সুনামগঞ্জে করোনা রোগী ৭৮৯ জন, শয্যা মাত্র ১৪৫টি!

বিশেষ প্রতিনিধি


জুন ২০, ২০২০
০৪:৪৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২০, ২০২০
০৪:৪৬ অপরাহ্ন



সুনামগঞ্জে করোনা রোগী ৭৮৯ জন, শয্যা মাত্র ১৪৫টি!

সুনামগঞ্জে করোনা আক্রান্ত রোগীদের বিশেষায়িত সেবার জন্য সরকারিভাবে ১৪৫টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে ১০০টি এবং ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি করে আরো ৪৫টি আইসোলেশন শয্যা আছে। সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা চিকিৎসায় কোনো আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়নি। এদিকে শয্যার তুলনায় আক্রান্তের হার কয়েকগুণ বেশি। বর্তমানে ৭৮৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৯২ জন। নির্ধারিত শয্যার বাইরে রেখেই বিশেষ ব্যবস্থায় তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১৭৫ জন। অন্যদিকে পর্যাপ্ত কিট না থাকায় এখন থেকে উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত রোগীদের আর টেস্ট করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

সুনামগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে আশঙ্কাজনকভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ছাতক ও সুনামগঞ্জ উপজেলায় সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে (২০ জুন পর্যন্ত) সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত ১৯৭ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন উপজেলার ৩৪ জন করোনা রোগী সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের ১০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৬৯ জন, বিশ্বম্ভরপুরে ২৭ জন, তাহিরপুরে ২৭ জন, জামালগঞ্জে ৬১ জন, দিরাইয়ে ২১ জন, ধর্মপাশায় ১৮ জন, ছাতকে ২০৯ জন, জগন্নাথপুরে ৬২ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৬২ জন এবং শাল্লায় ৩২ জন করোনা রোগী রয়েছেন। এর মধ্যে আজ শনিবার (২০ জুন) জেলায় নতুন করে আরও ৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বর্তমানে ১৭৫ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। নির্ধারিত শয্যার বাইরেও বিশেষ ব্যবস্থায় তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলার সুনামগঞ্জ সদর ও ছাতক পৌরসভাসহ একটি ইউনিয়নকে পূর্ণাঙ্গ লকডাউনসহ ১৫টি এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু এখনও অনুমোদন না আসায় লকডাউন কার্যকর করা হয়নি। জনগণও বেপরোয়া চলাচল করতে দেখা গেছে। 

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৭ হাজার ১ জন ব্যক্তিকে করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। সংগৃহিত নমুনা থেকে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৭৮৯ জনের। স্থানীয়ভাবে চাহিদা থাকলেও কিটের অপ্রতুলতার কারণে কাঙ্ক্ষিত নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ কারণে গত কয়েকদিন ধরে উপসর্গহীন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা করোনা প্রতিরোধ সেল। গত কয়েকদিন ধরে উপসর্গহীনদের নমুনা নেওয়া হচ্ছে না বলে স্বীকার করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।

এদিকে করোনার দ্রুত বিস্তারে উদ্বেগ জানিয়ে সুনামগঞ্জে কঠোর লকডাউনসহ জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সুধীজন।

সুনামগঞ্জ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, 'সুনামগঞ্জে করোনা পরীক্ষাগার চালু করা প্রয়োজন। কারণ যে হারে আক্রান্তের হার বেড়ে চলেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন।'

তিনি বলেন, 'আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি, পর্যাপ্ত কিটের অভাবে কাঙ্ক্ষিত নমুনা সংগ্রহ সম্ভব হয় না। তাছাড়া আক্রান্তের তুলনায় শয্যার সংখ্যাও অপ্রতুল। আইসোলেশন সেন্টার বৃদ্ধি ও টেস্ট বাড়ানোর ব্যবস্থা এখন জরুরি। পাশাপাশি অসহায় মানুষের সহযোগিতাও প্রয়োজন।'

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন বলেন, 'জুন মাসে হঠাৎ করে সুনামগঞ্জে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের সরকারি সেবা ও পরামর্শ নিশ্চিত করা হয়েছে। জেলার ৯টি হাসপাতালে ৫টি করে আইসোলেশন ওয়ার্ডসহ বিশেষ ব্যবস্থায় রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার বাদে প্রায় প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে কয়েকদিন ধরে আমরা উপসর্গহীনদের নমুনা সংগ্রহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

 

এসএস/আরআর-১৪