বিয়ানীবাজারে আক্রান্তদের পরিচয় গোপনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি


জুলাই ০৭, ২০২০
১১:১০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৭, ২০২০
১১:১০ পূর্বাহ্ন



বিয়ানীবাজারে আক্রান্তদের পরিচয় গোপনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

সিলেটের বিয়ানীবাজারে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন। গত রবিবার (৫ জুলাই) রাতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা জানালেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বশীলরা তাদের নাম পরিচয় গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নেন। হুট করে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছেন না ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ। এতে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

নাম গোপন রাখার বিষয়ে দায়িত্বশীলদের কারও কোনো স্বার্থ জড়িত আছে কি-না এ নিয়ে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কলেজ রোডের ব্যবসায়ী সুমন আহমদ বলেন, 'আমাদের মনে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে দায়িত্বশীলরা কোনো বিশেষ আক্রান্তের পরিচয় গোপন রাখতে হয়তো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।' তিনি সকল আক্রান্তের সংস্পর্শে আাসাদের নমুনা গ্রহণসহ সাধারণ আক্রান্তদের কর্মস্থল ও আবাসস্থল যেভাবে লকডাউন করা হয় সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, 'করোনায় আক্রান্তদের পরিচয় গোপন রাখলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে। আমাদের বেশিরভাগ মানুষ অসচেতন, যার কারণে যে আক্রান্ত হয়েছে সেও নিযে ঘরে না থেকে বেরিয়ে পড়বে।'

আরও অনেকে নতুন এ সিদ্ধান্তের কারণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের একজন চুনু মিয়া। তিনি বলেন, 'যে ধারাবাহিকতায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ফেসবুক পেজে বুলেটিন দিয়ে আসছিল, তাতে গত রবিবার ছন্দপতন ঘটেছে। আমার মনে হয়েছে এ বিষয়ে প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো ভূমিকা থাকতে পারে।'

রবিবার রাতে করোনা আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে আছেন বিজিবি ৫২ ব্যটালিয়নের ৩ সদস্য ও পৌর শহরের আলফা পলি ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. সাদিক আহমদ। তিনি ক্লিনিকে কর্মরত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও আবু ইসহাক আজাদ বলেন, ডা. সাদিক সিলেটের নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন। তার চিকিৎসা সেখানে হবে।

আক্রান্তদের মধ্যে বিশেষ কারও নাম-পরিচয় গোপন রাখতে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, 'উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা করোনা রোগীকে সামাজিকভাবে হেয় হওয়া থেকে রক্ষা করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকেই আমাদের ম্যাসেজ দিয়ে সামাজিকভাবে হেনস্তা হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাছাড়া একজন চিকিৎসক হিসেবে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।' এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'জাতীয় পর্যায় থেকে নয়, স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসনের দায়িত্বশীল সবদিক বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

করোনা বিশ্বমহামারি। এটি কোনো নিষিদ্ধ রোগ নয়। তাহলে স্থানীয় প্রশাসন আক্রান্তের পরিচয় গোপন রাখার সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছে এ নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। প্রভাষক আব্দুস সামাদ বলেন, 'এ ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে আক্রান্তদের আরও বেশি করে হেয় করা হবে। কারণ গোপন বিষয়টি জানার ব্যাপারে মানুষেয় আগ্রহ বেশি থাকবে। কৌতুহল থেকে মানুষ আক্রান্তদের পরিচয় বের করবে। গোপন কিছু থাকে না। কিছুই গোপন রাখা যায় না।'

গণমাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা জানালেও বরাবরের মতো পরিচয় জানাননি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও আবু ইসহাক আজাদ। তিনি পরিচয় গোপন রাখার বিষয়ে দায়িত্বশীলদের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুব বলেন, 'যারা সামাজিক হেনস্তার শিকার হতে পারেন, শুধু তাদের পরিচয় গোপন রাখার বিষয়ে বলেছি। ঢালাওভাবে সবার পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টি বলা হয়নি।' তিনি এ বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

 

এসএ/আরআর-০৩