বড়লেখা প্রতিনিধি
অক্টোবর ১৭, ২০২০
০৯:১৯ অপরাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ১৮, ২০২০
১২:৩৪ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় চাঞ্চল্যকর কলেজছাত্র প্রান্ত চন্দ্র দাস (১৮) হত্যা মামলায় দুইজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযুক্তরা হলেন- নিহত কলেজছাত্র প্রান্ত দাসের পিসতুতো ভাই সুমন দাস ও তার স্ত্রী নিভা রানী দাস।
সম্প্রতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীর অভিযোগপত্র জমা দেন। আজ শনিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি গোপাল দত্ত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মামলার প্রধান আসামি সুমন দাসের স্ত্রী নিভা রানী শিলার সঙ্গে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার কারণে সুমন প্রান্তকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ঘটনাটিকে আড়াল করতে আসামি সুমন দাস তার স্ত্রী নিভা রানী দাসের সহায়তায় তাদের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরের জানালার গ্রিলে মুখ বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে প্রান্তকে দাঁড় করিয়ে রাখেন।
এতে আরও বলা হয়, মামলার এজাহারনামীয় আসামি নিরেশ দাস, নিকেশ দাস, সুকুমার দাস, সুভন দাস, চন্দন দাস ও ববিতা রানী দাসের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এদিকে অভিযোগপত্রের বিষয়ে কোনো আপত্তি আছে কি না জানতে চাইলে মামলার বাদী নিহত প্রান্ত দাসের বড়ভাই শুভ দাস শনিবার সকালে বলেন, 'অভিযোগপত্রের বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কারণ এর আগে পিবিআইয়ের জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে মূল আসামিদের বাদ দেওয়ায় আমরা নারাজি আবেদন করেছিলাম। এর প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের এএসপিকে (কুলাউড়া সার্কেল) নির্দেশ দেন। কিন্তু এখন দেখছি আদালতে পিবিআই ও পুলিশের (এএসপির) জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে অনেকটা মিল রয়েছে। অর্থাৎ পুলিশ (এএসপির) এখন যে দু'জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছে, পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তাও ওই দু'জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছিলেন। আমাদের কোনো আপত্তি না থাকায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। এখন আমাদের চাওয়া এই মামলার বিচার কাজ যেন দ্রুত শেষ হয়।'
বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি গোপাল দত্ত বলেন, 'প্রান্ত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুইজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। বাদী ও তার মায়ের কোনো আপত্তি না থাকায় আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন। মামলাটি বিচার কাজের জন্য জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গতবছরের ৩১ অক্টোবর বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের মিহারী নয়াগ্রামের পিসির (ফুপু) বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরের জানালার গ্রিলে মুখ বাঁধা ও দাঁড় করানো অবস্থায় কলেজছাত্র প্রান্ত দাসের লাশ পাওয়া যায়। প্রান্ত উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামের সনত দাসের ছেলে। তিনি পিসির বাড়িতে থেকে কলেজে লেখাপড়া করতেন। এ ঘটনায় থানায় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা রুজু হলেও পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে হত্যার প্রমাণ পাওয়ায় নিহত প্রান্ত দাসের বড়ভাই শুভ দাস ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ১২ নভেম্বর পুলিশ প্রধান আসামি সুমন চন্দ্র দাসসহ ৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরে প্রান্ত'র মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য আদালতে অনুমতিক্রমে তাদের ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে প্রধান আসামি সুমন চন্দ্র দাস বড়লেখা সিনিয়ির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (ম্যাজিস্ট্রেট) হরিদাস কুমারের খাস কামরায় প্রান্ত হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে এ হত্যা মামলাটি পিবিআইতে (পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন) স্থানান্তরিত হয়। গত ১৮ জুন পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শিবিরুল ইসলাম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। দাখিলকৃত চার্জশিটে মূল আসামিদের বাদ দেওয়ায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর এ নারাজি পিটিশনের শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীরকে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সম্প্রতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীর প্রান্ত'র পিসতুতো দাদা সুমন দাস ও বৌদি নিভা রানী দাসের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
এজে/আরআর-০২