সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
০১:৩২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
০১:৩২ পূর্বাহ্ন
ফুলের নাম শিউলি। অনেকে শেফালি নামেও চেনেন। সন্ধ্যার পর পরই ফুলটি প্রস্ফুটিত হয়ে সারারাত আশপাশ সুবাসিত করে। রাতের আঁধারে নিজের রূপ পুরোটা ছড়িয়ে বাতাসে বিলিয়ে দেয় নেশা লাগানো সুবাস। আর ভোরের আলো ফুটলেই বেদনা বুকে নিয়ে ঝরে পড়ে সাদা-কমলা গালিচা তৈরি করে শিউলি।
শিউলি ফুলের সৌন্দর্য আর মিষ্টি ঘ্রাণ ব্যক্তিগত বাগান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্মুক্ত স্থান ও বসতবাড়ির আঙিনা মাতিয়ে রাখে। সকালে শিশিরমাখা শিউলি ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। শিউলি মূলত শরতের ফুল। তবে শিউলির শোভা ও সৌরভ থেকে হেমন্তও বঞ্চিত নয়।
দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, উত্তরে নেপাল অঞ্চল পর্যন্ত শিউলি ফুলের দেখা পাওয়া যায়। তবে এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশে। শিউলি ফুলের ইংরেজি নাম Night-flowering Jasmine, পরিবার Oleaceae, তাত্ত্বিক নাম Nyctanthes arbor-tristis। লাতিন শব্দ Nyctanthes এর মানে হচ্ছে ‘বিষন্ন গাছ’। সন্ধ্যায় ফোটা আর সকালে ঝরা ফুলের মাঝে বিষন্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাই এরকম নামকরণের কারণ বলে ধারণা করা হয়। দিনের আলোতে শিউলি ফুল উজ্জ্বলতা হারায়। কখনও কখনও একে Tree of sorrow বা দুঃখের বৃক্ষও বলা হয়।
শিউলি মূলত শরৎ ঋতুর ফুল। তবে বছরের অন্য ঋতুতেও গাছে ফুল ফুটতে দেখা যায়। ফুল ছোট, সুগন্ধযুক্ত। কোমল এ ফুলে ৬টি পাপড়ি থাকে। পাপড়ির রঙ সাদা হলেও বোঁটার অংশ কমলা রঙের এবং পাপড়ির সংযোগস্থল বৃত্তাকার কমলা রঙে বিস্তৃত থাকে।
'রাতের রাণী' বলে খ্যাত শিউলি ফুল রাতের বেলা ফোটে এবং সকালে ঝরে পড়ে। ভোরে শিউলি গাছের তলা সাদা ফুলে ফুলে ভরে যায়। গ্রামাঞ্চলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরে। শিউলি ফুলের সৌন্দর্য আর মিষ্টি ঘ্রাণে বাগান, উন্মুক্ত স্থান ও বসতবাড়ির আঙিনা মেতে ওঠে। সকালে শিশির মাখা শিউলি ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। শরতের পর শিউলির শোভা ও সৌরভ হেমন্তেও কিছুটা থেকে যায়।
মৌলভীবাজার শহরের অনেকের বাসাবাড়িতে, রাস্তাঘাটে দেখা যায় এই শিউলি ফুলের গাছ। পাতায় ভরা গাছ যতটা না সুন্দর লাগে দেখতে, তার চেয়েও অনেক বেশি নজর কাড়ে গাছে যখন ফুল ফোটে। শহরের বনশ্রী এলাকায় তেমনই এক ফুল ভরা শিউলি গাছের দেখা মেলে। সকালে শত শত শিউলি ফুলে ছেয়ে থাকে গাছের তলা। ভোরে অনেকেই আসেন এই ফুলের সুবাস নিতে। কেউ ফুলগুলো কুড়িয়ে দুই হাতে করে বুক ভরে সুগন্ধ নেন। আবার কেউ এগুলো কুড়িয়ে বাসায় নিয়ে যান। কেউ বা আবার ফুলের ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকেন, সুন্দর মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করেন।
কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব রাহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাশেই আমার বাসা। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর একটু হাঁটাহাঁটি করি। সকালে শিউলি গাছের নিচে এসে দাঁড়াই। মনটা ভালো হয়ে যায়। এই ফুল রাতে ফোটে আর সকালে তা ঝরে যায়। আবার কিছু সময় পর আর সেই ফুলের সৌরভ থাকে না। তদ্রুপ মানুষের গৌরবও চিরকাল স্থায়ী থাকবে না। প্রকৃতি আমাদের সবসময় শেখায়।’
এসএইচ/আরআর-০৬