ভূমি দখল করে চলছে ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা

শামীম আহমদ, বালাগঞ্জ


জুলাই ২৩, ২০২০
০৩:১১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৩, ২০২০
০৩:১১ অপরাহ্ন



ভূমি দখল করে চলছে ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা
সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়ক

সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কের দুইপাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ভূমিতে অবৈধভাবে নানা ধরণের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তৈরি, ঘরবাড়ি নির্মাণ ও বহুতল ভবন গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা চলছে। সমাজের প্রভাবশালীরা পেশিশক্তির বলে এবং রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহার করে সড়কের জায়গা দখল করে এসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ফলে রাস্তা সরু হয়ে যান চলাচলে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।

সড়কের উপর নির্মিত এসব স্থাপনা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। এর পরও সওজ কর্মকর্তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী কোনো সড়ক বা মহাসড়কের ৩০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সে আইন যে সকল ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না, তা বোঝা যায় সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কে সওজ জায়গায় অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা দেখে। এসব অবৈধ স্থাপনা রাতারাতি গড়ে ওঠে না, সওজ'র লোকজনের জ্ঞাতসারে তাদের চোখের সামনেই সেগুলো বহুদিন ধরে গড়ে উঠছে- এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণকৃত ভূমির উপর বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। এই সড়কের বালাগঞ্জ উপজেলা অংশে বালাগঞ্জ ইউনিয়নের গহরমলি এলাকায় সড়কের দুইপাশে বিশাল এলাকাজুড়ে ভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে বাজার। সেই বাজারে পাকা ও টিনশেডের তৈরি প্রায় শতাধিক দোকানপাট রয়েছে। কথিত ‘আয়না মার্কেট’ নামে ওই বাজারের পরিচিতি রয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই এলাকার আয়না মিয়া নামের এক ব্যক্তি বিগত কয়েকবছর আগে প্রথমে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভূমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেন। এরপর দোকানপাট বানানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার নিষেধ করা স্বত্ত্বেও নিষেধ অমান্য করে রাতের আঁধারে নির্মাণ করা হয় এসব দোকানপাট। সরকারি ভূমিতে দোকানপাট নির্মাণ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি এই বাজারের নামকরণ নিয়ে চলছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। আয়না মিয়ার বিরোধীরা ‘সাতগ্রাম পয়েন্ট’ বা ‘মামুন মার্কেট’ নামে এই বাজারের নাম প্রচার করে আসছেন। 

এছাড়া এই সড়কের বালাগঞ্জ উপজেলা অংশের আরও একাধিক স্থানে সরকারি ভূমি দখল করে দালান, আধাপাকা, দোচালা-চৌচালা টিনের দোকান ও মার্কেট নির্মাণ করাসহ অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা রয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে সড়ক দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। বর্তমানে এই সড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যেভাবে সড়কের ভূমি দখল করা হচ্ছে, তাতে ভাবিষ্যতে যাত্রীবাহী বাস ও ভারী যানবাহন চালু হলে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সওজ'র কতিপয় লোকজন অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ হাতিয়ে নিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা থেকে বিরত থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দোকান মালিক বলেন, ঘর তোলার সময় সওজ'র লোক এসেছিল। তাদের ম্যানেজ করেই ঘর তোলা হয়েছে। আর এই 'ম্যানেজ' করার ফলেই সরকারি জায়গা-জমিতে দেদারসে গড়ে উঠছে এসব অবৈধ স্থাপনা।

এদিকে গত ১২ জুলাই সওজ বিশ্বনাথ সড়ক উপ-বিভাগ সিলেট এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নূরুল মজিদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি পত্র আয়না মার্কেটের সকল ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। ওই পত্রে বলা হয়েছে, ‘সিলেট (তেলিখাল)-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ (জেড-২০১৩) সড়কের ২২তম কিলোমিটারে আবস্থিত আয়না মার্কেট সওজের আওতাধীন ভূমির উপর বেআইনিভাবে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা। ৭ দিনের মধ্যে নিজ দায়িত্বে এটি অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কিন্ত ৭ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও নিজ দায়িত্বে কাউকে স্থাপনা অপসারণ করতে দেখা যায়নি। এখন সওজ কতৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নেবেন না কি চিঠি দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ- সেটি এখন দেখার বিষয়। 

 

এসএ/আরআর-২০