ওসির বিরুদ্ধে ক্ষোভে উত্তাল ওসমানীনগর আওয়ামী-যুবলীগ

ওসমানীনগর প্রতিনিধি


জুন ২০, ২০২০
০৯:১৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ২০, ২০২০
০৯:১৩ পূর্বাহ্ন



ওসির বিরুদ্ধে ক্ষোভে উত্তাল ওসমানীনগর আওয়ামী-যুবলীগ

সিলেটের ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কর্তৃক উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের হুমকি প্রদানের বিষয়টি একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ওসি রাশেদ মোবারককে প্রত্যাহার ও তার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ওসমানীনগর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিলদার আলী নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন, 'ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদ পরিবারের সদস্য দবির মিয়া এবং ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী-যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল ভাইকে দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে যাবো- ওসি সাহেবের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'

ছাত্রলীগ নেতা রাসেল আহমেদ লিখেছেন, 'ওসি সাহেবের এই কথাটা আমাদের জন্যে অনেক লজ্জাজনক। ওসমানীনগর থানার ওসি সাহেবের দড়ি এত লম্বা না কি? উমরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা দবির মিয়া ও উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদকে হুমকি দেওয়া আর দড়ি দিয়ে বেঁধে আনা- এটা শুধু তাদেরকে বলেননি। এ কথা ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে বলেছেন। এ কথা আমাদের সবার কলিজায় আঘাত করেছে।'

হাফিজুর চৌধুরী লিটু লিখেছেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা, আপনার জন্য যারা রাত-দিন পরিশ্রম করে আপনার সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে জীবনের মায়া ছেড়ে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের প্রতি প্রশাসনের এমন আচরণ সত্যি দুঃখজনক। ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদ পরিবারের সদস্য দবির মিয়া এবং ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী-যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবালকে দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে যাবো বলা ওসি সাহেবের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'

উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা মনজু আহমেদ আলী লিখেছেন, 'কি করে একজন ওসির এত সাহস হয় আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার? ওসির এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।'

ওসমানীনগর উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি মুহিবুর রহমান মিটুন লিখেছেন, 'ওসমানীনগর থানার ওসির এই বক্তব্যের এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সবসময় খারাপ আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। দ্রুত তাকে চাকরি থেকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।'

এদিকে ওসির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ওসিকে বয়কটের সামাজিক কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু। তিনি বলেন, 'ওসি রাশেদ মোবারক থানায় যোগদানের পর থেকেই বিচারপ্রার্থী লোকজনসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি।' 

এ প্রসঙ্গে ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদাল মিয়া বলেন, 'কোনো কারণ ছাড়াই উমরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দবির মিয়া, উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদসহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও বর্জনীয়। আমি এ ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করছি।'

এদিকে একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ওসি কর্তৃক হুমকি প্রদানের ঘটনায় আজ শনিবার (২০ জুন) দুপুরে ভুক্তভোগীরাসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ওসমানীনগর) সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন জানিয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

প্রসঙ্গত, উপজেলার উমরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদ পরিবারের সন্তান দবির মিয়া, উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি সদস্য চেরাগ আলী এবং উমরপুর ইউনিয়নের সালিশ ব্যক্তিত্ব সাবেক ইউপি সদস্য তখলিছ আলীকে রশি দিয়ে বেঁধে থানায় নিয়ে আসার হুঁশিয়ারি দেন ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদ মোবারক। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) বিকেলে থানার অফিসিয়াল মুঠোফোন থেকে উল্লেখিত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে এমন হুমকি প্রদান করেন তিনি। ওইসময় তিনি বলেন, 'নারায়ণগঞ্জের এমপি শামিম ওসমানেরও টাইম ছিল না আমার হাতে। বানিয়াচং থাকাকালীন আব্দুল মজিদ খাঁনকে তো পাত্তাই দেইনি। আর এখানকার কোনো নেতা তো আমার চোখেই পড়ে না। এগো টাইম নাই আমার কাছে। কথা না শুনলে রশি দিয়ে বেঁধে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে আসবো।'

 

ইউডি/আরআর-১৬