নগরের মার্কেট ও সুপার শপে ‘অকার্যকর’ সুরক্ষা ব্যবস্থা!

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ১৬, ২০২০
০৬:৩৮ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১৭, ২০২০
১০:৫১ পূর্বাহ্ন



নগরের মার্কেট ও সুপার শপে ‘অকার্যকর’ সুরক্ষা ব্যবস্থা!

সিলেটের মার্কেটগুলোতে করোনা ঝুঁকি এড়াতে দেওয়া হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কিন্তু এসব সুরক্ষা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। ছবিটি সম্প্রতি সিলেট নগরের শ্যামলি মার্কেট থেকে তুলেছেন এইচ এম শহীদুল ইসলাম।

কাঁচাবাজারে ভিড়। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি। এক জায়গাতে সবকিছু এবং গাদাগাদি করতে হয় না বলে সামর্থবানদের অনেকে বাজার সারেন চেইন শপগুলোতে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে লেনদেন করার কথা তাদের। প্রত্যেক ক্রেতাকে তাই শপের ভেতরে প্রবেশের পূর্বে হাতে পায়ে ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ ব্যবহার করতে হয়। থার্মাল স্কানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দেখে নিতে হয়।

সিলেট নগরের সুপার শপগুলোতে এসব কিছুই রয়েছে। তবে থেকেও যেন নেই কিছু। ঝুঁকিমুক্ত থাকতে এসে যেন আরও ঝুঁকিতে পড়ছেন সুপার শপের ক্রেতারা। স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছু আছে, তবু যেন অনিরাপদ এই সুপার চেইন শপগুলো।

শুধু সুপার শপই না। নগরের জিন্দাবাজার এলাকার শ্যামলী মার্কেটে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বোতলের মধ্যে ডেটল ভরে তা দিয়ে মানুষের হাত পরিষ্কার করানো হচ্ছে। তারপর নেওয়া হচ্ছে ভেতরে। তবে দেখা যায়নি কোনো থার্মাল স্ক্যানার। একই অবস্থা নগরের আরও কয়েকটি মার্কেট ও এটিএম বুথেও দেখা যায়। 

স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে থার্মাল স্ক্যানার বা থার্মোমিটার থাকা বাধ্যতামূলক। কোনো ব্যক্তির শরীরে ৯৮.৪ তাপমাত্রা হলে তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়া।

এছাড়া কমপক্ষে ৭০ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল রয়েছে, এমন হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন সাবানের বিকল্প কিছু হতে পারে না। স্বাস্থ্যবিধি কোথাও মেনে চললেও কিছু জায়গায় আংশিক পালন করা হচ্ছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় একেবারেই না।

নগরের সুবিদবাজার এলাকার সুপার শপ আগোরা ও আম্বরখানা এলাকার স্বপ্ন। দুটোতেই প্রবেশের পূর্বে হাতে পায়ে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হয়। কিন্তু এসব স্প্রের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয় থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে। কিন্তু থার্মাল স্ক্যানারের বোতামে চাপ দিয়ে আর তাপমাত্রা মেপে না দেখেই ভেতরে যেতে দেওয়া হয়। থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করলেও, ব্যবহারকারীরা এই বিষয়ে অদক্ষ। তাই সুপার শপও ক্রেতাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন সচেতনমহল।

নগরের চৌকিদেখি এলাকার বাসিন্দা অনির্বাণ হোসেন দিগন্ত। ভিড় ঠেলে করোনা ঝুঁকিতে কাঁচাবাজারে যেতে চান না। ভিড়মুক্ত ও এক জায়গায় সবকিছু পাওয়া যায় বলে তাই বাজার করতে সুপার শপে যান তিনি।

তিনি বলেন, ঈদের আগে আগোরা সুপার শপে বাজার করেছিলাম। প্রবেশের সময় হাতে পায়ে স্প্রে করা হয়েছিল। কিন্ত থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে যখন তাপমাত্রা মাপা হয়, তখন তাপমাত্রা কত সেটা আর দেখেননি কেউ। শুধু আমাকেই না, যাদের তাপমাত্রা মাপা হয় তাদেরটা আর মনিটরে দেখা হয় না তাপমাত্রার পরিমাণ কত।

তিনি আরও বলেন, আজ (বুধবার) আবার বাজার করতে গিয়েছিলাম আম্বরখানার স্বপ্নতে। সেখানেও একই দশা। তবে তাপমাত্রা দেখতে চাইলে অবশ্য দেখতে দেয়। কিন্তু যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাপমাত্রা মাপার জন্য তারা কেউ এই বিষয়ে দক্ষ বলে মনে হয়নি। তাই ভরসার জায়গা সুপার শপগুলোতেও যেতে হচ্ছে একই ঝুঁকি নিয়ে।

শুধু থার্মাল স্ক্যানারের জন্যই নয়। ঝুঁকি রয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক স্প্রের জন্যও।

নগরের মীরাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী তানভীর হোসেন। ব্যবসায়ীক কাজে প্রায়ই টাকা তুলতে যেতে হয় বেসরকারি একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে। তবে এটিএম বুথে স্যাভলন বা ডেটল দিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সিলেট মিররকে তিনি বলেন, প্রায়ই আমাকে এটিএম বুথে টাকা তুলতে যেতে হয়। গত বুধবার দুপুরে গিয়েছিলাম। প্রবেশের সময়ে একজন প্রহরী হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ঢেলে দেন। তবে হাতে মাখার পর স্যাভলন বা ডেটল জাতীয় গন্ধ পাই। শুঁকেও তাই মনে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল যুক্ত অ্যালকোহল থাকতে হয়। না হলে হাতের জীবাণু ধ্বংস হয় না। সেখানে ডেটল বা স্যাভলনের পক্ষে জীবাণু ধ্বংস করা কঠিন।

প্রহরীকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে প্রহরী তানভীরকে জানান, অফিস থেকে এগুলোই দেওয়া হয়েছে। যারা আসবে তাদের এটা দিয়ে পরিস্কার করিয়ে তবে যেন ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এই নির্দেশনার বাইরে আর কিছু তাকে বলা হয়নি।

এই বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সুপার শপগুলো হয়তো চোখের পলকে সেটা নিচ্ছেন। আর যদি সেটাতে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে থাকেন তবে মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি আমরা। কারণ, মানুষ সুপার শপগুলোর ওপর ভরসা করে বলেই যায়। কিন্তু সেখানেও যদি ঝুঁকি থাকে তাহলে মানুষের কোনো ভরসার জায়গা থাকলো কোথায়। এদিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিষয়ে তিনি মার্কেট ও সংশ্লিষ্ট এবং সাধারণ মানুষদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বলে কোনোকিছু নেই। কোনো চিকিৎসকই এ ধরণের কোনো কিছু ব্যবহার করতে বলবেন না। আমরা সবসময়ই সাধারণ মানুষকে বল সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে বলে এসেছি। বল সাবানের যেগুলোতে খার বেশি, সেগুলো জীবাণু ধ্বংসে বেশি কার্যকর। বাইরে থেকে ফেরার পরই সাবান দিয়ে হাত কনুই পর্যন্ত পরিষ্কার করার পরামর্শ দিচ্ছি সবাইকে।

তবে হ্যান্ড রাব বলে জীবাণুনাশক স্প্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, হ্যাক্সিসল জাতীয় হ্যান্ড রাব বলে জীবাণুনাশক স্প্রে রয়েছে। এগুলো চিকিৎসকরাও ব্যবহার করে থাকেন। যখন হাতের কাছে সাবান থাকে না তখন এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে দিনশেষে সাবানের আশ্রয় নিতেই হবে। কারণ হ্যান্ড রাবের চেয়ে জীবাণুধ্বংসে অধিক কার্যকর সাবান। তাই এর বিকল্প কিছু নেই।       

আরসি-১৮/জেডএসএস