ধলই চা-বাগানে নারী শ্রমিক লাঞ্ছিত, ব্যবস্থাপক ও এজিএম অবরুদ্ধ

কমলগঞ্জ সংবাদদাতা


আগস্ট ১৯, ২০২০
১১:১৮ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৯, ২০২০
১১:১৮ অপরাহ্ন



ধলই চা-বাগানে নারী শ্রমিক লাঞ্ছিত, ব্যবস্থাপক ও এজিএম অবরুদ্ধ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন ধলই চা-বাগানে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ ২২ দিন পর আজ বুধবার (১৯ আগস্ট) বাগান চালু হওয়ার কথা থাকলেও দুই নারী শ্রমিককে লাঞ্ছিত করা, বাগানের ব্যবস্থাপক পরিবর্তন না হওয়া ও চা-বাগান চালু নোটিশে শ্রমিকদের দায়ী করা হলে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

বুধবার সকাল ১০টায় কোম্পানির এজিএম বাগানে প্রবেশ করতে চাইলে শ্রমিকরা আপত্তি জানান। এ সময় দুই নারী শ্রমিককে লাঞ্ছিত করায় গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করে এজিএম খালেদ খানকে টানা ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন শ্রমিকরা। পরে প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে ব্যবস্থাপক ও এজিএমকে পুলিশি সহায়তায় চা-বাগান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধলই চা-বাগানের ফটক বন্ধ করে উত্তেজিত শতাধিক নারী শ্রমিক বাগান অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের পেছনে পুরুষ শ্রমিকরা অবস্থান নেন। বুধবার চা-বাগান চালুর নোটিশ দেওয়া হলেও চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে প্রত্যাহার না করে ম্যানেজমেন্ট নোটিশের শুরুতেই শ্রমিকদের বেআইনি আন্দোলনের ফলে বন্ধ হওয়ার কথা তুলে ধরায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হন।

বুধবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা বাগানের অফিসের সম্মুখে জড়ো হন। তারা ব্যবস্থাপকের অপসারণ দাবি করেন। সকাল ১০টায় কোম্পানির এজিএম খালেদ খান গাড়ি নিয়ে বাগানে প্রবেশ করতে চান। এ সময় শ্রমিকরা তাকে বাধা দিলে নারী শ্রমিক খোদেজা বেগম (৫৫) ও ফাতেমা বেগমকে (৫০) টানা-হেঁচড়া করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করা হয়। পরে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চা-বাগানের এজিএম'র গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করেন এবং এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে দুপুর ১২টায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু সরেজমিনে গিয়ে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে বেলা ২টায় শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেলে কমলগঞ্জ থানার পুলিশের সহায়তায় এজিএম ও ব্যবস্থাপককে বাগান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

চা বাগানের নারী শ্রমিক সবিতা মাদ্রাজী, রীনা রিকমুন, আচামা মাদ্রাজী, দ্বীনি ভূমি ও স্বপ্না রিকমন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২২ দিন পর এজিএম বাগানে এসেই নারীদের গায়ে হাত তুলেছেন। তাদের টানা-হেঁচড়া করে গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছেন। এটি কোনোমতেই সভ্য আচরণ নয়।

তারা আরও বলেন, 'আমরা এখনও ধৈর্য ধরে আছি। আমরা কোনো খারাপ আচরণ করিনি। তারা আমাদের মা-বোনদের লাঞ্ছিত করেছে।'

মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, 'উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির নির্দেশনায় আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের বুঝিয়ে এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে নিরাপদে চা-বাগান ত্যাগের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।

কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশ বলেন, 'চা শ্রমিকদের বোঝানোর পর তারা নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করায় এজিএম ও ব্যবস্থাপককে ধলই চা-বাগান থেকে বের করা হয়েছে। চা-বাগান কোম্পানির পক্ষ থেকে জিপ গাড়ি ভাংচুরের মৌখিক অভিযোগ ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে নারী চা শ্রমিক লাঞ্ছিত হওয়ার মৌখিক অভিযোগ থাকলেও বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেননি।

এ ব্যাপারে ধলই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ও এজিএম খালেদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

প্রসঙ্গত, টানা ২১ দিন ধলই চা-বাগান বন্ধ থাকার পর গত সোমবার (১৭ আগস্ট) বিকেল ৪টায় মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে বৈঠকের সিদ্ধান্তে গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় দেওয়া নোটিশ প্রত্যাহার করে বুধবার থেকে ধলই চা-বাগান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

 

আরআর-০৭