বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী আজ

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


অক্টোবর ২৮, ২০২০
০৭:২৩ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২৮, ২০২০
০৭:২৫ অপরাহ্ন



বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী আজ
বীরত্বগাথা জানাচ্ছে কমলগঞ্জের স্মৃতিসৌধ

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের সকল স্থানের মতো মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায়ও গর্জে উঠেছিল পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার স্বপ্নে বিভোর মুক্তিকামী মানুষের হাতিয়ার। এ উপজেলায় ছোট-বড় বিভিন্ন যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। তাতে শহীদ হয়েছেন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মুক্তিকামী মানুষ। এখানকার নারীদের উপর রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের অমানবিক অত্যাচারের ঘটনা শুনলে এখনও লোমকূপে শিহরণ জাগে।

কমলগঞ্জে রয়েছে ৬টি বদ্ধভূমি ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ১টি স্মৃতিস্তম্ভ। কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণে ধলই সীমান্ত অবস্থিত। সেখানে রয়েছে একজন বীরের স্মৃতিসৌধ। সেখানেই ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর পাকিস্তানি সেনা ব্যারাক তছনছ করে বীরের হাসি হেসে শহীদ হয়েছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। ধলই এলাকাটির নাম হয়েছে সীমান্তবর্তী ধলই চা-বাগানের নামে। পাকিস্তানি সেনাদের ব্যবহৃত সেই ব্যারাকের জায়গায় বর্তমানে বাংলাদেশ রাইফেলস (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান সীমান্ত ফাঁড়ি অবস্থিত।

১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলার (বর্তমান ঝিনাইদহ জেলা) মহেশপুর উপজেলার খর্দ্দা খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হামিদুর রহমান। হামিদুর রহমানের পিতার নাম আক্কাস আলী মন্ডল ও মাতার নাম মুসাম্মাৎ কায়সুন্নেসা। পরিবারে ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। শিক্ষাজীবনে তিনি প্রথমে খালিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীকালে স্থানীয় নাইট স্কুলে সামান্য লেখাপড়া করেন। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করার পর প্রশিক্ষণের জন্য তাকে পাঠানো হয়েছিল চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে। তিনি ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেখানকার আরও কয়েকটি ইউনিটের সমন্বয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। হামিদুর রহমান ৪ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর ধলই বিওপি যুদ্ধে শত্রুর গুলিতে তিনি শহীদ হন এবং পরে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত হন।

প্রাথমিকভাবে ধলই বিওপি থেকে ভারতের ৩০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ত্রিপুরায় আমবাসা নামক স্থানে সহযোদ্ধারা তাঁকে সমাহিত করেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর বর্তমান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করে এবং ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের অসামান্য অবদান ভোলেনি বাংলার মানুষ, ভোলেনি কমলগঞ্জ ও মৌলভীবাজার তথা সিলেটের মানুষ। তাঁর স্মৃতিকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে তিনি যেখানে শাহাদাত বরণ করেছিলেন, সেখানে ২০০৬ সালে নতুনভাবে তৈরি করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, যার উদ্বোধন করেন তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও হামিদুর রহমানের জীবনী আগত পর্যটকদের অবগতির জন্য ৪৬ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ শ্রীমঙ্গল সেক্টরের উদ্যোগে ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতি আর্কাইভ। প্রাথমিকভাবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের তথ্যচিত্র নিয়ে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয় এই আর্কাইভে। এখানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কিছু ইতিহাস, তাঁর পরিবারের সচিত্র ইতিহাস ও সাত বীরশ্রেষ্ঠ'র ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে। অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত চা-বাগান ঘেরা বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ দেখতে ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকরা পাড়ি জমান ধলই সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধে।

 

এসডি/আরআর-০৫