কুলাউড়ায় বাঁশমহাল নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কুলাউড়া প্রতিনিধি


নভেম্বর ১১, ২০২০
০৬:১৮ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০২০
০৮:০৩ অপরাহ্ন



কুলাউড়ায় বাঁশমহাল নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বেগুনছড়া ও লবনছড়া নামক দু’টি বাঁশমহালের ১৬২ একর জায়গা জবরদখলে নিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়- এমন অভিযোগ বন বিভাগের। এই বাঁশমহালের অস্তিত্ব রক্ষায় জায়গা ধরে রাখতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বন বিভাগ। দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বন বিভাগ বলছে, খাসিয়াদের বেপরোয়া জবরদখলের কারণে ও বন বিভাগের লোকবলের অভাবে বনভূমি রক্ষা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বন ধ্বংস করে নয়, বন রক্ষা করে তাদের জীবন-জীবিকা রক্ষা হচ্ছে বলে জানিয়েছে খাসিয়ারা।

তবে বন বিভাগের দাবি, ধীরে ধীরে গোটা বনভূমিকে গ্রাস করছে খাসিয়ারা। যে সামান্য ১৬২ একর বাঁশমহাল রয়েছে, সেটাই তাদের মূল লক্ষ্য। 

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১৭-১৮ সালে মুরইছড়ায় ২০ হেক্টর জমিতে সামাজিক বনায়ন করা হয়। পরের বছর ২০১৮-১৯ সালে বেগুনছড়ায় ২০ হেক্টর জমিতে আরেকটি সামাজিক বনায়ন করা হয়। দুই সামাজিক বনায়ন সফলতার মুখ দেখে। ফলে আরেকটি সামাজিক বনায়নের নার্সারি করার জন্য বেগুনছড়ায় গত ১২ সেপ্টেম্বর পরিদর্শনে গেলে বন বিভাগকে বাধা দেন ববরিন খাসিয়া ও সিলভেস্টার তাল খাসিয়ার নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক খাসিয়া। তাদের বাধার মুখে বন বিভাগের লোকজন ফিরে আসেন।

এরপর গত ১৭ অক্টোবর খাসিয়ারা ওই স্থানের আশেপাশের বাঁশ কাটা শুরু করে। খবর পেয়ে ২০ অক্টোবর নলডরি বিট কর্মকর্তা অর্জুন কুমার দস্তিদারের নেতৃত্বে বন বিভাগের লোকজন সেখানে গিয়ে তাদের বাধা দেয়। খাসিয়ারা বন বিভাগের লোকজনের বাধা উপেক্ষা করে বাঁশ কাটা অব্যাহত রাখে এবং বিট কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বন বিভাগ বাঁশ কাটার অভিযোগে ২৮ অক্টোবর থানায় মামলা দায়ের করে এবং হুমকির ঘটনায় বিট কর্মকর্তা থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং-১১৯২) করেন।

কর্মধা ইউনিয়নের নলডরি গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন লিটন, রফিকুল ইসলাম রেনু ও জাবেদ হোসেন জানান, তারা বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী। পুরাতন বনায়ন রক্ষায় এবং বন বিভাগ নতুন সামাজিক বনায়নের নার্সারি করার সহায়তার জন্য তারা সেদিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কিন্তু খাসিয়াদের বাধার মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। বন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে পাহাড়ে গেলেই খাসিয়ারা তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে।

তারা আরও জানান, এক ইউপি মেম্বার যিনি এখনও লবনছড়া পানপুঞ্জির চৌকিদার হিসেবে বেতন নেন, সেই মেম্বারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মূলত খাসিয়ারা বাঁশমহালের বাঁশ কাটার দুঃসাহস করে। ১৬২ একর বাঁশমহাল জবরদখল করলে বন বিভাগের আর পাহাড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। 

নলডরি বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার জানান, সামাজিক বনায়নের চারা বাগান করতে বেগুনছড়া এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছেন তিনি। খাসিয়ারা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় আছেন ও যেকোনো মুহূর্তে খাসিয়াদের হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কিত। জনবল কম থাকায় ও অস্ত্র না থাকায় তিনি বাঁশ কাটার খবর পেলেও তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যাওয়া সম্ভবপর হয় না।

বিট কর্মকর্তা আরও জানান, তিনি নলডরি বিটে করোনাকালীন সময়ে যোগদান করেছেন। 

জানা গেছে, জবরদখলকারী ববরিন খাসিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে ২৫টি ও কুলাউড়া থানায় ৬টি এবং সিলভেস্টার তাল খাসিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে ২০টি ও কুলাউড়া থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবে বাঁশমহাল রক্ষা করা দুষ্কর হবে। 

অভিযুক্ত ববরিন খাসিয়া ও সিলভেস্টার তাল খাসিয়া জানান, তাদের বিরুদ্ধে বন বিভাগের অভিযোগ সত্য নয়। অযথা মামলা দায়ের করে তাদের হয়রানি করে বন বিভাগ। বিট অফিসে কিংবা রেঞ্জ অফিসে বন বিভাগের লোকজন শুধু খাসিয়াদের বিরুদ্ধে মামলা করে।

এ ব্যাপারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংগঠন কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জির খাসিয়া সম্প্রদায়ের নেত্রী ফ্লোরা বাবলী তালাং জানান, খাসিয়ারা বাঁশ কাটার সঙ্গে জড়িত নয়। তারা পাহাড়ে বসবাস করে। পাহাড় বাঁচলে খাসিয়ারা বাঁচবে। মূলত বন বিভাগ স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে এসব বাঁশমহাল উজাড় করছে। তাদের এসব অপকর্ম আড়াল করতে খাসিয়াদের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রেজাউল হক জানান, বনাঞ্চলসহ মহালের বাঁশ রক্ষায় তাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। যেসব জায়গায় বাঁশ কাটা হয়, সেসব এলাকা খুবই দুর্গম। বিট অফিস থেকে যেতে হয় হেঁটে। ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগে। খাসিয়ারা ওসব এলাকায় থেকে অভ্যস্ত। ফলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তারা চলে যায়। আর বিকেলবেলা বাঁশ কাটলে আর ঘটনাস্থলে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। ফলে বাঁশমহাল রক্ষা করা কঠিন। লোকবলের স্বল্পতা ও অস্ত্র না থাকায় পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। আর দু’টি বিভাগের সমন্বয় করে পাহাড়ে গিয়ে গাছ বা বাঁশ কাটা প্রতিরোধ করা কঠিন।

 

জেএইচ/বিএন-০৭/আরআর-০৫