নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ২৪, ২০২০
০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুন ২৪, ২০২০
১০:৪১ পূর্বাহ্ন
আলোকচিত্র : এইচএম শহিদুল ইসলাম
ডিজিটাল স্মার্ট প্রকল্পের অধীনে বৈদ্যুতিক খুঁটিবিহীন দেশের প্রথম নগর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সিলেটকে। ইতোমধ্যে নগরের ১নং ওয়ার্ডের দরগা গেইট এলাকায় সড়কের দুপাশ থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারের জঞ্জাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দেশব্যাপী আলোচিত হলেও হঠাৎ এ কার্যক্রম যেন গতি হারিয়েছে। দরগা গেইটের বাইরে আর কোথাও এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সম্প্রতি নগরের চৌহাট্টা থেকে বন্দরবাজার পর্যন্ত রাস্তায় নতুন করে বিদ্যুতের খুটি স্থাপন কার্যক্রমে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয়েছে সমালোচনা। যদিও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও সিলেট সিটি করপোরেশন বলছে, ‘এটা বিকল্প ব্যবস্থা’।
আজ বুধবার (২৪ জুন) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরের চৌহাট্টা থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকার সড়কে নতুন করে বেশ কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি লাগানো হচ্ছে। এরমধ্যে চৌহাট্টা থেকে জিন্দাবাজার পর্যন্ত রাস্তার মাঝামাঝি ১৬টি খুঁটি ইতোমধ্যে লাগানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে অনেক উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকলেও এ কাজটি চলছে।
এরকম কার্যক্রম বিচলিত করছে অনেককে। মঞ্জুর আহমেদ আরিফ নামে একজন নাগরিক সিলেট মিরর কার্যালয়ের টেলিফোনে যোগাযোগ করে বলেন, ‘কিছুদিন আগেই দরগাহ গেইট এলাকায় রাস্তার উপরের সব তারের জঞ্জাল সরিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে নেওয়ায় পুরো দেশজুড়ে প্রশংসা পেলো সিলেট। এরপর এতদিন ধরে রাস্তার দুইপাশ খুঁড়ে রেখে অভারহেড ক্যাবল মাটির নিচে দিয়ে নেওয়ার কাজ করা হলো। ভোগান্তি পোহালো সাধারণ মানুষ আর এখন আবার রাস্তার মাঝ দিয়ে পিলার বসিয়ে তার টানা হচ্ছে। এসবের মানে কি?’
শুধু মঞ্জুর আহমেদ নয় অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন এমন কার্যক্রমে। তারা বললেন, ‘কিছুদিন পরপর সিদ্ধান্ত বদল প্রমাণ করে এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই হচ্ছে। যখন যেটা মাথায় আসছে সেটাই করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও সিলেট সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, এটা আন্ডারগ্রাউন্ড প্রকল্পেরই বিকল্প মাধ্যম। যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক যাতে বিকল্প ব্যবস্থায় ব্যস্ততম এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া যায় সেজন্য এ উদ্যোগ।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জিয়াউল হাসান সিলেট মিররকে বলেন, ‘এটা বিকল্প বৈদ্যুতিক সংযোগ। যদি কোনো কারণে আন্ডারগ্রাউন্ডে সমস্যা দেখা দেয়, তবে কেউ যেন বিদ্যুৎহীন না থাকেন সেজন্যই এই বিকল্প সংযোগ। এটা সিলেট সিটি করপোরেশনের চাওয়া ছিল। সিটি করপোরেশন এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ সিদ্ধান্তে এটা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
ধারণাটি বাংলাদেশে নতুন বলে বিকল্প ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. রুহুল আলম।
সিলেট মিররকে তিনি বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ডে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ার ধারণাটা আমাদের দেশে নতুন। পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। যদি কোনো কারণে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় তাহলে তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য উন্নত প্রযুক্তি আমাদের কাছে এখনও নেই। ত্রুটি সারাতে তাই অনেক সময় লেগে যেতে পারে। আর চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার বা বন্দরবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে তো বিদ্যুৎবিহীন করে রাখা যাবে না। এজন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিলেটের সড়কগুলোর উভয় পাশে যে সমস্ত খুঁটি রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হবে। মাঝখানে রোড ডিভাইডার হবে। এই খুঁটিগুলো রোড ডিভাইডারের মধ্যেই পড়বে। তবে সড়ক বাতির জন্য হলেও তো আমাদের খুঁটির প্রয়োজন হবে। নতুন বসানো খুঁটিগুলোতে সড়ক বাতিই ব্যবহার করা হবে। এর উপরে থাকবে বিদ্যুতের তারগুলো। তবে সেটা শুধুমাত্র আন্ডারগ্রাউন্ডের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছন্ন হলেই ব্যবহার হবে। অন্য সময়গুলোতে বন্ধই থাকবে এই সংযোগ।
যদিও এ ব্যবস্থা সাময়িক সময়ের জন্য বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যদি আন্ডারগ্রাউন্ডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, তবে এই বিকল্প মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। তবে এটা সাময়িক, মাত্র ৬ থেকে ৭ মাসের জন্য। যখন সবকিছু অনুকূলে চলে আসবে তখন বিদ্যুতের তারগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।’ তবে খুঁটিতে ১১ কেভি বিদ্যুতের তার ছাড়া অন্য কোনো তার থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে তার সরিয়ে নিলেও সড়ক বাতির জন্য খুঁটিগুলো ব্যবহার করা হবে।
সড়ক বাতির জন্য এত বড় খুঁটির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র সড়ক বাতিই না। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাসহ, চৌহাট্টা ও জিন্দাবাজার এলাকায় বড় পর্দা লাগানো হবে। এর মাধ্যমে নগরের কোথাও কোনো হকার বসেছে কি না, হকারের কাছ থেকে কেউ চাঁদা নিচ্ছেন কি না সেটা জনসম্মুখেই প্রকাশ হয়ে যাবে। তাছাড়া এই সড়কে ডিভাইডারের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও এই বড় খুঁটির প্রয়োজন পড়বে।’
আরসি-০১/এএফ-০৩