নগরে ইন্টারনেট বিপর্যয়ের শঙ্কা

রাফিদ চৌধুরী


জুন ২৬, ২০২০
০৪:২৫ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২৬, ২০২০
০৪:৩৭ অপরাহ্ন



নগরে ইন্টারনেট বিপর্যয়ের শঙ্কা
অপসারণ হচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটি

বিদ্যুতের তার ও খুঁটিবিহিন দ্বিতীয় এলাকা হতে যাচ্ছে সিলেট নগরের চৌহাট্টা-বন্দরবাজার সড়ক। ইতোমধ্যে এই সড়কের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ভূগর্ভে নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আগামীকাল শনিবার (২৭ জুন) সড়কের দুই পাশের বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সেই সঙ্গে অপসারণ হবে খুঁটিতে থাকা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের তারগুলোও। ফলে নগরজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

চৌহাট্টা থেকে জিন্দাবাজার হয়ে বন্দরবাজার এলাকায় ব্যাংকসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় হওয়ায় ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সেবা প্রদানেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বাসাবাড়িতেও নেট ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সেখানেও তৈরি হতে পারে অচলাবস্থা। সিটি করপোরেশন এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের (আইএসপিএস) সমন্বয়হীনতার কারণে এমন বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সিলেট নগরে বিদ্যুতের সংযোগ মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা অনেক দিনের। শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল মাটির নিচে যাবে বিদ্যুৎসহ সব ধরনের তার। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও একই পথ অবলম্বন করতে বলা হয়। তবে ইন্টারনেটের তার নিজ উদ্যোগে মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার অনুমতি নেই ব্রডব্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর। এনটিটিএনের মাধ্যমে নিতে হয়। তবে এনটিটিএনের খরচ বহন করতে গেলে গ্রাহকদের খরচ তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাবে। তাই বিকল্প পথ খোঁজা শুরু হয়। 

দীর্ঘ ১ বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও বিকল্প পথ খুঁজে পাননি কেউ। কয়েক দফা বৈঠকের পরও আসেনি কোনো সঠিক সমাধান। সিটি করপোরেশনও আর সময় বাড়াতে রাজি নয়। তাই আগামী শনিবার থেকে শুরু হবে খুঁটি অপসারণ। আর এই কাজ শুরু হলে ইন্টারনেটের ক্যাবলও কাটা পড়বে। 

এমন সিদ্ধান্তের পর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসেন আইএসপিএসের নেতৃবৃন্দ। শেষ বৈঠকে তারা রোড ডিভাইডারের খুঁটিতে তার রাখার অনুরোধ করেন। তবে সিটি করপোরেশন তাতেও সায় দেয়নি। 

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) রুহুল আলম বলেন, ‘পিলারে থাকবে সড়ক বাতি। এর উপরে বিদ্যুতের বিকল্প সংযোগ। এখানে ইন্টারনেট বা ক্যাবল সিস্টেমের তার থাকতে পারবে না। তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। টিএন্ডটি ফাইবার লাইন ব্যবহার করে নিজেদের খরচে সেটা আন্ডারগ্রাউন্ডে নিতে হবে।’

এ অবস্থায় রাস্তার নিচ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ক্যাবল নেওয়ার অনুমতি চেয়ে সিটি করপোরেশনে আবেদন করেছেন আইএসপিএস নেতৃবৃন্দ। এ জন্য তারা এক মাস সময়ও চেয়েছেন। এ বিষয়ে ব্রডব্যান্ড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান অ্যারোনেটের চেয়ারম্যান বাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা একটা সমন্বিত সিদ্ধান্তে এসেছি। ড্রেনের পাশে সড়কের ৬ ইঞ্চি নিচে পাইপ বসাব, এর ভেতর দিয়ে সবগুলো তার নিয়ে যাব। যদিও আমরা নিজ উদ্যোগে মাটির নিচে যেতে পারি না। তবে সিটি করপোরেশন অনুমতি দিলে আমরা নিজেদের খরচে সেটা করতে পারি। তবে এর জন্য আমাদের একটু সময় লাগবে। তাই আজ (বৃহস্পতিবার ২৫ জুন) আমরা এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছি।’

এতদিন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদেরও অনেক দোষ ছিল। তবে বিটিআরসির অনেক নিয়মের ফাঁক ফোকর আমরা ঠিক জানতাম না। তাছাড়া গত তিন মাস ধরে আমরা পুরোপুরি বন্দি ছিলাম। করোনার কারণে আমাদের শ্রমিকও সংকট ছিল। তাই এই সিদ্ধান্তের কথা আমরা জানাতে পারিনি।’   

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, তাদেরকে তো এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। বিকল্প অনেকগুলো ব্যবস্থাও দেখানো হয়েছে। কিন্তু তাঁরা সেগুলো গ্রহণ করেননি। তবে আর সময় বাড়ানো হবে না। বিকল্প ব্যবস্থা না করলে সব তার কেটে দেওয়া হবে। মূলত তারা সরকারের কর না দেওয়ার জন্য এসব করছেন।’

আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না দেখাতে পারলে সময় আর কোনোভাবেই বাড়ানো হবে না। শনিবার থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হবে। এতে কাটা যাবে ইন্টারনেটের তারগুলোও। তাঁরা এত সময় পেয়েও কোনো ব্যবস্থা করেননি। এখন তাদের জন্য তো আর আমরা খুঁটি শুধু শুধু বসিয়ে রাখতে পারি না।’

এনপি-১৫