পূর্ণাঙ্গ আন্তজার্তিক বিমানবন্দর হচ্ছে ওসমানী

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ১২, ২০২০
০২:০৯ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১২, ২০২০
০৩:৫৯ অপরাহ্ন



পূর্ণাঙ্গ আন্তজার্তিক বিমানবন্দর হচ্ছে ওসমানী
#আগামী মাসে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা #তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে কাজ #খরচ হবে ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা

পূর্ণাঙ্গ আন্তজার্তিক বিমানবন্দর হচ্ছে সিলেট ওসমানী আন্তজার্তিক বিমানবন্দর। প্রায় ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা ব্যায়ে এই বিমানবন্দর উন্নয়নও সম্প্রসারণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কার্যাদেশ পেয়ে পৃথিবীর অষ্টম বৃহৎ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের পেইচিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি) গ্রাউন্ডওয়ার্ক শুরু করেছে। কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা সিলেট ঘুরেও গেছেন। আগামী সেপ্টম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরটির সংস্কার ও সম্প্রসারণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তিন বছরের মধ্যে দেশের তৃতীয় বৃহৎ এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরো নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিলেটে লন্ডন থেকে আসা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ল্যান্ড করতে পারলেও চারশতাধিক আসনের সুপরিসর বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও পূর্ণ আসনের যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করতে পারছে না। রানওয়ের তেমন সক্ষমতা নেই। যদিও লন্ডন থেকে এ পরিমাণ যাত্রী ও জ্বালানি নিয়ে ওই উড়োজাহাজ রওনা হয়ে সিলেটে অবতরণ করতে পারছে। এটা সম্ভব হচ্ছে লন্ডন থেকে যখন উড়োজাহাজটি সিলেটে আসে ততক্ষণে সব জ্বালানি শেষ, ঢাকায় ফেরার মতো লোডে থাকে। নতুন প্রকল্পের আওতায় এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুয়েলিং সিস্টেম, অর্থাৎ সুবিশাল জেট-১ ফুয়েল ডিপো।

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ সিলেট মিররকে বলেন, এই প্রকল্পের কোনও কাজই এখনও শুরু হয়নি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারনে ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা যায়নি। 

বেসামরিক বিমানচলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রকৌশল শাখা জানায়, বেবিচকের বড় সব প্রকল্পই বড় বাধার মুখে পড়ছে। সিলেট বিমানবন্দর কাজের দরপত্র নিয়েও বঞ্চিত ঠিকাদাররা নানা অভিযোগ, অজুহাত তুলে প্রকল্পটিকে বাধার মুখে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনায় আজকের অবস্থানে আসে। ঠিকাদাররা কাজ না পেয়ে প্রভাব খাটিয়ে এভাবে বিলম্ব ও অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিচ্ছেন এসব প্রকল্প।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন বোর্ডিং ব্রিজ, ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিং সিস্টেম, ফ্লাইট ইনফরমেশন ডিসপ্লে সিস্টেমসহ অন্যান্য অত্যাধুনিক টার্মিনাল বিল্ডিং সম্পর্কিত সব ধরনের যন্ত্রপাতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে বিমানবন্দরের যাত্রী সেবার মান বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। বিমানবন্দর টার্মিনালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এই প্রকল্পের আওতায় পৃথক সাব-স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম এবং স্বাচ্ছন্দ্যে টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সিএএবি কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। স¤প্রতি এটি বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্র ক্রয় করে। এরমধ্যে ছিল বিশ্বমানের ইডিএস সিস্টেম। কার্গোতে ইডিএস ও আরএথ্রি এরিয়া সংযোজনের মাধ্যমে কার্গো স্ক্যানিং আরও নিখুঁত এবং সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত করা হয়। যাত্রী সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে লিফট এক্সকেলেটর, এয়ারপোর্ট সাইনেজ ও নজরদারি জোরদার করার জন্য সিসিটিভি ব্যবস্থা রাখাহয়েছে। পাশাপাশি উড়োজাহাজের জেট-১ জ্বালানি সরবরাহের জন্য অত্যাধুনিক ফুয়েল হাইড্রান্টসিস্টেম স্থাপন করা হবে। এতে সব উড়োজাহাজ খুব সহজে ও নিরাপদে বিমানবন্দর থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারবে। তাছাড়া বিমানবন্দর টার্মিনাল ব্যবহারকারী যাত্রীদের নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও কার্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উড়োজাহাজের পাইলট এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ও নিরাপদ বিমান উড্ডয়নের জন্য সম্পূর্ণ ভয়েস কন্ট্রোল কমিউনিকেশন্স সিস্টেম ও ভয়েস রেকর্ডিং রাডার সিস্টেম স্থাপন করা হবে।

বেবিচক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক জানান, বিইউসিজি তিন দশক ধরে সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ করে আসছে। সব কিছু বিবেচনায় সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের কাজের জন্য বিইউসিজিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন-এর সিনিয়র সচিব মহিবুল হক বলেন, এখন শোকের মাস। নইলে এ মাসেই হয়তো শুভ উদ্বোধন করা যেত। তারপরও আমরা আগামী মাসের শুরুতে যাতে উদ্বোধন করা যায় সেভাবে চিঠি পাঠানো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এটা উদ্বোধন করবেন বলে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বেসামরিক বিমানচলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জানান, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার বিমানবন্দরের সংস্কার, স¤প্রসারণ ও উন্নয়নে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ সমাপ্ত করার তাগিদ দিয়েছেন। এর মধ্যে থার্ড টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয় প্রকল্প হিসেবে সিলেট ওসমানীকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক রূপ দিতে বিইউসিজিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা ঢাকায় এসে নকশার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করছেন। 

এনসি/বিএ-১০