ভেলার উপর বীজতলায় স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা

সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার


অক্টোবর ০২, ২০২০
০৩:২৮ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০২, ২০২০
০৩:৩১ অপরাহ্ন



ভেলার উপর বীজতলায় স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা

প্রথমে কয়েকটি কলাগাছ একসঙ্গে বেঁধে ভেলা তৈরি করতে হয়। তারপর ভেলার উপর কচুরিপানা সাজিয়ে তার উপর দুই থেকে তিন ইঞ্চি পরিমাণ মাটি দিলেই বীজতলা তৈরি হয়ে যায়। এভাবেই মৌলভীবাজারের বেশ কয়েকটি উপজেলার কৃষকরা তাদের স্বপ্ন বুনছেন।

 

জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা নিচু অঞ্চলে হওয়ায় বন্যা ও জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। এ থেকে রক্ষা পেতে ভাসমান বীজতলা তৈরি করে চারা রোপণ করছেন মৌলভীবাজারের কৃষকরা। ভাসমান পদ্ধতিতে জেলার সদর উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলার কৃষক এই বীজতলায় ধান চাষ করেছেন। কৃষকরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের খরচও কম। এক একটি ভেলা অন্তত ১০ মিটার হলে ভালো। নদীতে তৈরি করা হলে ভেলাটি যেন স্রোতে ভেসে না যায়, এজন্য তা চারদিক দিয়ে খুঁটি দিয়ে সেটির সঙ্গে বেঁধে রাখতে হবে।

 

মৌলভীবাজার কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, ভাসমান এই বীজতলা তৈরি করে শুরুতেই ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। এবার পুরো জেলায় ১৬০টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে সদরে ২৪টি, শ্রীমঙ্গলে ২৪টি, কমলগঞ্জে ২০টি, রাজনগরে ২৪টি, কুলাউড়ায় ২৪টি, বড়লেখায় ২৪টি ও জুড়ীতে ২০টি ভাসমান বীজতলা রয়েছে। আমন মৌসুমের বিআর-২২ জাতটি ভাসমান বীজতলায় রোপণ করা হয়। এর বাইরে কমিউনিটি বীজতলা রয়েছে রাজনগর, কমলগঞ্জ ও সদর উপজেলায়। কমিউনিটি পদ্ধতিতে একজন চাষিকে ১ বিঘা সমপরিমাণ বীজতলা দেওয়া হয়। আর ১৬০টি বীজতলার মধ্যে ৪০ জন কৃষককে ৪টি করে বেড দেওয়া হয়েছে। একটি বেডের আয়তন হতে হয় ১.২৫ মিটার।

 

স্থানীয় বুদ্ধিমন্তপুর গ্রামের কৃষক মিনাকত মিয়া জানান, বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছরই তার বীজতলা নষ্ট হয়ে যেত। এভাবে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কারণে ঠিক সময়ে জমিতে চারা রোপণ করতে পারতেন না তারা। সেই সঙ্গে একই বীজের জন্য দুইবার বীজতলা তৈরিতে খরচও বেশি পড়ে যেত। তবে এবার কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৮টি ভেলায় ভাসমান বীজতলা তৈরি করে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। এ পদ্ধতিতে কম খরচে সময়মতো ধান চাষাবাদ করতে পেরেছেন তিনি।

 

একই গ্রামের আরেক কৃষক রাজু মিয়া বলেন, 'ভেলায় ভাসমান বীজতলা করতে গিয়ে আমার মাত্র ১ হাজার ৪শ টাকা খরচ হয়েছে, যেখানে জমিতে এই পরিমাণ বীজতলা তৈরি করতে ৩ হাজার টাকার উপরে খরচ হতো। আর চারা তোলার পর বীজতলা তৈরি করা ওই ভেলায় আমি শাকসবজির চাষ করব।'

 

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী সিলেট মিররকে বলেন, 'প্রতিবছর বন্যা আর অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মৌলভীবাজার জেলার বেশিরভাগ চাষি সঠিক সময়ে চাষাবাদ করতে পারেন না। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবার ভাসমান বীজতলা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। মৌলভীবাজারে প্রাথমিক পর্যায়ে এ উদ্যোগের সফলতা পাওয়া গেছে।'

 

এসএইচ/আরআর-০১