বিশ্বনাথে যৌতুক না দেওয়ায় শিশুসহ ঘরছাড়া গৃহবধূ

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি


জুলাই ১৪, ২০২০
০৭:৪৯ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৪, ২০২০
০৭:৫১ অপরাহ্ন



বিশ্বনাথে যৌতুক না দেওয়ায় শিশুসহ ঘরছাড়া গৃহবধূ

সিলেটের বিশ্বনাথে যৌতুক হিসেবে দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় সাফিয়া বেগম (২৭) নামের এক গৃহবধূ ৯ দিনের শিশু নিয়ে ঘরছাড়া অবস্থায় রয়েছেন। তিনি উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের বাইশঘর (বর্তমান অবস্থান লামা লহরী) গ্রামের নেফুর আলীর স্ত্রী।

জানা গেছে, গত শনিবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় নবজাতক শিশুকে দেখতে গৃহবধূর ভাই ও মা বাড়িতে গেলে যৌতুকের টাকার জন্য তাদের ওপর হামলা চালায় যৌতুকলোভী নেফুর আলীর লোকজন। এ সময় গৃহবধূর আত্মীয়-স্বজনকে জিম্মি করে রাখা ও মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে রাত ১০টায় গৃহবধূর অন্য স্বজনরা আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করেন। বর্তমানে গৃহবধূ তার পিতার বাড়িতে নবজাতক শিশু নিয়ে বসবাস করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতবছরের ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার বাইশঘর গ্রামের মৃত বুজুর আলী ছেলে নেফুর আলীর সঙ্গে একই উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের মৃত সুনা উল্লাহ'র মেয়ে সাফিয়া বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে যৌতুকের দাবিতে নববধূর উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। নববধূ বিভিন্ন সময়ে পিতার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিলেও আরও টাকা এনে দিতে চাপ প্রয়োগ করে তার স্বামীর পরিবার। তাদের কথামতো টাকা না এনে দিলে কারণে-অকারণে উঠতে-বসতে নির্যাতন চালানো হতো নববধূর উপর। এ নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মুরুব্বিসহ একাধিকবার আপস মীমাংসাও হয়। এভাবে চলতে তাকে সাফিয়া বেগমের সংসার।

গত ৫ জুলাই সাফিয়া এক কন্যাসন্তান জন্ম দেন। নবজাতক শিশুকে দেখতে গত শনিবার সাফিয়ার বাড়িতে যান তার বড় ভাই গেদু মিয়া ও মা ফাতেমা বেগম। এ সময় নেফুর আলী তাদের কাছে সন্তান জন্মকালীন সময়ের ব্যয়ভার হিসেবে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। ‘টাকার বিষয়ে এখন কিছু বলা যাবে না’- এ কথা বলামাত্রই নেফুর আলী, তার ভাই জুনেদ, লুৎফুর ও তাদের ভাগ্নে ফয়ছলসহ নেফুর আলীর লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের মারধর করে আটকে রাখা হয়। পরে স্থানীয় যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান সেবুল ও সাফিয়া বেগমের গ্রামের তারেক আহমদ দুলনসহ মুরুব্বিরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

নির্যাতিতা গৃহবধূ সাফিয়া বেগম বলেন, 'অকথ্য নির্যাতন সহ্য করে ১ বছর পার করেছি স্বামীর সংসারে। ভেবেছিলাম সন্তানের মুখ দেখে হয়তো পরিবর্তন আসবে স্বামীর। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো শিশুসন্তান জন্ম নেওয়ার পরও আমার পিতার বাড়ির লোকজনের কাছে টাকা দাবি করে সে। যৌতুকের জন্যই সেদিন মা-ভাইসহ আমাকে মারধর করে তারা। গত শনিবার রাতে আমি পিত্রালয়ে চলে আসি। বর্তমানে শিশুকে নিয়ে পিতার বাড়িতে অবস্থান করছি।'

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাফিয়া বেগমের স্বামী নেফুর আলী এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, 'আমি ব্যস্ত আছি, কথা বলতে পারব না।'

এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম মুসা বলেন, 'এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ এখনও আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

 

এমএ/আরআর-০৪