বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
জুন ২৪, ২০২০
০৭:২৪ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ২৪, ২০২০
০৭:২৪ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে করোনা চিকিৎসায় হোমিও ওষুধের দ্বারস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই উপজেলার হাট-বাজারে ‘আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০’ নামের ঔষধ নিতে হোমিও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন সন্দেহপ্রবণ অসংখ্য করোনা রোগী। এই ঝোঁক শুধু এ উপজেলায়ই নয়, অধিকাংশ এলাকায় হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিয়ে হৈচৈ হুলুস্থুল শুরু হয়েছে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কোভিড-১৯ ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা পরবর্তী আইসুলেশন এড়াতেই হয়তো হোমিও ওষুধের প্রতি আস্থাশীল হয়ে পড়ছে মানুষ। করোনা সংক্রমণ থেকে সহজে মুক্তি পেতে সম্ভাব্য ওষুধের নাম সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন তারা। অনেকে আবার নাম না জেনে চিকিৎসকের কাছে এসে ওষুধের খোঁজ করছেন। তবে এ ওষুধ করোনায় কতটা কার্যকরী সে ব্যাপারে দ্বিমত থাকলেও হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকদের একাংশ তা কার্যকরী বলে মত দিয়েছেন।
করোনা প্রতিরোধে হোমিও ওষুধের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হোমিও ও অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকদের মধ্যে পরস্পর বিরোধি বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের দাবি অনুযায়ী আর্সেনিক অ্যালবামসহ বেশ কয়েকটি ওষুধ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করছে। এমনকি করোনা চিকিৎসায় ছোট পরিসরে হলেও আলাদা হোমিওপ্যাথি ওয়ার্ড খুলে চিকিৎসার কার্যকারিতা প্রমাণের সুযোগ চাইছেন তারা।
অন্যদিকে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করছেন। এছাড়া কোথাও কোনো সমীক্ষা কিংবা গবেষণায় হোমিও ওষুধ করোনায় কার্যকরী এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণে ভারতের সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন সমস্ত বেসরকারি চিকিৎসককে কভিড-১৯ চিকিৎসায় আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এর আগে ভারতের বিকল্প চিকিৎসাবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়ুস কভিড-১৯ প্রতিষেধক হিসেবে যেসব প্রতিষেধকের তালিকা তৈরি করেছে সেখানে আর্সেনিক অ্যালবামের নাম ছিল। এছাড়া সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি’র সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সভায় আর্সেনিকা অ্যালবাম-৩০ কভিড-১৯ প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে। তবে আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০ নিয়ে চরম বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এই করোনাকালে হোমিও ওষুধ আর্সেনিক অ্যালবামের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখে বোঝা যায়, এ ওষুধে কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আছে। কভিড-১৯ ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে যখন গোটা পৃথিবীই তৎপর তখন করোনা উপকৃত এ ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে ঢের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে অনেকে এ ওষুধ নিয়ে সন্তোষও প্রকাশ করছেন।
আর্সেনিক অ্যালবামে উপকৃত ছাতক পৌরসভার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সুপারভাইজার সুব্রত হালদার নামের একজন ফোনে জানিয়েছেন, ‘করোনা আসার পর থেকে আমি সর্বোচ্চ সময় পর্যন্ত মাঠে কাজ করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এফেক্টেড না। তবে আমাদের অফিসে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ওষুধে অবশ্যই কিছু একটা আছে।’ এছাড়া ওষুধ সেবনকারী অনেকে এর উপকারিতা আছে বলেও মৌন সমর্থন দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে তরুণ হোমিও চিকিৎসক বিষ্ণুপদ সূত্রধর বলেন, ‘হোমিওপ্যাথিক অর্গানন অনুযায়ী লক্ষণ অনুসারে চিকিৎসা করতে হয়। লক্ষণ বিবেচনায় যে ওষুধে রোগী আরোগ্য লাভ করবে সে ওষুধই ওই রোগের জন্য যথার্থ। বর্তমান করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের লক্ষণ বোঝে হোমিও চিকিৎসকেরা হয়তো আর্সেনিক অ্যালবাম প্রয়োগ করে সফলতা পেয়েছেন। এই ওষুধ সুস্থ দেহে প্রয়োগ করলে যেমন সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা কম থাকে তেমনি আক্রান্তরাও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। তাই মানুষ এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।’
জামালগঞ্জের হোমিও চিকিৎসক সমরেন্দ্র নারায়ণ দাস (মুকুল) জানিয়েছেন, ‘করোনা প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথরা যেভাবে আর্সেনিক দিচ্ছে তাতে আমি একমত না। সচরাচর যেসব রোগী দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে আর্সেনিকের কোন লক্ষণ নেই। আর্সেনিক একটা বিষ। এটা লক্ষণ না বোঝে দিলে দেহে আরেকটি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।’
সিলেট রামকৃষ্ণ আশ্রম মঠের সাধারণ সম্পাদক ও হোমিও চিকিৎসক চন্দ্রনাথানন্দজী মহারাজ বলেন, ‘হোমিওপ্যাথ চিকিৎসাটা হচ্ছে সম্পূর্ণ উপসর্গভিত্তিক। যেহেতু ভাইরাসটা নতুন এ জন্য কারও কোন অভিজ্ঞতা নেই। করোনাক্রান্তদের দেহে উপসর্গ অনুসরণ করেই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। আর্সেনিক সিনট্রমের সঙ্গে করোনা সিনট্রমের মিল থাকায় এটা নির্ধারিত হয়েছে। আর তাতে অনেকটা সফলও হয়েছে ভারতের আয়ুস ডিপার্টমেন্ট।
তিনি বলেন, সিলেটের বেশ কয়েকজন ডাক্তার যারা করোনা পজেটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চরম অবস্থায় ছিলেন তাদেরকে এ ওষুধ খাওয়ানোর চার দিন পর দেখা গেল করোনা নেগেটিভ হয়ে গেল। তার মানে এ ওষুধ খুব কার্যকরী। এগুলো খেলে করোনা সংক্রমিত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
দুরারোগ্য রোগ থেকে মানুষকে বাঁচানো মানুষের ধর্ম উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যে কেউ এ ওষুধ সাজেস্ট করতে পারেন। আর্সেনিক অ্যালবাম-২০০ ও ক্রিয়োজট-২০০ দুটো মিলেই কাজ করে। করোনার জন্য এগুলো খুব কার্যকরী। আর্সেনিক সকালে আর ক্রিয়োজট বিকালে দু’ফোটা করে পাঁচ দিন খেলেই যথেষ্ট।’
তবে এ বিষয়ে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকদের মতামত জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিআর/বিএ-১৩