বড়লেখায় কলেজছাত্র সাইফুরকে শ্বাসরোধে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

বড়লেখা প্রতিনিধি


অক্টোবর ২৭, ২০২০
০৬:০৭ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২৭, ২০২০
০৭:১৮ অপরাহ্ন



বড়লেখায় কলেজছাত্র সাইফুরকে শ্বাসরোধে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

মৌলভীবাজারে বড়লেখায় কলেজছাত্র সাইফুরকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বড়লেখা থানার পুলিশ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে আজ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।   

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তাদের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের আনছার আলীর ছেলে বাবলু হোসেন (২৫), জবলু হোসেন (২৪) ও কামাল হোসেন (২০)।  

বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ আজ মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘কলেজ শিক্ষার্থী মো. সাইফুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার দায়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আজ আদালতে সোপর্দ করা হবে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাইফুরের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গতকাল (সোমবার) আমরা হাতে পেয়েছি। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাইফুরের ছোটভাই থানায় মামলা করেছেন।’

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই বিকেলে বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামে নিজ বাড়ির মেঝেতে শোয়ানো অবস্থায় সাইফুরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের ছোবলে সাইফুরের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হলেও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন থাকায় তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন সাইফুরের স্বজনরা। নিহত সাইফুর রহমান উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে। তিনি সিলেট পলিটেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাইফুর রহমান পরিবারের সঙ্গে সিলেটে বসবাস করতেন। কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে গত ৩০ জুলাই রাতে তিনি একাই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বর্ণি ইউনিয়নের মুদৎপুর গ্রামে মামার বাড়িতে উঠেন। রাত ১১টার দিকে একটি নম্বর থেকে ফোন পেয়ে মামার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরদিন ৩১ জুলাই বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘরের দরজা বন্ধ থাকতে দেখে প্রতিবেশীরা তাকে ডাকাডাকি করেন, ৎবে তার কোনো সাড়া-শব্দ পাননি। পরে তারা দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখেন সাইফুর রহমানের নিথর দেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে রাতে পুলিশ সেখানে যায়। ওইসময় তার কোমরের পাশে সাপে কাটার মতো দাগ দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা ছিল, রাতের যেকোনো একসময় ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের ছোবলে তার মৃত্যু হয়েছে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সাপের ছোবলে তার মৃত্যু হয়নি। এছাড়া তার শরীরের কয়েক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। 

নিহত সাইফুর রহমানের ছোটভাই মামলার বাদী এমদাদুর রহমান বলেন, ‘সাপের ছোবলে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়নি। হত্যার ঘটনা আড়াল করতে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়েছে। কারণ ঘটনার পর আমরা তাকে বিয়ানীবাজার হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালের ডাক্তাররা জানান যে তাকে সাপে কাটেনি, হত্যা করা হয়েছে। পরে আমরা তাকে নিয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানকার চিকিৎসকরাও বলেছেন যে তাকে সাপে কাটেনি, হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের কয়েক জায়গায় তারা আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন। তখন থেকে আমরা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হই যে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার কয়েকদিন পর আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। পুলিশ মায়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় ছিল। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তারা গতকাল (সোমবার) হাতে পেয়েছে। এরপর মামলা রেকর্ড হয়েছে। মামলার পর পুলিশ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যে বা যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।'

 

এজে/বিএন/আরআর-০২