নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ২৪, ২০২০
১২:৪৩ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ২৪, ২০২০
০১:১৯ অপরাহ্ন
করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির গাইড লাইন মতে সিলেট মহানগরের ১৯ ওয়ার্ডের অবস্থান রেড জোনে। জেলার চিত্রও একই রকম। প্রতিদিন করোনা শনাক্তের সংখ্যা তুলনামূলক হারে বাড়ছে। বেশিরভাগ মানুষই মানছেন না স্বাস্থ্য বিধি। এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ঘোষণা হচ্ছে না রেড জোন। এরকম পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন সিলেটের নাগরিক সমাজ। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিভাগ ও অন্যান্য সিভিল প্রশাসনের কর্মকা-ের মধ্যে স্পষ্টতই সমন্বয়হীনতা ও অবহেলা দেখা যাচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
আজ বুধবার (২৪ জুন) দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয় সিলেটের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে। স্মারকলিপিতে শনাক্ত বিবেচনায় দ্রুত জোন ঘোষণাসহ নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো এবং চিকিৎসবা সুবিধা নিশ্চিতসহ তিন দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। স্মারকলিপিতে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নাগরিক সমাজের ২৮ জন স্বাক্ষর করেন।
জেলা প্রশাসকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবীর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ দিদার আলম নবেল, ইমজা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রী, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর এবং খেলাঘর সিলেটের সহ সভাপতি অরূপ শ্যাম বাপ্পী।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সিলেট নগরসহ সিলেট জেলায় গত মে মাস পর্যন্ত আক্রান্ত ছিলেন ৫৫৫ জন। আর চলতি জুন মাসের প্রথম ২০ দিনেই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তি। মে মাস পর্যন্ত জেলায় মৃতের সংখ্যা ছিল ১৪। আর গত ২০ দিনে মারা গেছেন ৩১ জন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিক, সাধারণ কর্মজীবী সবার মধ্যেই সংক্রমণ বাড়ছে। গ্রামেও ছড়িয়ে গেছে করোনাভাইরাস। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও লকডাউন বা লোকজনের বেপরোয়া ঘোরাফেরা বন্ধ করতে কোনো উদ্যোগ নেই। সিলেট নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ড ও জেলা পর্যায়ে সকল উপজেলার কোনো না কোনো এলাকা রেড জোনে পড়লেও প্রশাসন আশ্চর্যজনকভাবে নির্বিকার। এ ব্যাপারে এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিবে।
স্মারকলিপিতে তিন দফা দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলা হয়, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিভাগ ও অন্যান্য সিভিল প্রশাসনের কর্মকা-ের মধ্যে স্পষ্টতই সমন্বয়হীনতা ও অবহেলা দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে সিলেট জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দু হাজারে পৌঁছেছে। প্রতিদিনই গড়ে অর্ধশতাধিক লোক আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু সেটা নমুনা পরীক্ষার সংখ্যার হিসেবে, বাস্তবে আক্রান্ত হয়ত আরো অনেক বেশি। কারণ অনেকে পরীক্ষার সুযোগই পাচ্ছে না।’
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, ‘আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও লকডাউন বা লোকজনের বেপরোয়া ঘোরাফেরা বন্ধ করতে কোনো উদ্যোগ নেই। সিলেট নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ড ও জেলা পর্যায়ে সকল উপজেলার কোনো না কোনো এলাকা রেড জোনে পড়লেও প্রশাসন আশ্চর্যজনকভাবে নির্বিকার।’ এ ব্যাপারে এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়।
সিলেটে করোনা শনাক্তে পর্যাপ্ত পিসিআর ল্যাব নেই উল্লেখ করে সিলেটে পিসিআর ল্যাব বাড়ানো এবং বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা নিশ্চিতে আপনার প্রধানমন্ত্রীর জরুরি নির্দেশনা প্রত্যাশা করেন তারা। সিলেটেও করোনা চিকিৎসা এবং আইসোলেশন সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল উল্লেখ করে তারা এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।
স্মারকলিপিতে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নাগরিক সমাজের ২৮ জন স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষরদাতারা হলেন (স্বাক্ষরের ক্রম অনুসারে) সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আফজাল রশিদ চৌধুরী, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সিলেট স্টেশন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সভাপতি ভবতোষ রায় বর্মন, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, দৈনিক সিলেট মিরর’র সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আহমেদ নূর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন লস্কর, পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান’র সংগঠক আশরাফুল কবীর, সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সনাক সিলেটের সভাপতি, আজিজ আহমদ সেলিম, বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম, খেলাঘর সিলেটের সহ সভাপতি অরূপ শ্যাম বাপ্পী, সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ, সিলেট জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মো. সিকন্দর আলী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, গণতন্ত্রী পার্টির সাবেক সভাপতি মো. আরশ আলী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ দিদার আলম নবেল, ইমজা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রী, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, বাংলাদেশ কলেজ বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম ভাস্কর রঞ্জন দাশ, সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল হক সেলিম, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু।
এএফ/০৫