩০ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৭, ২০২০
১০:৫৭ অপরাহ্ন



বিমানবন্দরে ঘানা ফুটবলারের ৭২ দিন

করোনাভাইরাস মহামারির কবলে পড়ে মুম্বাই বিমানবন্দরে টানা ৭২ দিন কেটেছে ঘানার এক ফুটবলারের। তার মানবেতর জীবন-যাপন জন্ম দিলো অন্যরকম এক গল্পের।
ঘানার ২৩ বছর বয়সী ফুটবলার র‌্যান্ডি জুয়ান মুলার গত নভেম্বরে ছয় মাসের ভিসায় আসেন ভারতে। কেরালার ওআরপিসি স্পোর্টস ক্লাবে খেরতে ভারত আসা এই ফুটবলারের জীবন পাল্টে দেয় টানা লকডাউন। মুম্বাই বিমানবন্দরে গিয়েও দেশে ফিরতে পারেননি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসলে নজরে পড়ে মহারাস্ট্রের পর্যটন ও পরিবেশ মন্ত্রী আদিত্য থ্যাকারে। তিনি ঘানার ফুটবলারকে বান্দ্রার একটি হোটেলে নিয়ে তুলেন।
গত ২১ মার্চ থেকে মুম্বাই বিমানবন্দরের ২ নম্বর টার্মিনালে অবস্থান করছিলেন মুলার। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী ও স্টাফদের সহায়তায় দিন পার করছিলেন তিনি। টাকা ফুরিয়ে আসার পর বিমানবন্দরের কর্মীদের দেওয়া সমুচা ও ফ্রায়েড রাইস খেয়ে ক্ষুধা মিটিয়েছেন ঘানার কুমাসি থেকে উঠে আসা এ ফুটবলার। সেখানকার শৌচাগারে গোসল ও কাপর পরিষ্কারের পাশাপাশি বাগানে ঘোরাঘুরি ও বই পড়ে সময় কেটেছে মুলারের।
সংবাদমাধ্যমকে মুলার বলেন, 'ভারতে ছয় মাসের ভিসায় এসেছিলাম। মাচ প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার রুপি পাওয়ার কথা ছিল। প্রায় কোনো ম্যাচ না খেললেও এখানে আসার ভিসা ও টিকিট মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ রুপি খরচ হয়েছে। কিন্তু লকডাউন শুরুর পর বাড়ি ফিরতে চাইলাম। ৩০ মার্চ কেনিয়া হয়ে ঘানার পৌঁছানোর বিমান টিকিট করা ছিল। মুম্বাই একটু আগেভাগেই চলে এসেছিলাম এরপর তো লকডাউন শুরু হলো। আন্ধেরির পুলিশ আমাকে বিমানবন্দরে যেতে বলে কিন্তু এর মধ্যে থাকার কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি।'
মুলার এরপর বিমানবন্দরে থেকে যাওয়ার প্রেরণা পেয়েছেন স্টিভেন স্পিলবার্গের সিনেমা 'দ্য টার্মিনাল' থেকে। সকালে উঠে গোসল সেরে বিমানবন্দরের বাগানে হাঁটাহাঁটি করতাম। স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মীরা আমাকে খাবার ও টাকা দিয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দরে চড়া মূল্যের কারণে টাকা বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেই। আপদকালীন সময়ে উড়োজাহাজে ওঠা অনেক যাত্রী এ সময় মুলারকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। বই পেয়েছেন তাঁদের কাছ থেকে। মুলার জানান, 'এক যাত্রীর কাছে থেকে 'বি ইয়োর ওউন থেরাপিস্ট' বইটি পাই। এটি আমার হতাশা দূর করতে সহায়তা করে।' মুম্বাই বিমানবন্দরে কোনো হয়রানির শিকার হননি বলে জানিয়েছেন মুলার।
যুব সেনার রাহুল কানাল মুলারকে বান্দ্রার লাকি হোটেলে নিয়ে যান। রাহুল জানান, 'আদিত্য থ্যাকারে এ ঘটনার জানার পর তাকে সাহায্য করতে বলেন। তিনি মুম্বাই ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি। আমরা তাকে কাপড় ও খাবার দিয়েছি। তার দেশে ফেরার জন্য টাকার ব্যবস্থা করা হবে।' ঘানা হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে মুলারের। জরুরি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে তাকে দেশে ফেরানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ঘানা হাই কমিশন।

এএন/০৫