উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
জুন ২৭, ২০২০
০১:২১ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ২৭, ২০২০
০১:৪৩ অপরাহ্ন
সিলেটের ওসমানীনগরে ক্রমেই বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৩৭ জন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে আক্রান্ত ২ জন মারা গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৭ দিন ধরে উপজেলায় নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। ফলে ৩ লক্ষাধিক মানুষ রয়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
এদিকে, প্রশাসনিক নজরদারি না থাকায় উপজেলার সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী বিকেল ৪টার মধ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ থাকলেও উপজেলা ভবন ও থানা কমপ্লেক্সের পার্শ্ববর্তী দোকানগুলোসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয়পাশে গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো গভীর রাত অবধি খোলা থাকতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন এসব বাজারে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটলেও ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানা বা মাস্কের ব্যবহার একেবারেই কম। বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার প্রবণতা নেই বললেই চলে। বিভিন্ন উপজেলায় এসব ব্যাপারে ঘন ঘন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও ওসমানীনগরে প্রশাসনিক কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। কোথাও নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা।
এমন পরিস্থিতিতে সংস্কার কাজের জন্য গত ১০ জুন থেকে বন্ধ রয়েছে উপজেলার একমাত্র নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র তাজপুরের কদমতলাস্থ ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। করোনার এই দুর্যোগকালীন সময়ে ওসমানীনগরে বিকল্প উপায়ে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা না করে হঠাৎ করে একটিমাত্র নমুনা সংগ্রহের সেন্টার বন্ধ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। দুর্যোগকালীন সময়ে সংস্কারের নামে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য নিয়ে এমন 'ছেলেখেলাকে' অনেকেই স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টদের কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন।
ওসমানীনগর উপজেলা গঠনের ৬ বছর পার হয়ে গেলেও ওসমানীনগরে এখন পর্যন্ত পদায়ন হয়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ, নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পার্শ্ববর্তী বালাগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওসমানীনগরের দায়িত্বে থাকলেও দায়িত্বপালনে সর্বত্র তার অবহেলা প্রতিফলিত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন, 'সংস্কার কাজের জন্য তাজপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গত ১০ জুন থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা বন্ধ রয়েছে। এই সংস্কার কাজের জন্য আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে যারা নমুনা প্রদান করতে ইচ্ছুক, তারা বালাগঞ্জ হাসপাতাল অথবা সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিতে হবে।'
জানা গেছে, ওসমানীনগরের তাজপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ২৫৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ২২৩ জনের প্রাপ্ত রিপোর্টে করোনা পজিটিভ হয়েছে ৩৩ জনের। শতকরা হিসেবে এটি প্রায় ১৫ শতাংশ। এদিকে গত ২০ জুন বালাগঞ্জ হাসপাতালে ওসমানীনগরের ৯ জন নমুনা প্রদান করলে গতকাল শুক্রবার (২৬ জুন) তাদের মধ্যে ৪ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, যা প্রায় ৪৪ শতাংশ।
এদিকে উপজেলায় বেড়ে চলেছে বর্ষাজনিত রোগ জ্বর-সর্দির প্রকোপ। এসব কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনার আতঙ্ক কাজ করলেও নমুনা প্রদান করতে পারছেন না তারা। উপজেলার একমাত্র নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় নমুনা প্রদানে যেতে হয় সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতাল বা বালাগঞ্জ হাসপাতালে। দূরত্বজনিত কারণ দেখিয়ে অনেকেই পরীক্ষার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া এমনিতেই সাধারণ মানুষের বৃহৎ অংশের মধ্যে নমুনা প্রদানে চরম অনিহা রয়েছে।
ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, 'স্বাস্থ্য কেন্দ্র সংস্কারের জন্য নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। তবে গত ২০ জুন থেকে তাজপুর সড়ক ও জনপথের রেস্ট হাউজে একজন চিকিৎসক নিয়মিত সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছেন।'
হাট-বাজারে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
ইউডি/আরআর-০৯