হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ : ছয় মাসেও মিলেনি কাজের টাকা

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর


আগস্ট ২১, ২০২০
১০:১২ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২১, ২০২০
১০:১২ অপরাহ্ন



হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ : ছয় মাসেও মিলেনি কাজের টাকা

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাস পরও পাওনা টাকা পাচ্ছেন না প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি, সদস্য সচিব ও সদস্যরা। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছেন। পাওনা টাকার জন্য বার বার ধরনা দিয়েও কোনো সদুত্তর মিলছে না।

উপজেলার মইয়ার হাওরের ২৬ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব নুরুল হক জানান, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের চাপে ধার-দেনা করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে  প্রকল্পের কাজ শেষ করেন তারা। আট লাখ টাকার প্রকল্পের মধ্যে বিল পেয়েছেন মাত্র চার লাখ বিশ হাজার টাকা। ছয় মাসেও বাকি টাকা না পাওয়ায় তিনি বেকায়দায় আছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারী প্রথায় যখন ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ হতো, তখন জুন মাসে ঠিকাদাররা বিল পেতেন। এখন ফসল উত্তোলনের পরও ছয় মাসে বিল পাওয়া যায় না। এছাড়াও নানা অজুহাতে বিল কর্তন করা হচ্ছে। 

নলুয়ার হাওরের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কৃষক আল আমীন বলেন, 'উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারক কমিটির চাপে বাধ্য হয়ে ধার-দেনা করে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করি। কথা ছিল ফসল উত্তোলনের পর এপ্রিল মাসে চূড়ান্ত বিল পাব। কিন্তু বিল না পাওয়ার পাওনাদারদের চাপে বাড়িতে থাকতে পারছি না, পালিয়ে বেড়াচ্ছি।'

শুধু নুরুল হক ও আল আমীন নন, তাদের মতো অবস্থা উপজেলার ৪৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি, সদস্য সচিব ও সদস্যদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর উপজেলা কার্যালয় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন জানান, জেলার অন্যতম বৃহৎ হাওর নলুয়ার হাওরসহ উপজেলার ছোট বড় ১৫ হাওরে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। উপজেলাবাসী একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। তাই বোরো ফসল রক্ষায় ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দে ৪৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে গতবছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে   ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন করা হয়। এখন পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ৫৮ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। 

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব বলেন, 'ঠিকাদারী প্রথার চেয়ে পিআইসি প্রথায় বাঁধ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন মানসন্মত ও টেকসই হয়। কারণ বাঁধের কাজের সঙ্গে জড়িতরা সবাই প্রান্তিক কৃষক ও জনপ্রতিনিধি। তাদের প্রায় সবার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। ধার-দেনা করে প্রকল্পের কাজ শেষ করলেও বিল না পাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন তারা।'

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার তদারক কমিটির সভাপতি (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, 'মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় বিল পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা যোগাযোগ করছি।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, 'আশা করছি পিআইসিরা আগামী মাসে চূড়ান্ত বিল পাবেন।'

 

এএ/আরআর-০৭